রেলের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাক্কলন ও বাস্তবায়নে সময় এবং ব্যয়ের হিসাবের তারতম্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। গতকাল বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়।
কমিটি সভাপতি আবদুস শহীদের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, এ বি তাজুল ইসলাম, ফজলে হোসেন বাদশা, আহসান আদেলুর রহমান, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এবং খাদিজাতুল আনোয়ার বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের চলমান প্রকল্পের ওপর আলোচনা এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়কে অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির আগের বৈঠকের সুপারিশের বাস্তবায়ন ও অগ্রগতির ওপর আলোচনা করা হয়। বৈঠকে চলতি ও গত অর্থবছরের রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্রাক নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদিত হয় ২০১০ সালের জুলাই মাসে। ২০১৬ সালের জুন মাসে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময় বাড়িয়ে তা ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ধরা হয়েছে। প্রথমে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৮৫২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। পরে এটি সংশোধন করে বাড়ানো হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ টাকায়। কার্যপত্রে আরও বলা হয়, খুলনা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এ প্রকল্প অনুমোদন হয় ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর, যা শেষ হওয়ার কথা ২০১৮ সালের ৩০ জুন। পরে এ প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ধরা হয়, সময় বাড়িয়ে করা হয় ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এ রকম আরও বেশ কিছু প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করে সংসদীয় কমিটি।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আবদুস শহীদ বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রকল্পের প্রাক্কলন বাস্তবায়নের সময় ঠিক থাকে না। প্রাক্কলনে ব্যয়ের তুলনায় দরপত্রে কম বা বেশি দেখা যায়। এটা হওয়া উচিত নয়। তা ছাড়া প্রকল্প শুরু হয় মেয়াদ শুরুর অনেক পরে। ফলে প্রকল্পের খরচ অনেক বেড়ে যায়। জনস্বার্থ বিঘ্নিত হয়। এ জন্য প্রাক্কলনের চেয়ে বেশি খরচ করা যাবে না। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো যাবে না।

এদিকে, বৈঠকে ঢাকা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেললাইন তৈরির পরিকল্পনায় আন্ডারপাসগুলোতে ‘হাই-কিউব কনটেইনার’ পরিবহনের সুবিধা কেন রাখা হয়নি, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে কমিটিতে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির সভাপতি এ বিষয়ে বলেন, জুরাইন রেলওয়ে ওভারপাসের উচ্চতা কম হয়েছে। ওই ওভারপাসের যে উচ্চতা, তাতে হাই-কিউব কনটেইনারগুলো পরিবহন করা যাবে না। এতে পরিবহন ব্যয় বাড়বে। সমন্বয়হীনতার কারণে এ রকম হয়েছে বলে কমিটি মনে করে। ভবিষ্যতে যেসব ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ হবে, তার উচ্চতা বা গভীরতা ঠিক রাখতে বলা হয়েছে।
বৈঠকে মন্ত্রণালয়কে ২০০৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত রেললাইন, সিট, সিগন্যাল ব্যবস্থা এবং প্ল্যাটফর্মসহ রেলওয়েতে যাত্রীসেবার উন্নয়নের একটি সার্বিক প্রতিবেদন কমিটিতে জমা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
Leave a Reply