দেশের অর্থনীতি, ক্রেতার পছন্দ, সম্ভাবনা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির বিবর্তন পর্যালোচনা করে অটোমোবাইল খাতের নীতিমালা করতে হবে। বাজার অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ রাখতে হবে। নীতিমালায় এ খাতের উন্নয়নে দেশে গাড়ির কারখানা স্থাপনের সুযোগ যেমন থাকবে, তেমনি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি নিরুৎসাহিত করাও যাবে না।
‘বাংলাদেশের গাড়ির বাজার : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এমন মতামত দেন। গতকাল বুধবার গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সরকার প্রথমবারের মতো অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে নীতিমালার খসড়া তৈরি করে মতামত চেয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
সালমান এফ রহমান বলেন, রিকন্ডিশন্ড ও নতুন গাড়ি আমদানি বা করহার নীতিমালার একটি অংশ হতে পারে। তবে উন্নত দেশের অটোমোবাইল খাতের আঙ্গিকে এটি প্রণয়ন করতে হবে। বাংলাদেশে যেসব কোম্পানি ইলেকট্রিক গাড়িসহ আধুনিক প্রযুক্তির গাড়ির কারখানা করবে সেগুলোকে সরকার জমিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুবিধা দেবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, দেশে গাড়ির ব্যবহার খুব কম। এটা বাড়াতে হবে। তাহলে রাজস্বও বাড়বে। দেশের সড়ক অবকাঠামো ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নত হচ্ছে। অটোমোবাইল নীতিমালার সঙ্গে এসব বিষয় যুক্ত করতে হবে। ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন। তিনি শুরুতে বলেন, অটোমোবাইলের সঙ্গে আরও কয়েকটি শিল্প ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বলা হয়, এ খাতে একজনের কর্মসংস্থান হলে আরও পাঁচজনের কাজের সুযোগ হয়। এ খাত জিডিপিতে এক ডলার অবদান রাখলে তা অর্থনীতিতে তিন ডলারের প্রভাব ফেলে। তাই নীতিমালাটি হতে হবে বাস্তবসম্মত ও বাজারভিত্তিক।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধে পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রগতিসহ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গাড়ি তৈরি করলেও বিশেষ অগ্রগতি নেই। বলা যায় দেশের গাড়ির বাজার পুরোটাই আমদানিনির্ভর। সাম্প্রতিক সময়ে গাড়ির প্রযুক্তিতে পরিবর্তন এসেছে। এরকম সময়ে অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা করা হচ্ছে। এতে শিল্পায়নে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার বজায় রাখার ব্যবস্থাও রাখতে হবে। কারণ, অনেক দেশ গাড়িশিল্পে চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি। তিনি বলেন, এ খাতে বাংলাদেশে ‘স্টূ্ক্র ডাইভার ইন্ডাস্ট্রি’ গড়ে উঠুক তা চাই না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, জাপানের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। ঠিকমতো নীতিমালা করে আমদানি করা গেলে এসব গাড়ি ক্রেতা ও পরিবেশের জন্য ভালো। দেশে কারখানা স্থাপনে প্রথম দিকে যন্ত্রাংশসহ অন্যান্য খাতে কাজ করে ধাপে ধাপে এগোনোর পরামর্শ দেন তিনি। বারভিডার সভাপতি আব্দুল হক বলেন, নতুন প্রযুক্তির দিকে যেতে হবে। হাইব্রিড ও ইলেকট্রিক গাড়িতে যাচ্ছে উন্নত দেশ। ফলে দেশে এখন ডিজেল বা পেট্রোল ইঞ্জিনের গাড়ির শিল্প করে লাভ নেই। এসব বিবেচনা করে নীতিমালা করা উচিত। বাজার অর্থনীতির নিরিখে পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।এনবিআরের সদস্য (কাস্টমস নীতি ও আইসিটি) সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া বলেন, বৃহত্তর স্বার্থে করহার পরিবর্তন করা যেতে পারে, তবে মোট রাজস্ব আহরণের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। তিনি বলেন- চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও ভারত থেকে আসা গাড়ির সঠিক মূল্য নির্ধারণ হচ্ছে না। রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বাদ দিয়ে শুধু নতুন গাড়ির বাজার তৈরি করার বিষয়ে আরও পর্যালোচনা করা দরকার। পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, নিজেরা গাড়ি তৈরি করতে পারলে সেটা অবশ্যই ভালো, তবে তা রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি নিরুৎসাহিত করে নয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আনোয়ারুল আলম জানান, নীতিমালায় স্থানীয় বাজার, উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানিসহ সব বিষয় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। যদি কোনো ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকে সেগুলো ঠিক করা হবে। কোনো পক্ষকে সুবিধা দেওয়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য নয়।
Leave a Reply