সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ইবনে হাসান আলম বলেছেন, ‘সড়কে পলিমার মডিফায়েড বিটুমিন (পিএমবি) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দেরি করলে নানা সমস্যা হবে। এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এখন আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। তাই এই বিটুমিন ব্যবহারে দেরি করা উচিত হবে না।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সড়ক ভবনে সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতির উদ্যোগে ‘অ্যাপ্লিকেশন অব পলিমার মডিফায়েড বিটুমিন ইন পেভমেন্ট কনস্ট্রাকশন; এক্সপেরিয়েন্সেস, প্রসপেক্টস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইবনে হাসান আলম এসব কথা বলেন। এ অনুষ্ঠানের স্পন্সর ছিল বসুন্ধরা বিটুমিন।
ইবনে হাসান আলম বলেন, ‘আমাদের সক্ষম টেকনিক্যাল সার্ভিসেস উইং আছে। টেকনিক্যাল সার্ভিসেস উইং ল্যাবরেটরি এখন যন্ত্রপাতিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। পিএমবি ব্যবহার করার জন্য যত ধরনের যন্ত্রপাতি প্রয়োজন তার সব আমাদের রয়েছে। আমাদের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। আর যেসব ঘাটতি রয়েছে, আশা করি অল্পদিনের মধ্যে সেগুলোও পূরণ করে ফেলতে পারব।’
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে নিজের চাকরির ৩৬ বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আগে মানুষের টেকনোলজি সম্পর্কে এত জানা ছিল না। তখন সড়কের মানও সেই পর্যায়ে ছিল না, যে প্রত্যাশা আজ আমরা ২০২০ সালে মুখোমুখি হচ্ছি। এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্র কিভাবে সড়ক তৈরি করছে। শুধু রাস্তা তৈরি করলেই হবে না। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ৩০ মিনিটে যাচ্ছি না ২ ঘণ্টায় যাচ্ছি, এর উত্তরও আমাদের দিতে হবে। অন্য রাষ্ট্রগুলো যদি উন্নতমানের রাস্তা তৈরি করতে পারে, আমরা পারব না কেন?’
সাবেক এই প্রধান প্রকৌশলী আরো বলেন, ‘যতই কারিগরি ব্যাখ্যা দিন না কেন, একটা সড়কের জীবন যদি ১০ বছর হয়, যেমন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, উদ্বোধন করতে করতেই লাইফটাইম শেষ। এর সমাধান প্রকৌশলীদের বের করতে হবে। জনগণকে সেই জবাব দিতে হবে প্রকৌশলীদের, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকে।’ তিনি বলেন, ‘সমাধান তাদের দিতে হবে, না হয় আমাদের কথা শুনতে হবে। সক্ষমতা যতটুকু আছে, আন্তরিকতার সর্বোচ্চ দিতে হবে। তা না হলে মানসম্মত সড়ক তৈরি সম্ভব নয়।’ আন্তরিকতা থাকলে অনেক সেবা দেওয়া যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী কাজী শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করছি। আগে আমরা ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করতাম। বর্তমানে বিশ্বে পিএমবি ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে, তাই আমরাও এতে লেগে যাচ্ছি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সড়ক নির্মাণে টেকসই বিটুমিন প্রয়োজন। প্যারামিটার বিবেচনায় সড়ক নির্মাণে পিএমবিই যুগোপযোগী।’ ঢাকা-সিলেট চার লেন মহাসড়কে পিএমবি ব্যবহার করা হবে বলে জানান তিনি।
কাজী শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘এই সেমিনার থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান টেকসই সড়ক নির্মাণে কাজে লাগবে। সড়কে পিএমবি ব্যবহারের সময় এসেছে। আজকের আলোচনা থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে পিএমবি ব্যবহার করব।’
ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক এবং সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতির প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুস ছবুরের সভাপতিত্বে এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নিশাত নোমান ও নাজমুল হকের যৌথ সঞ্চালনায় কি-নোট স্পিকার হিসেবে আলোচনা করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাকারিয়া, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. নাজমুস সাকিব, অস্ট্রেলিয়ার এসএমইসি ইন্টারন্যাশনালের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী জাফর সাদেক চৌধুরী এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম ইলিয়াস শাহ। স্বাগত বক্তব্য দেন সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তাঁরা বলেন, পিএমবির যে চাহিদা রয়েছে তা উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্ট। দেশে যে বিটুমিন ব্যবহার করা হয়, তা সড়কের জন্য টেকসই না। যুগোপযোগী বিটুমিনের অভাবে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পিএমবি ব্যবহার করলে সড়ক টেকসই হয়, মত দেন বক্তারা।
Leave a Reply