বাংলাদেশ রেলওয়ের মধ্যে ঢাকা-সিলেট রেলওয়ে লাইন অনেক পুরনো এবং যাতায়াতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রেলওয়ের অনেক নতুন নতুন প্রকল্প অনুমোদন হচ্ছে কিন্তু বাস্তবে এর কোন প্রতিফলন দেশবাসী দেখতে পারছে না। এই লাইনে জয়ন্তিকা, উপবন, কালনি, পারাবত, পাহারিকা, উদয়ন নামক ট্রেনগুলো প্রতিদিন ২০ হাজারেরও বেশি যাত্রী বহন করে। দীর্ঘদিন যাবত রেল লাইনের কোন উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। যেখানে সরকার, মেট্রোরেল চালু করতে যাচ্ছে, মাটির নিচে সাবওয়ে ট্রেন চালু করার সম্ভাব্যতা যাচাই করছে তাতে বোঝা যায় সরকারের আন্তরিকতার কোন অভাব নেই। সরকারের দায়িত্বে থাকা রেলওয়ের নেতৃবৃন্দের সময়মতো উদ্যোগ নেয়ার অভাবে রেলওয়ের এই পুরনো ক্ষত সরানো যাচ্ছে না। সিলেট আখাউড়া লাইনে পূর্বে ট্রেনের গতি ছিল ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। কিন্তু বর্তমানে রেলওয়ের সিলেট কর্তৃপক্ষ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। সিলেট থেকে আখাউড়া রেললাইনের মধ্যে ১৩টি ব্রিজকে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘ডেড স্পট’ হিসেবে। নির্দেশনা দেয়া আছে এই ব্রিজগুলোর কাছে আসলে ট্রেন প্রথমে সম্পূর্ণ থামাতে হবে এবং পরবর্তীতে ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার গতিতে ব্রিজ পার হবে। অনেক চালক এই নির্দেশনা না মেনে বেপরোয়াভাবে ট্রেন চালিয়ে যান, যেখানে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। আপনারা শুনলে অভাক হওয়ার কথা সিলেট রেল স্টেশন থেকে পরবর্তী রেল স্টেশন হচ্ছে মগলাবাজার যার দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। এই দুই স্টেশনের মধ্যে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ৮টি ব্রিজই মহা ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঝুঁকি নিয়েই প্রায় ১০০ বছর যাবত ট্রেন চলছে।

এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলো পুনর্নির্মাণ করার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ৫৫ বছর পর যে কোন রেলওয়ের ব্রিজের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু সিলেট লাইনে এগুলোর মেয়াদ শেষ হয়নি। মগলাবাজার থেকে আখাউড়ার দূরত্ব ১৬৪ কিলোমিটার। তার মধ্যে ৬টি ব্রিজ রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। কিছুদিন পূর্বে আখাউড়া সিলেট লাইনে ফেঞ্চুগঞ্জ, কুলাউড়া ও শ্রীমঙ্গল স্টেশনে ৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সে দিন প্রায় ২৫ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। ১১ নবেম্বর মাইজগাঁও স্টেশনের কাছে মোমিনছড়ায় মালবাহী ট্রেনের চাকা লাইনচ্যুত হয়। ৭ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় শ্রীমঙ্গল স্টেশনের পরবর্তী সাতগাঁও রেলস্টেশনের কাছে পাহাড়তলী স্টেশন থেকে আসা তেলবাহী ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এই সময় উভয় দিকের ৫টি ট্রেন বন্ধ করা হয়। ২২ ঘণ্টা পর সিলেটের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ পুনস্থাপিত হয়। প্রায় ১১টি দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ৫ জন যাত্রীর প্রাণহানি হয়েছে। আখাউড়া-সিলেট রেল লাইনের রশিদপুর স্টেশন থেকে মাইজগাঁও পর্যন্ত এবং মগলাবাজার থেকে সিলেট রেল স্টেশন পর্যন্ত রেললাইন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। গত ২৩ জুন কুলাউড়ার বরমচাল স্টেশনের কাছে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ৪ জন নিহত ও ২০০ যাত্রী আহত হয়। রেলের ২৮ কোটি টাকা ক্ষতি হয়। তার ১৫ দিনের পর একই এলাকায় ৭ জুলাই ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন জয়ন্তিকার ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এর ৯ দিন পর ১৭ জুলাই ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর ট্রেন কালনি এক্সপ্রেস ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসার পর ব্রেকের তার ছিঁড়ে যায়। পরে মেরামত করে কোনমতে ট্রেনটি সিলেটে এসে পৌঁছে। ১৯ জুলাই কুলাউড়া স্টেশনে প্রবেশ করার মুহূর্তে স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয় জয়ন্তিকা ট্রেন। পরদিন ২০ জুলাই শনিবার একই জায়গায় সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী আন্তঃনগর কালনি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে সিলেট আখাউড়া রেলযাত্রা মোটেই নিরাপদ নয়। যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই রেললাইনগুলো মেরামত করা জরুরী। অনেক জায়গায় পাথর নেই, নাট বল্টু খুলে নেয়া হয়েছে। অনেক জায়গায় গেট ছাড়া রেলওয়ের বিপজ্জনক রেল ক্রসিং, ট্রেনের ইঞ্জিন মেয়াদ উত্তীর্ণ, ১৩টি ব্রিজ মহাঝুঁকিপূর্ণ।

তাই কালবিলম্ব না করে আখাউড়া সিলেট রেললাইনকে সম্পূর্ণ নতুন করে বসাতে হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণ ১৩টি ব্রিজকে নতুন তৈরি করে দিতে হবে, সকল রেলওয়ে ক্রসিং এ একটি গেট স্থাপন করে একজন স্থায়ী পাহারাদার নিয়োগ দিতে হবে। না হলে যে কোন সময় আখাউড়া- সিলেট রেললাইনে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে এবং অনেক প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে। উপরোক্ত বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে অনতিবিলম্বে এই রেল সমস্যার সমাধান করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক : নিউইয়র্ক প্রবাসী
Leave a Reply