প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে অভ্যন্তরীণ ৬ বিমানবন্দরে
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ৬-৭ মাস উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরেছে। আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট চলাচল পুরোপুরি চালু না হলেও দেশের ৬ অভ্যন্তরীণ রুটে বেসরকারি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পুরোদমে শুরু হওয়ায় বিমানবন্দরগুলোতে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। আর যাত্রীর চাপ প্রতিদিন বাড়তে থাকায় কোনো কোনো বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে যাত্রীদের বসার জায়গাও মিলছে না।
এ দিকে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত অ্যাভিয়েশন খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো। বিশেষ করে অ্যারোনটিক্যাল ও নন অ্যারোনটিক্যাল চার্জকে সহনীয় পর্যায়ে রাখা এবং জেট ফুয়েলের দাম আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নিরূপণের জন্য তারা সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
বেসরকারি সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন শিকদার মেজবাহ উদ্দিন সম্প্রতি ঢাকা থেকে কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন সফরে যাওয়া একদল সাংবাদিকদের সাথে কক্সবাজার হোটেল ওশান প্যারাডাইজে মতবিনিময়ের সময় বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিজ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তারপরও ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স চেন্নাই ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে আটকেপড়া বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনতে সিভিল অ্যাভিয়েশনের দেয়া শর্ত ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়। প্রতিযোগিতার স্বার্থে জাতীয় বিমান সংস্থার সাথে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য একটি ‘লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করা দরকার বলেও মনে করেন তিনি। এর আগে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে সাংবাদিকরা কক্সাবাজারের উদ্দেশে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যান।
ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে দেখা গেছে, যাত্রীরা টার্মিনালে প্রবেশ করার সময় ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে তাপমাত্রা পরিমাপ করার পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ও টিস্যু দেয়া হয়। এরপর আনুষ্ঠানিকতা শেষে যাত্রীদের ফ্লাইটে উঠানো হয়। শুধু ইউএস বাংলা নয়, বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ার ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাউন্টারগুলোতে এ দিন যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়।
বিমানবন্দরের পরিস্থিতি জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাউন্টারের দায়িত্বশীল কর্মচারী সাঈদ বলেন, আমাদের এই অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল এখন প্রতিদিন যাত্রীতে ভরপুর থাকে। একের পর এক ফ্লাইট ঢাকা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। তাও শিডিউল মেনে। এরমধ্যে বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস বাংলা। এরপর নভোএয়ার। তবে আরেক বেসরকারি এয়ারলাইন্স রিজেন্ট এয়ারওয়েজ-এর কাউন্টার দেখিয়ে তিনি বলেন, ওদের ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। তাই টিকিট কাউন্টারও বন্ধ।
এর আগে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, সারাবিশ্বের মতো পেনডেমিকের ক্রাইসিস আমাদের দেশেও চলমান। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম সেক্টর। তারপরও আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদেশে আটকেপড়া যাত্রীদের ফিরিয়ে আনতে শতশত ফ্লাইট পরিচালনা করেছি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলো যাত্রী না থাকায় খা খা করত। এখন দেশীয় ট্রাভেলারে ভরপুর। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মতো যদি বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো হ্যাঙ্গারসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেতো, তাহলে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো আরো এগিয়ে যেতো। তিনি বলেন, প্রতিদিন ৬টি রুটে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ৫০টি ফ্লাইট আসা-যাওয়া করছে।
শুধু ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নয়; চট্টগ্রামের শাহ আমানত, সিলেটের এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বরিশাল, সৈয়দপুর ও যশোর বিমানবন্দরের কাউন্টারগুলো প্রতিদিন যাত্রীদের পদচারণায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। তবে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের ভেতরে ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে খাবারের দাম এখনো গলাকাটা নেয়ায় অনেক যাত্রীর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও খাবার না কিনে গন্তব্যে রওয়ানা হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার দেশের ৬ রুটে ফ্লাইট চালালেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বরিশাল ও যশোর রুটে ফ্লাইট চালাচ্ছে না।
এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার কারণে ঘরবন্দী মানুষরা একটু বিনোদনের আশায় ঘুরতে বের হচ্ছেন এখন। স্বাস্থ্যবিধি মানার কারণে অনেকেই বাসের লম্বা জার্নি এড়িয়ে পরিবার নিয়ে এখন তারা কক্সবাজার, সিলেটসহ আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে যেতে উড়োজাহাজকে বেছে নিচ্ছেন। এ কারণে মনে হয় অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী বাড়ছে। তারা জানিয়েছেন, যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে কোনো কোনো রুটে প্রতিদিন তাদের ৫-৬টি করে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হচ্ছে।
Leave a Reply