প্রায় এক দশক পর বাংলাদেশ রেলওয়েতে প্রথমবারের মতো যুক্ত হচ্ছে ১০টি লোকোমোটিভ বা মিটারগেজ ইঞ্জিন। কোরিয়ান ইঞ্জিনগুলো দেশে আসার পর পরীক্ষামূলক মালবাহী কোচে সফলতা এসেছে। চলতি মাসের মধ্যেই এগুলো রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বহরে যুক্ত হবে। তবে নতুন ইঞ্জিনগুলোর স্বাভাবিক গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ সারা দেশে দীর্ঘদিনের পুরনো ও জীর্ণ রেলপথ এবং অবকাঠামোগত ত্রুটির কারণে ইঞ্জিনগুলো কাক্সিক্ষত গতি পাবে না।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী এফএম মহিউদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কোরিয়া থেকে আনা উচ্চ গতিবেগের সর্বাধুনিক ১০টি লোকোমোটিভের পরীক্ষায় সফলতা এসেছে। চলতি মাসেই এগুলো বিভিন্ন ট্রেনে যুক্ত করা হবে। শুরুতে ঘণ্টায় ৭৫ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে চলাচল করবে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন সেকশনে রেলপথ উন্নয়নের কাজ চলছে। পরবর্তী সময়ে এসব ইঞ্জিন সর্বোচ্চ গতিবেগে চলাচল করবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে ভালো ট্র্যাকের মিটারগেজ রেলপথে ট্রেনগুলো সর্বোচ্চ ৭৫ কিলোমিটার গতিবেগে চলাচল করে। ব্রডগেজে এসব ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ৮৫ কিলোমিটার। এর বাইরে সারা দেশের অধিকাংশ সেকশনে গড়ে ৫৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে।
যাত্রীসেবার মান উন্নয়নে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কোরিয়া থেকে ২২০০ হর্স পাওয়ারের হুন্দাই কোম্পানির ১০টি অত্যাধুনিক মিটারগেজ লোকোমোটিভ আনা হয়। এরপর গত সেপ্টেম্বরে রূপান্তরের পর ব্রডগেজে চলতে সক্ষম ইঞ্জিনগুলো পূর্বাঞ্চলের বহরে সংযোজন করা হয়। এগুলো এখন যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেনে সংযুক্তের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে গতিবেগের সক্ষমতা যাচাইয়ে লোড অবস্থায় ইঞ্জিনগুলো ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার বেগে চলেছে। পণ্যবাহী বগি নিয়েও গতি এসেছে ৫০ কিলোমিটার, যা আগের ইঞ্জিনের দ্বিগুণ। নতুন ইঞ্জিনের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম এবং গতি বেশি হওয়ায় সময় সাশ্রয় হবে। ট্রিপের সংখ্যা বাড়লে রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে। এরই ধারাবাহিকতায় রেল পরিষেবা উন্নয়নে আগামী বছর আরও ২০টি লোকোমোটিভ সংযোজনের আশা করছে কর্র্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক তারেক মোহাম্মদ সামছ তুষার বলেন, ‘ট্রেনের গতি বাড়াতে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে গতিই সমাধান নয়, নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণই আমাদের লক্ষ্য। এজন্য বিদ্যমান রেলপথেও যাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির লোকোমোটিভ চালানো যায়, সেজন্য কিছু টেকনিক্যাল কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি, পর্যায়ক্রমে রেলের গতি বাড়বে।’
Leave a Reply