কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় হুমায়ুন আহমেদের অসংখ্য গল্প উপন্যাস পড়েছি। পছন্দের তালিকায় তার নাম আগের দিকেই ছিল। বিশেষ করে মিশির আলী ও হিমুর চরিএ আমার খুব পছন্দের ছিল। তখন হিমুকে নিজের সাথে মিলিয়ে দেখতাম। মাঝে মাঝে নিজেকে হিমু মনে করতাম। কখনো হলুদ পাঞ্জাবি পড়িনি। রুপাকেও কখনো খুজিনি। তবে জোছনা রাতে একা হেঁটে বেড়িয়েছি। আর হিমুর মতো ভবঘুরে স্বভাব তো আছেই। এখনো যখন তখন এখানে ওখানে অনেক দুরে ও চলে যাই।
একা। অচেনা সব জায়গায় । আমিও এক সময় হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টি করা চরিএ হিমুর মতো হতে চেয়েছিলাম।
হতে পারিনি।
এই সংসার, এই সমাজ, এইসব হিমুদের পছন্দ করে না। হিমুদের এই সমাজে কোন স্হান নেই।
সেই হিমু চরিত্র সৃষ্টিকারী অমর লেখক হুমায়ুন আহমেদের সমাধি দেখতে গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে গিয়েছিলাম আজ। বিভিন্ন রকম ব্যস্ততায়, অলসতায় এমনিতে কোথাও যেতে মন চায় না। বাসায়ই বেশীর ভাগ সময় কাটে।
গান শুনি, বই পড়ি, মুভি দেখি। কখনো নেটে বিভিন্ন দেশ, শহর, জনপদ ঘুরে বেড়াই। করোনাকালে এইভাবেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলাম। গতকাল এক বন্ধু বললো, চলে আয় আমার এখানে। ভালো সময় কাটবে।
সকালবেলা কি যে হয়। বের হয়ে পড়ি গাজীপুরের উদ্দেশ্যে। বন্ধুর প্রতিষ্ঠানটা পোড়াবাড়ি এলাকায়। পৌঁছাতে পৌছাতে বেলা বারোটা। গল্প আড্ডায় আরো সময় কাটে যায়।কতদিনের কত কথা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমরা একই হলে থাকতাম। সে এখন পুলিশের বড় কর্মকর্তা। সেই বন্ধু বললো, নুহাশপল্লী ঘুরে আয়। ভালো লাগবে।
সেও লেখালেখি করে। হুমায়ুন আহমেদের ভক্ত। গাড়ি দিল। চালককে সব বুঝিয়ে দিল। বন্ধু অন্য কাজে ঢাকার দিকে রওনা দিল।
আমি হোতাপাড়া টেংরা বাজার পেরিয়ে নুহাশপল্লীতে পৌঁছে যাই। গজারীবনের ভিতরে গাছ গাছালীর ছায়ায় নিভৃতে নির্জনে শুয়ে আছেন প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ। চারিদিকে সুনসান নির্জনতা। জায়গাটা আমার খুব ভালো লাগে।
ভেবে অবাক হই, এই ঢাকা শহরে আমরা দু’জন বহু বছর এক আকাশের নীচে, এতো কাছাকাছি থেকেও দেখা হয়নি। কোনদিন দেখতেও ইচ্ছে করেনি। কত বইমেলা গেছে। সেখানেও আমাদের একবারও দেখা হয়নি। তার কত ছবির প্রিমিয়াম শো হয়েছে। আমি সাংবাদিক হিসেবে দাওয়াতও পেয়েছি। তবু যাইনি। কিংবা আমার যাওয়া হয়ে উঠেনি। তবুও আমি তার জন্য একটা আলাদা মমত্ববোধ অনুভব করতাম সব সময়। আমাকে তার লেখা, তার সৃষ্টি করা চরিএ, তার তৈরি বাংলা ছবি গুলো, তার কিছু গান সব সময় মুগ্ধ করতো।
এখনও করে।
কোন কোন ছবি দেখে এখনো চোখে জল আসে। বিশেষ করে, “শঙ্খনীল কারাগার ” ছবির একটা দৃশ্য। ডলি জহুর যখন বাবার সাথে কদিন সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছে। তখন বাবা আবুল হায়াত বলেছিল, তুমি একবার আমাকে বাবা বলে ডাকো। তারপরের দৃশ্যটা।কেউ কি এই দৃশ্যটার কথা মনে করতে পারো?
এমন হাজারো কল্পকাহিনী আমাকে মুগ্ধ করেছে।
আজ এই বিকালে অমর লেখক হুমায়ুন আহমেদের সমাধির পাশে দাঁড়িয়ে আমার বুকের ভিতরটায় কেমন করে উঠে। মনে হতে থাকে এইসব লেখক কোনদিন মরে না।
কিংবা মরেও তারা তাদের ভক্তদের মনে অমর হয়ে থাকে। তারপর এই নশ্বর পৃথিবীতে ইতিহাস হয়ে থাকেন। হাজার বছর ধরে।
২৫/১২/২০২০, ঢাকা।
Leave a Reply