বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ নদীগুলোর প্রধান কাজ জমি তৈরি করা। অনেক সময় কয়েকটি নদী একসঙ্গে কাজ শুরু করে। বহতা নদী আনে বালি ও পলি। বালি দিয়ে চলে রমরমা ব্যবসা ও টাকার ছড়াছড়ি। আর পলি দিয়ে আস্তে আস্তে তৈরি হয় ভূমির পরিবর্তন। তারপর দেখা যায় নদীটি হয়ত মজে যাচ্ছে। তখন অন্যদিকে একইভাবে শুরু হয় কাজ। নদী যখন বহতা, তখন তার দুইকূলে লোক স্থাপন করে বসতি ও শুরু হয় দখল। আর নদীর পাড়ে বসতি স্থাপন ও দখল করতে হলে বলবান হতে হয়। বলবান না হলে, রাজনীতি করতে হয়। রাজনীতি যেন সব অনিয়ম সুরক্ষার অষ্টধাতুর মাদুনি। খাল, বিল, চরও এসব লোভী মানুষের থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

নদী যেমন পলি দিয়ে উর্বর করে, তেমনি নদীর খাত মরে গেলে, সেই খাতে পানি জমে হয় বিল। আবার অনেক সময় পলি ভরাট হয়ে তৈরি হয় চর। সুতরাং নদীর কথা বললে খাল, বিল, চরের কথা আসবেই। রাজনীতিবিদদের সহায়তায় কিংবা নিজ ক্ষমতায় তারা নদী, নালা, খাল, বিল এমনভাবে দখল করছে যেন এটা তাদের পৈত্রিক সম্পদ। আর অনেকে দখলকে স্থায়ীভাবে টিকিয়ে রাখার জন্য তাদের বসতিতে স্থাপন করছে মসজিদ, মাদ্রাসা। কারণ তাদের বিশ্বাস সরকার ধর্মীয় কোন কিছুতে আঘাত করবে না, মসজিদ-মাদ্রাসা উচ্ছেদ করবে না। এ জায়গায় ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। যার কারণে আমাদের দেশে আজ নদীর সংখ্যাও কমছে। স্বাধীনতার আগে দেশে নদী সংখ্যা ছিল ৭০০ এর বেশি। এখন এ সংখ্যা ৪০৫-এ নেমেছে। বেসরকারী হিসাবমতে নদীর সংখ্যা ২৩০। তাহলে আমরা বলতেই পারি আমাদের বেশিরভাগ নদীই আজ মৃতপ্রায়। অতএব সরকারের উচিত দ্রুত আইন প্রয়োগ ও এসব বসতি উচ্ছেদ করা। আর আমাদের দেশে এসব দখলকৃত উচ্ছেদের আইন আছে কিন্তু তার কোন প্রয়োগ নেই বললেই চলে। তবে যেভাবেই দলিল করা হোক না কেন, কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিলে নদী রক্ষা আইন অনুযায়ী তীরের দখলকৃত জায়গা যে কোন সময় উদ্ধার করা সম্ভব। দেশের সব নদীর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
নেত্রকোনা।
Leave a Reply