প্রতিদিন সংবাদপত্র কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় লাগাতার যে সংবাদটি আসে তা হলো সড়ক দুর্ঘটনা। জীবিকা নির্বাহ কিংবা আনন্দ ভ্রমণের তাগিদে ঘরের বাহিরে পা রাখতেই সম্ভাবনাময় ও স্বপ্নের অনেক জীবন বলি হচ্ছে সড়ক-মহাসড়কে বেপরোয়া যানবাহন চলাচলের কারণে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন সাধিত হলেও প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে নিরাপত্তার বিষয়টি।
নিরাপদ সড়ক চাই-এর তথ্যমতে, দেশে সড়কে প্রতিদিন গড়ে ১৮ জন মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ফলে মানবিক ও অর্থনৈতিক যে ক্ষয়ক্ষতি হয়, তা নির্ণয় করা দুরূহ। এক হিসাবে দেখা গেছে—সড়ক দুর্ঘটনায় যারা মৃত্যুবরণ করেন, তাদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এই সব পরিবার রীতিমতো পথে বসে যায়। আহতদেরও অনেকে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। ফলে তাদের পরিবারও বিপন্ন হয়ে পড়ে। অর্থনৈতিক হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতির পরিমাণ ধরা হলে তা মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ। সবচেয়ে বড় কথা, জীবনের চেয়ে দামি কিছু হতে পারে না। আর সেই জীবনই অকালে থেমে যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো কঠিন নয়, দরকার শুধু আমাদের প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের। ইতিমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসের লক্ষ্যে আদালত গাড়িচালকদের ডোপ টেস্টসহ বেশকিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। আশা করি, আদালতের নেওয়া উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। একই সঙ্গে সড়কপথ নিরাপদ করতে নিম্নোক্ত উদ্যোগ নেওয়া অতীব জরুরি।
প্রথমত—সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিআরটিএ থেকে দুর্নীতি সমূলে উত্পাটন করার বিকল্প নেই। দ্বিতীয়ত—চালকদের বেপরোয়া প্রতিযোগিতার মনোভাব ও গতি রুখতে সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে বলা হলেও কর্তৃপক্ষ বরাবরই ব্যর্থ হয়। সুতরাং এখানে যথাযথ উদ্যোগ নিতেই হবে। তৃতীয়ত—লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন যান চলাচল নিষিদ্ধসহ নতুন করে লাইসেন্স ব্যতীত ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল করতে যেন না পারে, সেদিকে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি দেওয়ার বিকল্প নেই। তথ্যমতে—দেশে নিবন্ধিত যানবাহন ৪৪ লাখ আর চালকের নিবন্ধন সংখ্যা ৩২ লাখ। ১২ লাখ চালক কম, যা স্বভাবতই ভুয়া চালক; আর এদের দ্বারাই দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। চতুর্থত—নির্মাণ ত্রুটির কারণে সড়কে যেসব দুর্ঘটনাপ্রবণ ব্যাক স্পেস রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সংস্কার জরুরি। পঞ্চমত—সড়কে পুলিশ ও মোবাইল কোর্টকে আরো বেশি সক্রিয় করার পাশাপাশি ট্রাফিক আইনকে ঘুষমুক্ত রাখা ও চালকদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান জরুরি। ষষ্ঠত—বেশির ভাগ সময় সড়কে সমাজের বিত্তবান বা প্রভাবশালী কেউ নিহত হলে সে ক্ষেত্রে চালককে গ্রেফতার সম্ভব হয়। অপরদিকে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে চালক গ্রেফতার কিংবা আর্থিক ক্ষতিপূরণ কোনোটাই পায় না। সুতরাং এক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ জরুরি। সপ্তমত—পথচারী ও যাত্রীদের অধিক সতর্ক করার কোনো বিকল্প নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টায় পথচারীদের ফুটপাত, আন্ডারপাস ও ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারে উত্সাহিত করতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকেও সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।
অনাকাঙ্ক্ষিত সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ এবং জনগণের সচেতনতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে—এমনটাই প্রত্যাশা।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Leave a Reply