তিনটির পরিবর্তে এখন চারটি জাহাজে পণ্য পরিবহন হবে : কসকো
চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জটের কারণ দেখিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপ রুটে কন্টেইনার পরিবহন বন্ধ করেছে আন্তর্জাতিক শিপিং সংস্থা কসকো শিপিং লাইনসের তিনটি জাহাজ। যদিও বন্দরসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দরে আসলে এমন কোনো জটই নেই। বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর থেকে ইউরোপে পণ্যবাহী জাহাজ পাঠায় নয়টির মতো মেইন লাইন অপারেটর। এর মধ্যে একটি লাইন বন্ধ হলেও পণ্য সরবরাহ থেমে নেই। গত ২১ ডিসেম্বর কসকো শিপিং লাইন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তাদের জাহাজ বন্ধের বিজ্ঞপ্তি দিলেও বাংলাদেশে তা জানাজানি হয় ২৩ ডিসেম্বর। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জটের কারণে কন্টেইনারবাহী জাহাজ জেটিতে দেরিতে ভিড়ছে এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে এড়িয়ে যেতে হচ্ছে। এ জন্য এই রুটে সার্ভিস বন্ধ করা হয়েছে। ভুল তথ্যের অজুহাতে কসকো শিপিং লাইন এর জাহাজ বন্ধের কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষ, বন্দর ব্যবহারকারীসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এরপর ভুল সংশোধন করে ২৪ ডিসেম্বর নতুন বিজ্ঞপ্তি দেয় কসকো শিপিং লাইন। সেখানে ট্রানশিপমেন্ট বন্দরের জাহাজ জটের কথা বলা হয়েছে।
তবে যে কারণ দেখিয়ে কসকো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন কসকো শিপিং লাইনস এর বাংলাদেশি এজেন্ট কন্টিনেন্টাল শিপিং ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান ইকবাল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট নেই। এখন বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল পাঁচ থেকে ছয় দিন। বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কসকো শিপিং লাইনসের সদর দপ্তর ও ইউরোপ শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আশা করছি, ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে।’ তিনি বলেন, আমরা তিনটি জাহাজ দিয়ে ট্রানশিপমেন্ট বন্দরের কন্টেইনার আনছি। বর্তমানে জমে থাকা পণ্য আনতে আরও একটি জাহাজ সংযোজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে আসার উপযোগী জাহাজ ভাড়া পাচ্ছি না। গ্রাহকের সন্তুুটিই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বলেন, ‘বন্দরে কোনো ধরনের জাহাজ জট নেই। কেউ এই ধরনের কথা বললে সেটি ভুল তথ্য। তিনি বলেন, ‘গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জেটিতে জাহাজ বার্থিং সময় এক দিনের কম। এছাড়া চার মাস ধরে বহির্নোঙরে পৌঁছেই কন্টেইনার জাহাজগুলো জেটি অন এরাইভাল বার্থিং নিচ্ছে। তাই জাহাজজটের সংবাদটি ভুল।’
কসকো শিপিং লাইনস চীনের সাংহাইভিত্তিক শিপিং সংস্থা। এটি বিশ্বব্যাপী পণ্যবাহী জাহাজ পরিবহন সেবা দিয়ে থাকে। চট্টগ্রাম-ইউরোপ রুটে কসকো শিপিং লাইনসের তিনটি জাহাজ চলাচল করে। এই রুটে প্রতিমাসে গড়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার কনটেইনার আনা নেয়া করে জাহাজগুলো। সমুদ্রপথে কনটেইনার পরিবহনের ৯৮ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিবাহিত হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের ১২টি জেটি ব্যবহার করে এসব কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয়। স্বাভাবিক সময়ে বন্দরের বহির্নোঙর থেকে জেটিতে ভিড়তে প্রতিদিন গড়ে অপেক্ষায় থাকে ২০ থেকে ৩০টি জাহাজ। এর মধ্যে প্রতিদিন জেটিতে খালাস হয় আট থেকে ১০টি জাহাজ।
বিশ্বের ৬০টি সমুদ্র বন্দরে বছরে ৩০ লাখ বা তিন মিলিয়ন একক কনটেইনার ওঠানামা করে। সেই ‘থ্রি মিলিয়নেয়ার পোর্ট এর তালিকায় ২০১৯ সালে যোগ হয়েছিল দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের নাম। কিন্তু করোনাকালে আমদানি রপ্তানি কমে যাওয়ায় এই তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেছে দেশের সবচেয়ে বড় বন্দরটির নাম।
Leave a Reply