ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব পেয়েছে ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। আগে এ দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে ওয়াসা।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও ওয়াসার এমডি তাকসিন এ খানের উপস্থিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন দুই সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ফজলে নূর তাপস।
এর মাধ্যমে আজ থেকে ওয়াসার দায়িত্বে থাকা সব নালা ও খাল দুই সিটি করপোরেশনের হাতে গেল।
এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে এখন থেকে ঢাকা শহরের বৃষ্টি-বর্ষা ও প্লাবনের পানিনিষ্কাশন আরও বেগবান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ওয়াসার এমডি তাকসিন এ খান।
অনুষ্ঠানে সিটি জরিপ অনুসারে অনতিবিলম্বে ঢাকা শহরের খালের সীমানা চিহ্নিত করার প্রতি জোর দিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আজ থেকে খাল সিটি করপোরেশনের হয়ে যাচ্ছে। এসব খাল পরিষ্কার করে খালে আগের মতো পানির গতি ফিরিয়ে আনা হবে। এ ছাড়া খালের দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। খাল পুনঃখনন করে পানিধারণের ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ পাড় বাঁধাই করে সবুজায়ন, ওয়াকওয়ে (হাঁটার পথ) এবং সাইকেল লেন তৈরি করা হবে।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব হন্তান্তরকে ঐতিহাসিক দিন হিসেবে ঘোষণা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
তিনি বলেন, আগামী শনিবার থেকে ঢাকার জিরানি, ডিএসসিসি নিজস্ব অর্থায়নে মান্ডাসহ তিনটি খাল ও দুটি বক্স কালভার্ট (পান্থপথ ও সেগুনবাগিচা) পরিষ্কার করার কাজ শুরু করব আমরা। আগামী তিন মাসে এ কাজ সম্পন্ন করা হবে। কালুনগর খাল আংশিক পরিষ্কার করা হয়েছে। এরপর ধোলাই খাল ও বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল নিয়ে কাজ করা হবে।
এ ছাড়া খাল-নালা উন্নয়নে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠানো হবে বলেও জানান ডিএসসিসি মেয়র।
অনুষ্ঠারেন প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা শহরকে আমরা দৃষ্টিনন্দন, বাসযোগ্য, স্বাস্থ্যকর নগরীতে রূপান্তর করতে চাই। ঢাকা শহরকে ঠিক করতে হলে যার যে দায়িত্ব, সেটি সঠিকভাবে পালন করতে হবে। ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা ১৯৬৩ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের হাতে ছিল। এরপর পৌরসভা এ দায়িত্ব পালন করত। ১৯৮৮ সালে এটি ঢাকা ওয়াসাকে হস্তান্তর করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে আজ ঢাকা শহরের ড্রেনেজ–সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা ঢাকা ওয়াসার জনবল ও সম্পদ দুই সিটি করপোরেশনের কাছে চলে যাবে। ’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, আজকের এই সমঝোতায় স্বাক্ষর দীর্ঘদিনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফল। মন্ত্রীর চেষ্টা, দুই মেয়রের আগ্রহ ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। আশা করি, আগামী বর্ষায় জলাবদ্ধতা হবে না।’
ড্রেনেজ–ব্যবস্থা হস্তান্তরসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে ডিএসসিসির পক্ষে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী ও ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা স্বাক্ষর করেন। এ সময় তিন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, জলাবদ্ধতা নিরসনের অংশ হিসেবে ঢাকা ওয়াসা শহরের ২৬টি খাল (প্রায় ৮০ কিলোমিটার) এবং প্রায় ৩৮৫ কিলোমিটার বড় আকারের নালা ও চারটি পাম্পস্টেশন রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করে। দুই সিটি করপোরেশন দেখভাল করে প্রায় ২ হাজার ২১১ কিলোমিটার নালা।
Leave a Reply