‘মোস্ট ইনফ্লুয়েন্সিয়াল উইমেন অব বাংলাদেশ’
অ্যাওয়ার্ড পেলেন নাজমুন নাহার। গত শুক্রবার বছরের বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি ২০২১ চট্টগ্রাম বাসীর পক্ষ থেকে ‘পতাকা কন্যা’ খ্যাত এ পরিব্রাজককে উক্ত পদকে ভূষিত করেন সাংস্কৃতিক সংগঠন স্বপ্নযাত্রী।
সর্বাধিক রাষ্ট্র ভ্রমণকারী প্রথম বাংলাদেশি নাজমুন নাহার। বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাকে পৃথিবীর পথে পথে পৌঁছে দেওয়ার এক ভিন্ন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন নাজমুন। প্রথম পতাকাবাহী বিশ্ব পরিব্রাজক নাজমুন নাহার ইতিমধ্যে বিশ্বের ১৪৪ দেশে বাংলাদেশের পতাকাকে পৌঁছে দিয়েছেন। তারুণ্যের আইকন অদম্য সাহসী বীর এই অভিযাত্রী নারীকে দেশের জন্য তার এমন বিরল অবদানের কৃতিত্ব স্বরূপ দেওয়া হয় এই সম্মাননা।
চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির গ্যালারি হলে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নাজমুনকে এ সম্মাননা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহীত উল আলম, বিশেষ অতিথি কবি সাংবাদিক এজাজ ইউসুফী, লক্ষ্মীপুর জেলা সমিতির সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর মো. এমএ কাশেম, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক নাট্যজন সাইফুল আলম বাবু নাজমুনের হাতে এ সম্মাননা পদক ও সার্টিফিকেট তুলে দেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আলী প্রয়াস।
নাজমুন নাহারের জীবনীর উপর ৩ টি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। শিল্পকলার গ্যালারি হলে আগত সকল অতিথিরা সবাই নাজমুন নাহারকে অভিনন্দিত ও ভালোবাসায় সিক্ত করেছিলেন। উল্লেখ্য, শিল্পকলার প্রধান ফটকে ২০০ টি ব্যানার চিত্র প্রদর্শিত হয় দর্শকদের জন্য। হলরুমের গেটে গাঁদা ফুল ও মোমবাতি জ্বালিয়ে ১৪৪ টি দেশ ভ্রমণকে স্বাগত জানিয়ে পতাকাসহ ১৪৪ লিখিত একটি চিত্র অঙ্কিত করেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মোহীত উল আলম বলেন, নাজমুন একজন সংগ্রামী ও সাহসী নারী। তিনি তার স্বপ্নকে বাস্তবে রুপায়িত করছেন বিশ্ব জয়ের মাধ্যমে। তার এ জয় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তির সঙ্গে একিভূত হয়ে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের সম্মানকে আরও একধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে নাজমুন নাহার শুনালেন তার বিশ্বভ্রমণের অসাধারণ সব গল্প। যে গল্পে ওঠে এসেছে পৃথিবীর মানুষের কথা, ভিন্ন ভিন্ন দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির কথা।
বেশিরভাগ দেশ সড়ক পথে একাকী ভ্রমণকারী নাজমুন তার বিশ্বজয়ের গল্পে আরও বলেন, বাংলাদেশের কোটি প্রাণের লাল-সবুজের পতাকাকে পৌঁছে দিয়েছি ১৪৪টি দেশে। আমার শরীরে ১৪৪ দেশের খাবার, তাপমাত্রা এবং সেসব দেশের মানুষকে কাছে থেকে জানার অভিজ্ঞতা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের স্কুলে গেছি, সেখানে শিক্ষার্থীদের কাছে আমার দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য তুলে ধরেছি। দেশে দেশে যুদ্ধ নয়, শান্তির বাণী প্রচার করেছি।
স্বপ্নবাদী নাজমুন তারুণ্যের স্বপ্নের মাঝেই আগামীর পৃথিবীটাকে দেখতে পান। তিনি বলেন, আমি পৃথিবীর সন্তান। পুরো পৃথিবীটাই আমার মা। পৃথিবীর সকল মানুষ আমরা সবাই একই আকাশের নিচে বসবাস করছি। ধর্ম, বর্ণ জাতি নির্বিশেষে আমাদেরকে মানুষের পরিচয়ে এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতে হবে। আগামী দিনের তরুণরাই হবে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর নির্মাতা।
পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব নারীরা বাধা ডিঙিয়ে বেরিয়ে আসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সর্বাধিক রাষ্ট্র ভ্রমণকারী প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নাজমুন নাহারের নাম আমরা এখন উচ্চারিত করি। শুধু তাই নয়, তিনি বহু সম্মাননা উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পেয়েছেন পিচ টর্চ বিয়ারার অ্যাওয়ার্ড, আর্থ কুইন এওয়ার্ড, জাম্বিয়া সরকারের গভর্নরের কাছ থেকে পেয়েছেন ফ্ল্যাগ গার্ল উপাধি, অনন্যা শীর্ষ দশ আওয়ার্ড, জনটা ইন্টারন্যাশনাল দিয়েছে গেম চেঞ্জার অব বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড, অতীশ দীপঙ্কর গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ডসহ অনেক উপাধি ও সম্মাননা পেয়েছেন নাজমুন নাহার। নাজমুন নাহার উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এবং একজন গবেষক হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। এছাড়াও তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে হিউম্যান রাইটস ও এশিয়া বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।
গত ২০ বছর ধরে তিনি বাংলাদেশের পতাকাকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করার জন্য চালিয়ে যাচ্ছেন তার অভিযাত্রা। যত দ্রুত সম্ভব তিনি জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি দেশ ভ্রমণের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশকে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার মাইলফলক সৃষ্টি করবেন তার বিশ্ব ভ্রমণের মাধ্যমে।
তার স্বপ্ন পৃথিবীর প্রতিটি দেশে তিনি বাংলাদেশের পতাকাকে পৌঁছে দেবেন।
Leave a Reply