জাহাজ পরিচালনায় আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ক্যাডেট তৈরিতে বাংলাদেশে এই প্রথম ‘সিমুলেটর কমপ্লেক্স’ স্থাপন করছে চট্টগ্রামের সরকারি ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট (এনএমআই)। মেরিটাইম সেক্টরে (নৌবাণিজ্য) দক্ষ জনবল তৈরির অংশ হিসেবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এটি স্থাপন করছে। প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের কাজ গত বছর শুরু হয়। এরই মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার আশা কর্তৃপক্ষের।
ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) নির্দেশিত নিয়মে ক্যাডেট প্রশিক্ষণে ‘সিমুলেট বেইজড’ প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশের অন্য ক্যাডেট প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে (যেমন—বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ও বেসরকারি একাডেমিগুলো) সিমুলেটর থাকলেও তা পূর্ণাঙ্গ নয়। সরকারি এনএমআইতে সিমুলেটর স্থাপিত হলে আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক দক্ষ নাবিক তৈরিতে একধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
জানতে চাইলে নৌবাণিজ্য অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন কে এম জসিম উদ্দিন সরকার বলেন, আগে ক্যাডেটদের সরাসরি জাহাজে উঠেই এই প্রশিক্ষণটা নিতে হতো। কিন্তু পরে সেটি কঠিন হয়ে পড়ায় আইএমও জাহাজে না উঠে জাহাজের মতোই রিয়াল টাইম, রিয়াল এনভায়রনমেন্ট ট্রেনিং বাধ্যতামূলক করে। এর পরই মূলত সিমুলেটর বেইজড ট্রেনিং শুরু। তিনি বলেন, ‘এনএমআই যে সিমুলেটর বসাচ্ছে সেটি সবচেয়ে আধুনিক এবং সমন্বিত বলে জেনেছি। এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাডেটরা অবশ্যই অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর সরাসরি জাহাজে উঠে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারবেন। বিশ্ববাজারেও তাঁরা এগিয়ে থাকবেন।’
জানা গেছে, বাংলাদেশে সরকারি ‘বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি’তে ডেক ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণে সিমুলেটর থাকলেও ইঞ্জিন ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণে প্রয়োজনীয় সিমুলেটর নেই। তবে ক্যাডেট প্রশিক্ষণের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘আইএমএ’ সিমুলেটর বেইজড ট্রেনিংয়ে সরকারি ও বেসরকারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলো থেকে কিছুটা এগিয়ে আছে।
সিমুলেটর বেইজড ট্রেনিং থাকলে একজন ক্যাডেট কিভাবে এগিয়ে থাকবে—জানতে চাইলে মেরিন একাডেমির নৌ শিক্ষা বিভাগের প্রধান ও ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, ‘একজন ক্যাডেট খোলা জাহাজ, কনটেইনার জাহাজ ও ট্যাংকার জাহাজের প্রশিক্ষণ পান। কিন্তু এনএমআইয়ের আধুনিক ও সমন্বিত সিমুলেটর দিয়ে বিশেষায়িত কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে, যা বাংলাদেশে প্রথম ও একেবারে নতুন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রিমোর্ট অপারেটেড ভেসেল, অফশোর ভেসেল এবং এলপিজি-এলএনজিভিত্তিক জাহাজ পরিচালনা। তিনি বিলেন, শুধু জাহাজ পরিচালনাই নয়, এই কেন্দ্রে বন্দর পরিচালনায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ভারী যন্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণও দেওয়া যাবে। এখান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা বিদেশে দক্ষ কর্মী হিসেবে চাকরি পাবে; যার চাহিদা প্রচুর।
ভবিষ্যতের যোগ্য জনবল তৈরির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকার চট্টগ্রামের এনএমআইতে রেটিংয়ের (কর্মী) পাশাপাশি ক্যাডেট প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। এ জন্য আগেই এই সর্বাধুনিক ও সমন্বিত সিমুলেটর নির্মাণ করছে।
এনএমআইয়ের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন ফয়সাল আজিম বলেন, এখানে একজন ক্যাডেট যেমন আধুনিক প্রশিক্ষণ নেবেন; তেমনি সর্বাধুনিক জ্ঞান থাকায় তাঁরা জাহাজে উঠেই দ্রুত কাজটি রপ্ত করতে পারবেন। ফলে অন্যদের চেয়ে এই কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষিতরাই এগিয়ে থাকবেন। তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলো এই সিমুলেটরের সঙ্গে যুক্ত থাকছে। ফলে ইনল্যান্ড ও কোস্টার জাহাজের নাবিকদেরও নৌ-নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আগামীর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই সিমুলেটর কমপ্লেক্স স্থাপন করছে। এই প্রকল্পের এখন ভৌত অবকাঠামোর নির্মাণকাজ চলছে। আমরা আশা করছি, নির্ধারিত সময় ২০২১ সালের জুনের মধ্যেই এটি সম্পন্ন হবে। কভিড-১৯ মহামারির মধ্যেই আমরা এই প্রকল্পের কাজ চালিয়েছি। খুব বেশি প্রভাব পড়তে দিইনি।’
Leave a Reply