1. paribahanjagot@gmail.com : pjeditor :
  2. jadusoftbd@gmail.com : webadmin :
বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
ঝালকাঠি থেকে ১১ রুটে বাস চলাচল বন্ধ বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ১০ দেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি হলেন স্টার লাইনের হাজী আলাউদ্দিন তরুণরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নামুক আবার পেট্রোনাস লুব্রিক্যান্টস বিক্রি করবে মেঘনা পেট্রোলিয়াম অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশে ভারতীয় সব ভিসা সেন্টার বন্ধ মন্ত্রী এমপিদের দেশত্যাগের হিড়িক : নিরাপদ আশ্রয়ে পালাচ্ছেন অনেকেই বাস ড্রাইভার নিকোলাস মাদুরো আবারও ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট ইউএস-বাংলার দশম বর্ষপূর্তি : ২৪ এয়ারক্রাফট দিয়ে দেশে বিদেশে ২০ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রী পরিবহন তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ

ঢাকার সড়কে দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে বেপরোয়া ছোট গাড়ি

এক্সিডেন্ট এন্ড সেফটি রিপোর্টার
  • আপডেট : সোমবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২১

ঢাকার সড়কে বেশি বেপরোয়া ছোট ছোট যানবাহন। এসব যানবাহন প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন করে ট্রাফিক আইন। আবার ছোটখাটো দুর্ঘটনারও শিকার হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার আর পথচারীরা আইন ভাঙেন বেশি। আবার আইন লঙ্ঘনের দলে আছেন ক্ষমতাবান বিভিন্ন লোক।

ট্রাফিক সার্জেন্টরা বলছেন, সড়কে অন্তত ৯০ শতাংশ পথচারী আইন মেনে চলেন না। তারা বলছেন, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল এবং প্রভাবশালীদের গাড়ি বেশি নিয়ম ভাঙে। ঝুঁকি নিয়ে অনেকটা নিজেদের খেয়ালখুশিমতো রাস্তায় চলার চেষ্টা করেন তারা। ট্রাফিক আইন না মানার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না। বুধবার কারওয়ানবাজার পয়েন্টে সিগন্যাল দেওয়ার পরও একটি গাড়ি ইউটার্ন নেওয়ার চেষ্টা করছিল। ট্রাফিক পুলিশের বডিঅর্ন ক্যামেরা দেখে পরে গাড়িটি দ্রুত ফিরে চলে যায়। ট্রাফিক কর্মকর্তারা বলছেন, উল্টোপথে যাওয়া, হেলমেট ছাড়া রাস্তায় চলাচলসহ আইন অমান্যের কারণে আটক করা গেলেই মামলা দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক সময় আটক করার আগেই দ্রুতবেগে গাড়িগুলো চলে যায়। মাঠ পর্যায়ের ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলছেন, বেশিরভাগ স্টিকার লাগানো গাড়ি রাস্তায় ঝামেলা করে। তারা নিয়ম মানতে চায় না। অনেক সময় তর্কবিতর্কে জড়িয়ে বড় কর্তাদের হুমকি দেয়। আইন ভাঙার এ দলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী, রাজনীতিবিদ, পুলিশ কর্মকর্তা ও সংবাদ মাধ্যমের কর্মীসহ অনেকেই রয়েছেন।

যানজটের মহানগর ঢাকায় প্রতিদিনই নগরবাসীকে একটি বড় সময় রাজপথেই কাটাতে হয়। ঢাকার কয়েকজন ট্রাফিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যেদিন রাস্তায় বের হন, সেদিন যানজটের পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যায়। তাদের নিরাপত্তার বিষয় চিন্তা করে বেশির ভাগ মানুষ এ দুর্ভোগ মেনে নেন। আবার সমালোচনাও কম হয় না। সড়কের যানজট এড়াতে উল্টোপথ বেছে নেন অনেক প্রভাবশালী। তারা গাড়ি নিয়ে উল্টোপথে নির্বিঘ্নে চলে যান। এতে সড়কের অন্য অংশগুলোতে যান চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। বেড়ে যায় যানজট।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, অনেক সময় প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপিদের গাড়িও সাইরেন বাজিয়ে চলে আসে। এসব গাড়ি এক মিনিট দেরি করালে চাকরির ঝুঁকিতে পড়তে হয়। ট্রাফিকের আরেক সদস্যের ভাষ্য, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, সংসদ সদস্য, আমলার পাশাপাশি পুলিশ কর্মকর্তাদের গাড়ি চলাচলের সময়ও তারা দ্রুত পার করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে এসব কর্মকর্তার এ সুবিধা পাওয়ার কথা না থাকলেও তাদের সেই সুবিধা দেওয়া হয়। ট্রাফিকের ওই সদস্য বলেন, ওই সময় সড়কের ওপর সাধারণ মানুষ যখন বিভিন্ন কটু মন্তব্য করেন, তখন খুব খারাপ লাগে।

গত দুই দিন রাজধানীর মগবাজার, কাকরাইল, পল্টন মোড়, শেরাটন মোড়, শাহবাগ এলাকায় বেশ কয়েকজন ট্রাফিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্টিকার লাগানো গাড়িই বেশি নিয়ম লঙ্ঘন করে। এছাড়া ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলও রাস্তায় নিয়ম লঙ্ঘন করে বেশি। আটক করলে ভুল স্বীকার করে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করে। তারা বলছেন, প্রভাবশালীদের গাড়ি এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের স্টিকার লাগানো গাড়ি নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করে বেশি। মগবাজার মোড়ে একজন ট্রাফিক কনস্টেবল বলেন, লোকজন তো আইন ভাঙেই, আইন মানার পরামর্শ দিলে পালটা ক্ষেপে যায়। তিনি বলেন, আমরা তো পালটা ক্ষেপতে পারি না। সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করার নির্দেশনা রয়েছে আমাদের প্রতি। তিনি বলেন, জেব্রা ক্রসিংয়ের আগে গাড়ি থামানোর নিয়ম। সিগন্যাল দিলেও যানবাহনগুলো জেব্রা ক্রসিং পার হয়ে এসে দাঁড়ায়। আবার কোনো কোনো সময় বাস-প্রাইভেটকারগুলো জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর এসে দাঁড়িয়ে থাকে। এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে পথচারীদের।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কারওয়ান বাজার মোড়ে পথচারী আবুল কালাম বলেন, মাঝ রাস্তা দিয়ে কি আর সাধে পার হই। আশপাশে কোনো ফ্লাইওভার নেই। যে আন্ডারপাস আছে, ওঠাও অনেক দূরে। আর জেব্রা ক্রসিং বলতে তো সড়কে কিছু নেই। গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর। জানতে চাইলে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল বলেন, এত চেষ্টা করি, কিন্তু কেউ মানতে চায় না আইন-কানুন। মনে হয়, গায়ের ওপর গাড়ি তুলে দিয়ে চলে যাবে। এদিন পরিবাগে সড়ক পার হচ্ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব সেলিনা বেগম। তিনি বলেন, হাঁটুতে সমস্যার কারণে ফুটওভার ব্রিজে উঠতে কষ্ট হয়। এজন্য ঝুঁকি নিয়েই তিনি রাস্তা পার হচ্ছেন।

বিহঙ্গ পরিবহণের বাসের চালক খাইরুল বলেন, সড়কে যেখান-সেখান দিয়ে পথচারীরা পার হন। আর দুর্ঘটনা ঘটলে দায় বর্তায় চালকের ওপর। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় বাস চলছে। হঠাৎ পথচারী রাস্তায় নেমে হাত উঠিয়ে গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পার হতে লাগল। কারও গাড়ির ব্রেক দুর্বল হলে তখন গাড়ি তার ওপর উঠে যেতে পারে। আর ঘটে যেতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। এদিকে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও নির্ধারিত স্টপেজের বাইরেও মাঝ রাস্তায় চলন্ত গাড়িতে যাত্রী তোলা, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, রেষারেষি করে গাড়ি চালাতে গিয়ে জটলা তৈরি করে অহরহ যানজট সৃষ্টির নানা অব্যবস্থাপনা লক্ষ করা গেছে সড়কে। আবার চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে পথচারীদের হঠাৎ দৌড়ে রাস্তা পারাপার, ফুটওভার ব্রিজ এড়িয়ে ঝুঁকিতে পথ পেরোনোর ঘটনাও রোধ হচ্ছে না কোনোক্রমেই।

বিজয় সরণি মোড়ে একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, আগে দিনে ৫ থেকে ৭টি মামলা করতাম। নতুন আইন প্রয়োগ শুরুর পর থেকে দুটি মামলা করেন। জরিমানার ভয়ে বড় যানবাহনগুলো অনেকটাই নিয়ম মেনে চলে। তবে ছোট যানগুলো বেশি নিয়ম ভাঙে। ট্রাফিক সার্জেন্ট ফেরদৌস বলেন, লাইসেন্স না থাকলে মোটরসাইকেল চালককে চার হাজার এবং চার চাকার গাড়ির চালককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে মামলা দেওয়া হয়। আগের আইনে নিবন্ধনহীন গাড়ি চালানোর জরিমানা ছিল দুই হাজার টাকা। এখন তা ৫০ হাজার টাকা। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানোর জরিমানা দুই হাজার থেকে বেড়ে ২৫ হাজার টাকা হয়েছে।

ইদানীং সড়কে হেলমেট ছাড়াও লোকজনকে মোটরসাইকেলে চলতে দেখা গেছে। এসব বিষয়ে ট্রাফিক সার্জেন্টরা বলছেন, জরিমানা বাড়ায় হেলমেটবিহীন চালকের সংখ্যা কমেছে। হেলমেট ছাড়া কাউকে পেলেই তারা মামলা দেন। যদিও এখনো হেলমেটে শতভাগ অভ্যস্ত হয়নি মোটরবাইক চালকরা।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেছেন, সড়কে দুর্ঘটনা দিনে দিনে বাড়ছেই। ২০২০ সালে সড়কে ৪ হাজার ৮৯১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন ৬ হাজার ৬৮৬ জন। আর আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৬শ’ জন। অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, অসচেতনতা, অনিয়ন্ত্রিত গতি, রাস্তা নির্মাণে ত্রুটি, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করা এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ। পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) আবদুর রাজ্জাক বলেন, সড়কে আগের চেয়ে শৃঙ্খলা ফিরেছে। চালকরা আগের চেয়ে নিয়মকানুন বেশি মানছে। লাইসেন্সবিহীন চালক খুব একটা নেই। যানবাহনগুলোর কাগজপত্র আগের চেয়ে অনেকটাই আপডেট করেছে। আমরা সড়কে শতভাগ শৃঙ্খলা ফেরানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
© 2020, All rights reserved By www.paribahanjagot.com
Developed By: JADU SOFT