ব্যক্তিগত হিসেবে নিবন্ধিত ‘ঢাকা–দ’ সিরিজের ফোর স্ট্রোক থ্রি হুইলার সিএনজিচালিত অটোরিকশার শ্রেণি পরিবর্তন করে ঢাকা মহানগর এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চলাচলের অনুমতি দিতে নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় দেন। সাড়ে চার বছর আগে দেওয়া রুল খারিজ ও ইতিপূর্বের নির্দেশনা প্রত্যাহার করে এ রায় দেওয়া হয়।
ফলে ব্যক্তিগত হিসেবে নিবন্ধিত ‘ঢাকা–দ’ সিরিজের প্রায় চার হাজার ফোর স্ট্রোক থ্রি হুইলার সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাজধানীতে বাণিজ্যিকভাবে চলাচল করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) আইনজীবী মো. রাফিউল ইসলাম।
নথিপত্র থেকে জানা যায়, ‘ঢাকা–দ’ সিরিজভুক্ত ব্যক্তিগত এসব অটোরিকশার শ্রেণি পরিবর্তন করে পাবলিক অটোরিকশা হিসেবে ‘ঢাকা মেট্রো–থ’ শ্রেণিভুক্ত করে সংখ্যা বাড়িয়ে (‘ঢাকা মেট্রো–থ’ সংখ্যা বাড়ানো) ঢাকা মহানগর এলাকায় চলাচলে রুট পারমিট নিতে নির্দেশনা চেয়ে ২০১৬ সালে রিটটি করা হয়। ঢাকা মহানগর প্রাইভেট সিএনজি অটোরিকশা মালিক কল্যাণ সমিতির পক্ষে তৎকালীন অর্থ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন রিটটি করেন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই হাইকোর্ট রুলসহ অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ‘ঢাকা–দ’ সিরিজের অটোরিকশার ‘ঢাকা মেট্রো–থ’ হিসেবে শ্রেণি পরবর্তন করে ঢাকা মহানগর এলাকায় চলাচলে রুট পারমিট দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। ‘দ’ সিরিজের ব্যক্তিগত অটোরিকশা বাণিজ্যিক হিসেবে শ্রেণি পরিবর্তনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুলে জানতে চাওয়া হয়। শ্রেণি পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত ‘দ’ সিরিজের ব্যক্তিগত ১ হাজার ৫৪৬ সিএনজিকে ঢাকা মহানগর এলাকায় চলাচলে বাধা না দিতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দেওয়া হয়। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে তা খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে আজ রায় দেওয়া হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান, মনিরুজ্জামান আসাদ ও ইভা আলম। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের পক্ষে আইনজীবী মাসুদ হাসান চৌধুরী ও বিআরটিএর পক্ষে আইনজীবী মো. রাফিউল ইসলাম শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
পরে বিআরটিএর আইনজীবী রাফিউল ইসলাম বলেন, ‘দ’ সিরিজের এসব অটোরিকশা ঢাকা মহানগর এলাকার বাইরে ব্যক্তিগতভাবে চলাচলের জন্য বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন নেয়। অথচ ‘দ’ সিরিজের ব্যক্তিগত অটোরিকশাগুলো বেআইনিভাবে ঢাকা মহানগরে চলছিল। এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হলে ব্যক্তিগত সিএনজি মালিক সমিতির পক্ষে রিটটি করা হয়। শ্রেণি পরিবর্তন না করা পর্যন্ত ‘দ’ সিরিজের ব্যক্তিগত অটোরিকশা চলাচলে বাধা না দিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে ‘দ’ সিরিজের ব্যক্তিগত অটোরিকশাগুলো ঢাকায় বাণিজ্যিকভাবে চলতে পারবে না।
রিট আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী মনিরুজ্জামান আসাদ বলেন, রিটে প্রথমে ‘দ’ সিরিজের ১ হাজার ৫৪৬টি ব্যক্তিগত অটোরিকশার বিষয়ে বলা হয়। পরবর্তীকালে আরও এক হাজার ব্যক্তিগত অটোরিকশার মালিক এতে পক্ষভুক্ত হন। এ হিসেবে ব্যক্তিগত সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা ২ হাজার ৫৪৬টি। রিট আবেদনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিআরটিএর আইনজীবীর তথ্যমতে, ১৯৮৩ সালের মোটর ভেহিক্যালস অর্ডিন্যান্স অনুসারে, যানের কাঠামো পরিবর্তন করা যায়, তবে শ্রেণি পরিবর্তন করা যায় না। অর্ডিন্যান্সটি ইতিমধ্যে বাতিল হয়ে ২০১৮ সালে সড়ক পরিবহন আইন হয়েছে। এই আইনেও শ্রেণি পরিবর্তনের কোনো কথা নেই। মহানগর এলাকায় ভাড়ায় চালিত সিএনজিচালিত অটোরিকশার একটি নির্ধারিত সংখ্যা আছে, যা বিআরটিএর প্রস্তাব অনুসারে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করে থাকে। আগে ঢাকা শহরে ভাড়ায় চালিত অটোরিকশার সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার। পরে এই সংখ্যা বাড়িয়ে ১৫ হাজার ৬৯৬ করা হয়।
Leave a Reply