লঞ্চ দুর্ঘটনার এক মামলায় আদালত দুই মাস্টারের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোয় ঢাকা সদরঘাট থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন লঞ্চ শ্রমিকেরা। এ ঘটনায় আজ সোমবার সন্ধ্যা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রী চরম ভোগান্তিতে পড়েন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, একটি মামলায় জামিনে থাকা দুই মাস্টার গতকাল মেরিন কোর্টে গিয়েছিলেন। সেখানে তাদের জামিন না হওয়ায় শ্রমিকরা দুপুরে পন্টুন থেকে লঞ্চ সরিয়ে নেন। তবে চাঁদপুর রুটের লঞ্চ লালকুঠির ঘাট দিয়ে চলাচল করছে। সদরঘাটের মূল পন্টুনের লঞ্চগুলো তারা সরিয়ে নিয়েছে। মূল পন্টুনের লঞ্চগুলো সাধারণত বিকাল থেকে যাত্রা শুরু করে। সোমবার দুপুর ২টা থেকে কর্মবিরতি চলছে বলে ঘোষণা দেন নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন বরিশালের সভাপতি আবুল হাসেম মাস্টার।
সদরঘাট সূত্র জানায়, গতবছর মেঘনায় ঘন কুয়াশায় একই কোম্পানির অ্যাডভেঞ্চার-১ ও অ্যাডভেঞ্চার-৯ নামে দুটি লঞ্চের সংঘর্ষ হয়। এতে কেউ হতাহত হয়নি। এরপরও দুই মাস্টারসহ চারজনের সার্টিফিকেট চার মাসের জন্য জব্দ করা হয়। মেরিন আদালতে মামলা হলে আজ হাজিরা দিতে গেলে দুই লঞ্চের মাস্টার রূহুল আমিন ও আলমাসকে জেলহাজতে পাঠান বিচারক। এর প্রতিবাদেই নৌ শ্রমিকরা কর্মবিরতির শুরু করেন লঞ্চ শ্রমিকরা।
সদরঘাট থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, হাতিয়াসহ ৪৩ রুটে প্রতিদিন ৭০টির বেশি লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম চৌধুরী বলেন, কোথায় দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার হদিস নেই, চার মাস এই দু’জনের সার্টিফিকেট ‘হোল্ড’ করে রাখা হয়েছিল। জামিন না দেওয়ার কোনো কারণ ছিল না। শ্রমিকরা প্রতিবাদ জানাতে ঘাট থেকে লঞ্চ সরিয়ে নিয়েছে।
আমাদের বরিশাল প্রতিনিধি জানান, যাত্রীবাহী নৌযানে আকস্মিক ধর্মঘটে বেকায়দায় পড়েছেন দূরপাল্লার হাজার হাজার যাত্রী। দুপুর ২টায় বরিশাল নদী বন্দরে গিয়ে দেখা যায়, নদী বন্দরের পন্টুন থেকে ঢাকা অভিমুখী যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়। আর ঢাকাগামী যাত্রীদের লঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।
এ্যাডভেঞ্চর লঞ্চ কোম্পানীর মালিক মো. নিজাম উদ্দিন জানান, গতবছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘন কুয়াশার কারণে মধ্য বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের মেঘনা নদীতে এমভি এ্যাডভেঞ্চার-৯ এবং এমভি এ্যাডভেঞ্চার-১ লঞ্চের মধ্যে ঘর্ষণ (আঘাত) হয়। এতে কোন লঞ্চের কোন ক্ষতি কিংবা কোন হতাহত হয়নি। এ ঘটনায় কোন অভিযোগও ছিলো না। কিন্তু এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিআইডব্লিউটিএ মেরিন আদালতে একটি মামলা করে।
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধির পাঠানো তথ্যে জানা যায়, ধর্মঘটে নারায়ণগঞ্জ থেকে ৭টি রুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে কোন প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। সেখানে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক ছিল। নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জ রুটে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬-৭ টা পর্যন্ত ২০ মিনিট পর পর লঞ্চ ছেড়ে যায়। এই রুটে ২৫টি লঞ্চ চলাচল করে। নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর রুটে ১৫টি, মতলব-মাছুয়াখালী রুটে ১৯টি, হোমনা-রামচন্দ্রপুর ১টি, ওয়াবদা, সুরেশ্বর-নরিয়া (শরিয়তপুর) কয়েকটি লঞ্চ চলাচল করে থাকে। তবে এসকল রুটের মধ্যে সন্ধ্যার পরে ২টি রুটে লঞ্চ চলাচল করে থাকে।
Leave a Reply