আপনি চুইং গাম এতো লাইক করেন?
-আরে ভাইজান কি কন? আমি পান খাইতেছি , এই যে দেখেন না পানের ডিব্বা সাথে লইয়া আসছি ।
আমি বললাম :
ঢাকা কাস্টমস এ কিছু বলেনি?
-আরে ভাইজান কাস্টমস এ আমাগো নিজের লোক আছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম :
জার্মানিতে কোথায় যাচ্ছেন?
-আমার পোলা থাকে ঐখানে।
আমি বললাম :
দুবাইতে কিন্তু আবার চেক হবে। ঝামেলায় পড়বেন পানের ডিব্বা নিয়ে।
উনি উত্তর দিলেন :
পানের ডিব্বা ছাড়া আমি কোথায়ও যাই না।
কিছুক্ষণ চুপচাপ।
হঠাৎ তার তরুণী মেয়ে বললো :
মা দেখো দেখো প্লেন এতো দ্রুত যাচ্ছে যে মেঘগুলি পারছেনা সামাল দিতে। ভদ্রমহিলা কি বুঝলেন আল্লাহই মালুম।
দৌড়ে গেলেন ককপিট এর দিকে। আমাদের সিটগুলি একদম সামনে ছিল, ককপিট এর কাছাকাছি।
চেঁচিয়ে বললেন :
এই যে পাইলট সাহেব একটু আইসতে চালান, আমার মাইয়া ভয় পাইতাসে।
steward এসে বসিয়ে দিলেন ভদ্রমহিলাকে তার সিটে। সমস্ত প্লেন তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। ইন্ডিয়ান steward যখনি পাশ দিয়ে যায়, একবার মুচকি হাসে। আমি লজ্জায় বাঁচিনে।
যাহোক প্লেন দুবাইতে ল্যান্ড করলো। এবার দুবাই থেকে ডুসেলডর্ফ। পানের ডিব্বা সহি সালামতে কাস্টমস পার হলো। আমি দুবাই এর ডিউটি ফ্রি শপ থেকে ভদকার একটি কেস কিনলাম। তিন বোতল। জার্মানিতে আমি যে কোম্পানি তে কাজ করি আমার বস জার্মান হলেও রাশিয়ান ভদকার পাগল। ভদ্রলোক বেশ খুশি হবেন।
দুবাই থেকে প্লেন ছাড়লো। পাঠক আপনি বিশ্বাস করবেন না, আবারো ওই দুজন আমার পাশে। এবার আর কোনো কথা হলো না। না হলেই ভালো।
ডুসেলডর্ফ এ প্লেন ল্যান্ড করলো। জার্মানরা পানের ডিব্বা দেখলোই না। কিন্তু আমার ভদকার কেস ঠিকই নজর এড়ালো না।
কাস্টমস অফিসার বললেন :
মাত্র এক বোতল ট্যাক্স ছাড়া। বাকি দু বোতলের জন্য ট্যাক্স দিতে হবে। আমি বললাম : দেখুন এটি একটি গিফট আমার বস এর জন্যে। কে শুনে কার কথা।
হঠাৎ হিজাব পরা ভদ্রমহিলা অক্সফোর্ড ইংরেজিতে কাস্টমস অফিসারকে বললেন :
“আচ্ছা, এক প্যাসেঞ্জার এক বোতল সাথে নিতে পারে তাই না?
– হা, কাস্টমস অফিসার এর উত্তর।
অত্যন্ত পরিষ্কার ইংরেজিতে উনি বললেন :
তাহলেতো ঠিকই আছে। আমরা তিনজন প্যাসেঞ্জার। তিন বোতল ভদকা।
কাস্টমস অফিসার হিজাব পরা ভদ্রমহিলার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন :
আপনি ড্রিংক করেন?
উত্তর অ্যাকসেন্ট ছাড়া ইংরেজিতে :
কেন, আপনার কি তাতে কোনো প্রবলেম আছে?
কাস্টমস অফিসার আমাদের ছেড়ে দিলেন। আমার দুচোখ ছানাবড়া। আমার নাৎসি লালিত উন্নাসিকতাকে চুরমার করে দিলেন বাঙালি হিজাব পরা ললনা।
আমি উনাকে বললাম :
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
উনি উত্তর দিলেন :
কিযে কন ভাইজান বাঙালি হইয়া আরেক বাঙ্গালিরে সাহায্য করুম না!
-সংগৃহিত।
Leave a Reply