দীর্ঘ দাবির মুখে অবশেষে অভ্যন্তরীণ রুটের অ্যারোনটিক্যাল চার্জে সাত মাসের পূর্ণ ছাড় পেয়েছে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলো। সম্প্রতি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষ (বেবিচক) গত মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার্জের সবটাই মওকুফ করেছে। এতে করোনা বিপর্যস্ত এয়ারলাইনসগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে বলে মনে করছে বেবিচক। তবে এয়ারলাইনসগুলোর মালিকপক্ষ বলছে, এই ছাড়ে সামগ্রিকভাবে তেমন সুবিধা পাবেন না তারা। আন্তর্জাতিক রুটের ডাবল চার্জের অন্তত একটি মওকুফ করা হলেও টিকে থাকার লড়াইয়ে সুফল আসবে।
সিভিল এভিয়েশন কর্র্তৃপক্ষ বলছে, গত মার্চ থেকেই দেশি-বিদেশি সব রুটেই ফ্লাইট বন্ধ করা হয়েছিল। এতে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ে এয়ারলাইনসগুলো। তাদের এই বিপর্যয়ের কথা বিবেচনায় নিয়েই আপাতত সাত মাসের চার্জ সবটাই ছাড় দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে এখনো ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে বিষয়টি আমলে নিয়ে কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালানো হচ্ছে।
বেবিচক সূত্র জানায়, বর্তমানে উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং, পার্কিং, রুট নেভিগেশন চার্জ, হাউজিং অব এয়ারক্রাফট চার্জ, বোর্ডিং ব্রিজ চার্জ ও এম্বারকেশন চার্জ নেওয়া হয় অ্যারোনটিক্যাল চার্জ বাবদ। দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনস থেকে এসব চার্জ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ সিভিল এভিয়েশনের আয়ের উৎস। দেশের বিমানবন্দরগুলো ব্যবহার, রাডারের তথ্য ব্যবহার, ওভার ফ্লাইংসহ বিভিন্ন ইস্যুতে এয়ারলাইনসগুলো থেকে বিভিন্ন চার্জ আদায় করে বেবিচক। এসব চার্জ বাবদ প্রতি মাসে ৯০ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকা আয় হয় বেবিচকের। কিন্তু মার্চ থেকে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকায় বেবিচকের আয় প্রায় শূন্যে পৌঁছে গেছে। তারপরও দেশীয় এয়ারলাইনসগুলোর অস্তিত্ব রক্ষায় সাত মাসের চার্জ মওকুফ করা হয়েছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, যেকোনো সরকারি চার্জ বা পাওনা মাফ বা মওকুফ করারটা খুবই জটিল ব্যাপার। এ জন্য সিভিল এভিয়েশন চাইলেও একা কিছু করতে পারে না। তারপরও উদ্যোগ নিয়ে যতটুকু পেরেছে সফলই হয়েছে। চলমান করোনা মহামারীতে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলো বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে তাতে সন্দেহ নেই। তাদের কথা বিবেচনা করে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অ্যারোনটিক্যাল চার্জ পূর্ণ মওকুফ করা হয়েছে। যদিও আমরা ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রস্তাবে বলেছিলাম। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে। এ ছাড়া নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জে চার মাস ২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের ভেতর দোকান বা স্পেস ব্যবহারের ওপর চার মাসের জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছে। আর এয়ারলাইনসের অফিসগুলোর ভাড়ার ওপর তিন মাস ছাড় দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সিভিল এভিয়েশনের রেভিনিউ অনেকটা কমে যাবে। আমাদের সঞ্চিত আয় থেকে আমরা এই ব্যয় মেটাব। তারপরও আমরা এই শিল্প বিকাশে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনা মহামারী শুরুর পর ৩১ মার্চ থেকে ফ্লাইট বন্ধ করা হয়। আবার জুন মাসের ১ তারিখ থেকে অভ্যন্তরীণ এবং ১৬ জুন থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরু হয়। বর্তমানে বিমান, ইউএস বাংলা ও নভো এয়ারলাইনস তাদের কার্যক্রম চালু রেখেছে। অপর এয়ারলাইনস রিজেন্ট এয়ারওয়েজ তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। আগামী মাসেই রিজেন্ট এয়ার ফের চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ছাড়া আগেই বন্ধ হয়ে গেছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজসহ কয়েকটি এয়ারলাইনস। এয়ারলাইনসগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, করোনার আগে থেকেই দাবি ছিল দেশি ও আন্তর্জাতিক রুটে বিভিন্ন চার্জ মওকুফ করার। সেটি করা হয়নি। এ অবস্থায় করোনার তান্ডবে সব তছনছ হয়ে গেছে। গত মার্চ থেকে টানা ফ্লাইট বন্ধ থাকায় দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে দীর্ঘমেয়াদি অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জে ছাড় চেয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানায় বিভিন্ন এয়ারলাইনস। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে চার্জ কমানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছিল বেবিচক। তাদের এসব দাবির প্রতি প্রয়োজনীয় অনুমোদনের পর বিভিন্ন চার্জে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি অনুমোদন আসে বেবিচক সদর দপ্তরে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, যতটা পেরেছি করেছি। এটা শুধু আমার একক মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত নয়। অর্থ মন্ত্রণালয় যতটা অনুমোদন দিয়েছে তা নিয়েই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। আপাতত আমরা অভ্যন্তরীণ রুটে কিছু ছাড় দিয়েছি। বিদেশি এয়ারলাইনসের ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন দেশে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। এয়ারলাইনসের এসব যৌক্তিক দাবির প্রতি আমাদের সহানুভূতি রয়েছে।
এদিকে বেসরকারি এয়ারলাইনস রিজেন্টের চিফ অপারেটিং অফিসার আশীষ রায় চৌধুরী বলেন, আমরা তো করোনার অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন চার্জ মওকুফের জন্য দাবি করে আসছিলাম। বেবিচক সেগুলো যৌক্তিক বিবেচনা করে মানার আশ্বাসও দিয়ে আসছে। কিন্তু এখন শুধু করোনাকালীন সাত মাসের অভ্যন্তরীণ চার্জ মওকুফ করেছে। এতে আর কী হবে? তিনি আরও বলেন, দেশীয় এয়ারলাইনসকে যেকোনো ফ্লাইট শেষে দেশেই ফিরতেই হয়। তারপরও আন্তর্জাতিক হারে চার্জ আদায় করছে বেবিচক। যেমন চট্টগ্রাম থেকে কোনো ফ্লাইট ঢাকা হয়ে কলকাতায় গিয়ে অ্যারোনটিক্যাল চার্জ দেয়। সেই ফ্লাইট আবার ঢাকায় ফিরে এসে বসে থাকলেও ৬ হাজার ডলার চার্জ দিতে হয়। এটা কেন? দেশের এয়ারলাইনসগুলো বিদেশ থেকে ফেরার পর কেন এটি পরিশোধ করতে হবে? পৃথিবীর কোনো দেশে এটি নেই। উৎস : দেশ রূপান্তর।
Leave a Reply