সব কিছু ঠিক থাকলে প্রয়োজনীয় ট্রায়াল রান শেষে চলতি বছরের মধ্যেই ঢাকার প্রথম উড়াল মেট্রো রেল যাত্রী পরিবহন শুরু করবে। তবে বর্তমান বাস্তবতায় এর সম্ভাবনা নিয়ে রয়েছে কিছুটা সংশয়। করোনার কারণে জাপানে বাংলাদেশিদের ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কাওয়াসাকি মিৎসুবিশি কনসোর্টিয়ামের তৈরি করা মেট্রো রেল বুঝে নিতে দেশটিতে সশরীরে যেতে পারেননি প্রকৌশলীরা। এ অবস্থায় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ট্রায়াল রান পরিচালনা ও অন্যান্য পরিক্ষা-নিরীক্ষা করে মেট্রো রেল দেশে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জাপান ইনস্পেকশন কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই একটি ট্রেন নিরীক্ষার কাজ শেষ করেছে। বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা ভিডিও কলের মাধ্যমে তা পর্যবেক্ষণ করেছেন। ট্রেনটি ট্রায়াল রানে উত্তীর্ণ হওয়ায় তা দেশে আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি জাপানের কোবে বন্দর থেকে সমুদ্র পথে এ ট্রেন যাত্রা শুরু করবে।
জাপানের কোবে বন্দর থেকে মোংলা বন্দর হয়ে আশুলিয়ায় স্থাপন করা অস্থায়ী জেটির উদ্দেশ্যে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করবে। এপ্রিলে মেট্রো রেলের উত্তরা ডিপোতে আসলে ১৯ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে শুরু হবে ট্রায়াল রান। এপ্রিল ও জুন মাসে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কাওয়াসাকি মিৎসুবিশি কনসোর্টিয়াম আরও দুইটি মেট্রো ট্রেন পাঠাবে। সব কিছু ঠিক থাকলে প্রয়োজনীয় ট্রায়াল রান শেষে চলতি বছরের মধ্যেই ঢাকার প্রথম উড়াল মেট্রো রেল যাত্রী পরিবহন শুরু করবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক। তবে বর্তমান বাস্তবতায় এর সম্ভাবনা নিয়ে রয়েছে কিছুটা সংশয়।
তিনি জানান, মেট্রো রেলের ট্রায়ালের জন্য তিনটি স্টেশনের প্রয়োজন থাকলেও এমআরটি লাইন-৬ এর আওতায় পাঁচটি স্টেশনের কাজ শেষ হয়েছে। ২০.১০ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণের সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৫৭ শতাংশ। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের ৮০.২১ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে।
ডিটিসিএল কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে সিদ্দিক জানান, এমআরটি ৬ প্রকল্পে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের ১১.৭৩ কিলোমিটারের মধ্যে ১১.৫৮ কিলোমিটারের ভায়াডাক্ট নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। ৯টি স্টেশনের সাব-স্ট্রাকচারের কাজ শেষ হয়েছে। চারটি স্টেশনের কনকোর্স ছাদ নির্মাণ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে স্টিল স্ট্রাকচারের কাজ চলছে তিনটিতে। এই তিন স্টেশনে মেকানিক্যাল, ইলেক্ট্রিক্যাল ও পাম্বিং এর কাজ চলছে। কাজ চলছে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, সিগন্যালিং, টেলিকমিউনিকেশন এবং স্টেশন কন্ট্রোলার কক্ষ নির্মাণের কাজ। সব মিলে এ অংশের সার্বিক অগ্রগতি ৭৬.৫০ শতাংশ।
১৬ ডিসেম্বর চালু করা নিয়ে সংশয়
আনুষাঙ্গিক পরীক্ষা নিরীক্ষার ট্রায়াল রান পরিচালনা শেষে ১৬ ডিসেম্বর মেট্রো রেল চালু করার সম্ভাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে সরাসরি কোন উত্তর দেননি এমএএন সিদ্দিক।
তিনি বলেন, ট্রায়াল রানে সর্বোচ্চ ছয় মাস সময় লাগে। একটা ট্রেন আসলে ১৯ ধরনের টেস্ট প্রয়োজন হয়। জুলাইয়ে ট্রায়ল রান শুরুর পর সব কিছু ঠিক থাকলে বাণিজ্যিকভাবে চালু করা যাবে। “আমাদের টার্গেট আছে ১৬ ডিসেম্বর মেট্রো রেল চালু করার। আমরা আপ্রান চেষ্টা করব। সব কিছু নির্ভর করবে পরবর্তী পরিস্থিতির ওপর,” বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেল চালু করতে ২৪টি ট্রেন লাগবে। আগারগাঁও পর্যন্ত ট্রেন লাগবে আরও কম। ট্রেনের পরিমাণ কম আসলেও লাইন প্রস্তত থাকলে শুরু করে দেয়া হবে।” তিনি আরও বলেন, যে কয়টা ট্রেন প্রস্তত থাকবে তা দিয়ে যাত্রী পরিবহণ শুরু হবে। পরবর্তীতে নতুন ট্রেন এসে যোগ দিবে বহরে।
তৃতীয় পক্ষের ট্রায়ালে জাপানের প্রতিষ্ঠান
দেশের প্রকৌশলীরা যেতে না পারায় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে মেট্রো রেলের ইনস্পেকশনের কথা থাকলেও এ দায়িত্ব পেয়েছে জাপানেরই প্রতিষ্ঠান জাপান ইনস্পেকশন কোম্পানি লিমিটেড। আর এ প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মিৎসুবিশি কাওয়াসাকি কনসোর্টিয়াম।
জাপানের প্রতিষ্ঠান তৃতীয় পক্ষের শর্ত পূরণ করতে পারে কী না জানতে চাইলে এমএএন সিদ্দিক বলেন, দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বব্যাপী সুনাম রয়েছে। জাপানের প্রতিষ্ঠান হলেও এর সেবা বিশ্বমানের।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত 20 কিলোমিটারের বেশি মেট্রো রেল নির্মাণ করতে ২০১২ সালে ২২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কমলাপুর পর্যন্ত আরও ১.১৬ কিলোমিটার রেল এ লাইনে যোগ হবে। এ বিষয়ে ডিএমটিসিএল এমডি বলেন, এ অংশের প্রাথমিক সমীক্ষা ও ডিজাইনের কাজ শুরু হয়েছে। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনাও চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে জুন মাসে এ অংশের কাজ শুরু সম্ভব হবে বলেও তিনি জানান।
কমলাপুর রেল স্টেশন ভাঙ্গার প্রয়োজন নেই
চলমান এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে কমলাপুরে বিদ্যমান রেল স্টেশন ভাঙ্গার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, মেট্রো রেলের প্রস্তাবিত স্টেশনটি হবে বিদ্যমান রাস্তার ওপর। স্টেশন বিল্ডিং থেকে এ স্টেশনের মধ্যে ফাঁকা থাকবে প্রায় ৩০ মিটার যায়গা। তা ছাড়া মেট্রো রেল স্টেশনের উচ্চতা হবে বিদ্যমান রেল স্টেশনের সমান। এ স্টেশন ভবনটি গড়ে তুলা হবে রেলস্টেশন ভবনের আদলে।
তিনি বলেন, মেট্রো রেলের জন্যে কমলাপুর রেল স্টেশন ভবন সরানোর কোন প্রয়োজন নেই। এমনকি স্টেশনের পাশে থাকা সিএনজি স্টেশনটিও অক্ষত থাকবে। রেলের স্টেশন সরাতে অন্য কোন কারণ থাকতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
অন্যান্য মেট্রো লাইনের অগ্রগতি
বিমান বন্দর থেকে নতুন বাজার হয়ে কমলাপুর ও নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত মেট্রো রেল পর্যন্ত এমআরটি লাইন-১ নির্মাণের লক্ষ্যে সব ধরনের স্টাডি, সার্ভে ও প্রাথমিক ডিজাইনের কাজ শেষ হয়েছে। বিস্তারিত ডিজাইনের কাজ হয়েছে ৬৫ শতাংশ। এ অংশে প্রায় ৯৩ একর জমি অধিগ্রহনের কাজ প্রক্রিয়াধীন।
তিনি আরও জানান, হেমায়েতপুর থেকে মিরপুর-১০ হয়ে ভাটারা পর্যন্ত পাতাল মেট্রো রেল নির্মাণের (এমআরটি-৫ উত্তর) ফিজিবিলিটি স্টাডির পর প্রাথমিক ডিজাইনের কাজ চলছে। উৎস : টিবিএস।
Leave a Reply