সিকেডির সংজ্ঞা পরিবর্তন করল এনবিআর
দেশে উচ্চ প্রযুক্তির মোটরসাইকেল আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এজন্য মোটরসাইকেলের সিকেডি (কমপ্লিট নকড ডাউন) বা সম্পূর্ণ আলাদা অবস্থায় যন্ত্রাংশের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে। এই সংজ্ঞা পরিবর্তনের জন্য গত জানুয়ারিতে চিঠি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এর আগে গত নভেম্বরে উচ্চ প্রযুক্তির মোটরসাইকেল আমদানির সুযোগ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিমামা)।
সিকেডি সংজ্ঞা পরিবর্তন করে গত ২৮ জানুয়ারি এসআরও জারি করে এনবিআর। গতকাল রোববার এটি প্রকাশ করে সংস্থাটি। আগে থেকেই সিকেডি সংজ্ঞায় ছিল ইঞ্জিন, গিয়ারবক্স একত্রে সংযোজিত, কিন্তু কার্বোরেটর ও ইনলেট পাইপ ইঞ্জিন থেকে আলাদা থাকবে। নতুন সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে, উচ্চ প্রযুক্তির মোটরসাইকেল ইলেকট্রনিক ফুয়েল ইনজেকশন, ফুয়েল ইনজেকশন এন্ট্রি-লক ব্রেকিং পদ্ধতির (ইএফআই, এফআই ও এবিএস) মডেলের ক্ষেত্রে ইনলেট পাইপ, মেনিফোল্ড, থ্রোটেল বডি, বক্স সংযোজিত থাকতে পারবে। ফ্রন্ট শক অ্যাবজরবার মেকানিজম সম্পন্ন ফ্রন্ট ফর্কের ক্ষেত্রে আলাদা করে আনার প্রয়োজন হবে না। সুইচ, হোচ, ব্রেক কেবলসহ সব কেবল, এইচইউ ইউনিট, ব্রেক ক্যালিপার, গ্রিপ সংযোজিত আনা যাবে। ব্রেক, ডিস্ক ও প্যানেল, ক্যালিপার এবং ফুয়েল ট্যাঙ্ক সম্পূর্ণ অবস্থায় আনতে পারবে। কেবল মেইন চেসিস আলাদা থাকবে। তবে এর বাইরে অন্য মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে এগুলো আলাদা আনতে হবে।
এ বিষয়ে দেশি মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা বলেছেন, দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদনের জন্য নীতিমালা করার পরে সংযোজন করা মোটরসাইকেল আমদানিতে এমন সুযোগ দিলে দেশি শিল্পের ক্ষতি হবে। যারা উদ্যম ও উদ্যোগ নিয়ে দেশে মোটরসাইকেল তৈরি করছেন, তাদের লাগাম টানা হচ্ছে। কারণ, এত কম পরিশ্রমে বেশি লাভ করার সুযোগ থাকলে দেশে কেন কারখানা স্থাপন করে মোটরসাইকেল তৈরি করবেন। এর ফলে দেশে উৎপাদনমুখী শিল্প নিরুৎসাহিত হবে। যে কোনো নীতিমালা করলে তা ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদি স্থায়ী হতে হবে। এটি না হলে বিনিয়োগ ও শিল্প স্থাপন বিঘ্নিত হবে।
নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, দেশি শিল্পের সহায়তায় নীতিমালা হওয়া উচিত। যাতে দেশে মোটরসাইকেল তৈরি বাড়ে। দেশে তৈরিতে কম শুল্ক্ক এবং সিকেডি ও সম্পূর্ণ অবস্থায় আমদানিতে বেশি শুল্ক্ক আরোপ করা উচিত। যেসব নীতি দেশি শিল্পে স্বার্থ রক্ষা করে না, সে বিষয়ে সরকারকে বিবেচনা করা উচিত। উচ্চ প্রযুক্তির মোটরসাইকেলের সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। এটা না হলে এই সুবিধার অপব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তিনি বলেন, বিশেষায়িত বা যেসব মোটরসাইকেল খুবই কম পরিমাণে বিক্রি হয়, সেগুলো আমদানিতে নীতিমালা শিথিল করতে পরে। সেটা হতে হবে দেশি শিল্পের স্বার্থ রক্ষা করে। সব প্রযুক্তির মোটরসাইকেল এ সুবিধা পেলে দেশি শিল্প ক্ষতির মুখে পড়বে। এনবিআর এমন কিছু করবে না, যেটা স্থানীয় শিল্পের ক্ষতি হয়। এ খাতে এখন দেশে অনেক কারখানা হয়েছে। এ মুহূর্তে আমদানিতে বড় সুবিধা দিলে হবে না। এতে শিল্প টিকে থাকা কঠিন হবে।
বিমামা সভাপতি ও উত্তরা মোটরসের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান, বলেন, মোটরসাইকেলের উন্নয়ন হয়েছে। আগের মোটরসাইকেলের সঙ্গে মিল নেই। সরাসরি ফুয়েল ইনজেক্ট করে এমন মোটরসাইকেল আমদানিতে সমস্যায় পড়তে হয়। এ জন্য সংজ্ঞার পরিবর্তনের জন্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, পুরোনো প্রযুক্তির মোটরসাইকেল দেশে তৈরি হয়। তা আমদানিতে সংজ্ঞায় পরিবর্তন হয়নি। কেবল উচ্চ প্রযুক্তির মোটরসাইকেল দেশে আনতে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এটি হলে নতুন প্রযুক্তি দেশে আসবে।
এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, ১৫০ সিসির বেশি উচ্চ প্রযুক্তির যেসব মোটরসাইকেল আমদানি হয়, তা দেশে আনতে জটিলতায় পড়তে হয়। এ কারণে উচ্চ প্রযুক্তির মোটরসাইকেল আমদানিতে সুবিধা চেয়েছেন তারা। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এনবিআর আমদানিতে সুবিধা দিয়েছে। এতে নতুন প্রযুক্তির মোটরসাইকেল সহজে আমদানি হবে। উৎস : সমকাল।
Leave a Reply