বিল্লাল হোসেন বাদল মোটরসাইকেল মেকানিক। ঢাকার দক্ষিণখানে তার সরাইখানাও রয়েছে। কিন্তু এই পরিচয়ের আড়ালে পুলিশের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের খাতায় তিনি ঢাকায় মোটরসাইকেলের বড় চোর। গাড়ি চুরি চক্রের সদস্যরাও তাকে এক নামেই ‘বাদল চোরা’ হিসেবে চেনেন। মাত্র ৬০ সেকেন্ডে তিনি মোটরসাইকেল চুরি করতে পারেন। তবে তার দলে রয়েছেন একাধিক সদস্য, জেলাতেও রয়েছেন চুরি আর চুরি করা মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য প্রতিনিধি। এভাবে গত দুই বছরে আড়াই শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি করেছে বাদলের চক্র।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ৩৫ বছর বয়সী বাদল ও তার সহযোগী সানাউল্লাহকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে চুরি করা ৬টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর তাদের রিমান্ডে নিলে ঢাকায় মোটরসাইকেল চুরি চক্রের বিস্তারিত তথ্য পায় ডিবি।
ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির উত্তরা বিভাগের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী কমিশনার শাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিল্লাল হোসেন বাদল রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় মোটরসাইকেল চোরচক্রগুলোর অন্যতম হোতা। টার্গেট করা মোটরসাইকেল সে মাত্র এক মিনিটেই চুরি করে। এর আগে তার দলের অপর সদস্যরা রেকি করে।’ ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মোটরসাইকেল চুরি করেই তা ঢাকার বাইরে মফস্বল এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এজন্য চুরির পর সহজে মোটরসাইকেল উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। বাদলের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন জেলায় চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রি করে। এজন্য তারা টাকা পায়।
গ্রেপ্তারের পর ডিবি হেফাজতে বিল্লাল হোসেন বাদল জানিয়েছেন, তার দলের দুইজন রেকি করে থাকেন। সুবিধাজনক স্থানে মোটরসাইকেল পেলেই তাকে খবর দেন। দলের অপর একজন সদস্য সেই মোটরসাইকেলটির তালা যাচাই করেন। নিজস্ব যন্ত্র দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই তারা তালা ভাঙতে পারেন। তবে বেশিরভাগ সময়ে মোটরসাইকেলের পাওয়ার সুইচের সংযোগ কেটে মিনিটখানেকের মধ্যেই মোটরসাইকেল নিয়ে চম্পট দেন তিনি। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও মোটরসাইকেল চুরি করে তা বিক্রি করে দ্রুত বড় লোক হওয়া তার টার্গেটে ছিল।
যেভাবে চোরচক্র গড়ে তোলেন বাদল : জিজ্ঞাসাবাদে বাদল জানিয়েছেন, তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে। ২০০৫ সালের দিকে বাড়ির কাছেই একটি বাজারে মোটরসাইকেল মেরামতের সরাইখানায় কাজ শেখেন তিনি। ২০১২ সালে ময়মনসিংহের ভালুকায় নিজেই মোটরসাইকেলের সরাইখানা দেন। তখনই ওই এলাকার মোটরসাইকেল চোর কবিরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপরই তাকে নিয়ে চোরাই মোটরসাইকেল কেনাবেচা শুরু করেন। একপর্যায়ে নিজের এলাকাতেই সরাইখানা দেন তিনি। সেখানে স্থানীয় এক চেয়ারম্যানের মোটরসাইকেল চুরির মামলার আসামি হয়ে এলাকা ছাড়েন। এরপর সেখান থেকে গাজীপুরের মাওনায় এসে জুয়ার ঘরে ফুটফরমাসের কাজ নেন। সেখানেই আবার গাড়ি চোরচক্রের উজ্জ্বল নামের এক সদস্যের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারা দুই বছর ধরে মোটরসাইকেল চুরি করতে থাকেন। এরপর পলাশ নামের আরেক চোরের সঙ্গে পরিচয়ের পর নিজেই দল গঠন করেন। ডিবি উত্তরা বিভাগের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮ সাল থেকে পলাশ, উজ্জ্বল ও সানাউল্লাহকে নিয়ে ঢাকায় মোটরসাইকেল চুরির বড় সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন বাদল। এই চক্রটি বাড্ডা, কালাচাঁদপুর, কুড়িল, খিলক্ষেত, উত্তরা, তুরাগ, দক্ষিণখান, উত্তরখানসহ আশপাশের এলাকায় মোটরসাইকেল চুরি করে। বাদলের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা থাকলে তিনি এত বছরে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
ডিবির উত্তরা বিভাগের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী কমিশনার শাহিদুল ইসলাম বলেন, বাদলকে জিজ্ঞাসাবাদে তার চক্রের বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। পাশাপাশি অন্য চক্রগুলোরও তথ্য মিলেছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply