নেতৃত্বের দখল নিয়ে বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রæপের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসসংযোগের ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিকসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় ১২জনকে আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল বেলা ১২টার দিকে শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পাশে মোটর মালিক গ্রæপের কার্যালয়ে কয়েকশ’ যুবক হামলা চালিয়ে ভাংচুর, কর্মীদের মারপিট, মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ, বাস ভাংচুরের ঘটনা ঘটায়। হামলায় পুলিশ-সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এদিকে সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করে হামলাকারিদের গ্রেফতার করা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের আল্টিমেটাম দিয়েছে।
জানা যায়, জেলা মোটর মালিক গ্রæপের কার্যালয়ে একটি পক্ষের কয়েকশত নেতাকর্মী একত্র হয়ে হামলা চালাতে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাধা দিলেও সেটি পেরিয়ে জেলা মোটর মালিক গ্রæপের কার্যলয়ে গিয়ে হামলা করে। পরে হামলাকারিরা ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস, কার্যালয়ের দরজা জানালা, তিনটি বাস ও টার্মিনালে থাকা ৬টি মোটর সাইকেলে ভাংচুর করে। এসময় ৬টি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসময় হামলাকারিরা লাঠিসোঠা দিয়ে বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করে। হামলায় কয়েকশত যুবক লাঠিসোঠা রড ও ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে। হামলায় গাজী টিভির ক্যামেরা পার্সন রাজু আহম্মেদ, এসবির কন্সটেবল মো: রমজান আলী, শ্রমিক আব্দুল আলীমসহ ১০ জন আহত হয়।
সূত্র জানায়, বগুড়া মোটর মালিক সমিতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। তার এক পক্ষে রয়েছেন সমিতির সাবেক আহŸায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন, অপর পক্ষে রয়েছেন সমিতির সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা শাহ মো. আখতারুজ্জামান ডিউক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া পৌর কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম। মালিক সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জটিলতা দেখা দিলে বিষয়টি উচ্চ আদালতে গড়ায়। সেখানে মঞ্জুরুল আলম মোহনের দায়ের করা মামলায় বগুড়া জেলা প্রশাসনকে সমিতির দায়িত্ব গ্রহণ করে নির্বাচন সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত চিঠির ভিত্তিতে গত ৬ ডিসেম্বর বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সালাহ উদ্দিন কাগজ-কলমে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু সমিতির কোনো মালামালসহ অন্যান্য কাগজপত্র মালিক গ্রæপের সভাপতি ডিউক ও সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম এর পক্ষের থেকে বুঝে পাননি। শহরের রাজাবাজার মূল কার্যালয় থেকে ইতিপূর্বেই সেসব মালামাল চারমাথা বাস টার্মিনাল সংলগ্ন অস্থায়ী কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়।
গত ৭ জানুয়ারি সমিতির প্রশাসক বগুড়ার এডিএম পুলিশ নিয়ে চারমাথার ওই কার্যালয়ে দায়িত্ব বুঝে নিতে গেলে ডিউক ও আমিনুলের অনুসারি বাস মালিক, শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে। পরে বিষয়টি নিয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ বিক্ষুব্ধ মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। এই ঘটনার প্রায় একমাস পর গতকাল মালিক গ্রæপের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
বগুড়া মোটর মালিক গ্রæপের সাধারণ সম্পাদক দাবি করে আমিনুল ইসলাম জানান, মঞ্জুরুল আলম মোহন এর নেতৃত্বে এই হামলা করা হয়েছে। সে সন্ত্রাসী নিয়ে এই ন্যাক্কারজনক হামলা করে মালিক, শ্রমিকসহ মালিক গ্রæপের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করেছে। হামলাকারিকে দ্রæত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় না নিলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বগুড়া জেলায় ধর্মঘট শুরু হবে।
বগুড়া মোটর মালিক গ্রæপের আহবায়ক দাবিদার মঞ্জুরুল আলম মোহন জানান, তিনি এসব জানেন না। মোটর মালিক গ্রæপের দ্ব›দ্ব নিয়ে তার নাম ব্যবহার করা তার নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় বগুড়া সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক যৌথ কমিটির উপদেষ্টা আব্দুল মান্নান আকন্দ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাতের মধ্যে হামলাকারি মঞ্জুরুল আলম মোহনকে গ্রেফতার করা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হবে।
Leave a Reply