চার লেনের ঢাকা-মাওয়া রোডে যানবাহনের গড় গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বা তার কিছু বেশিই হওয়ার কথা। যদিও বলা হচ্ছে, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ৫৫ কিলোমিটার পাড়ি দিতে সময় লাগবে ৪২ মিনিট। সেই হিসাবে যানবাহনের গড় গতি হয় প্রায় ৮০ কিলোমিটার।
মুশকিল হলো, এই গতির একটা রাস্তা আমাদের দেশের জন্য মহাবিপজ্জনক। এর অন্যতম কারণ হলো, খোদ আমাদের সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ এই গতির একটা মহাসড়ক ব্যবস্থাপনায় হয়তো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। প্রস্তুত নয় আমাদের ট্রাফিক বিভাগও। ট্রাফিক আইন বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান ও তার প্রয়োগেও সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ও ট্রাফিক পুলিশের রয়েছে যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা। অন্তত রাজধানীর ভিআইপি সড়কের মনগড়া ট্রাফিক নির্দেশিকা, অসংখ্য ভুল সংকেত ও চলমান ফিটনেসবিহীন যানবাহনের আধিক্য সে সাক্ষ্যই দেয়। নেহাত স্বল্পগতি ও ট্রাফিক জ্যাম থাকার কারণে রাজধানীর এই সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা সীমিত।

কিন্তু ঢাকা-মাওয়া সড়ক একটা দ্রুতগতির সড়ক। এই মহাসড়কের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনায় কর্তৃপক্ষ যদি উদাসীন হয়, তবে চালকের অজ্ঞতা মাত্রা ছাড়া হবে, এটাই স্বাভাবিক।
তাই এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে এই রাস্তায় মন্থর গতির বাহন কোনোটা চলছে প্রথম লেনে, কোনোটা দ্বিতীয় লেনে। আর দ্রুতগতির বাহনগুলো মাছের মতো এঁকেবেঁকে সাঁতরে লেন বদলাতে বদলাতে সেই মন্থর বাহনগুলোকে বিপজ্জনকভাবে অতিক্রম করছে!
যথারীতি লেন পরিবর্তনের সময় বেশির ভাগ বাহনই কোনো সংকেত দেয় না। হঠাৎ থামা ও লাইসেন্সবিহীন চালকের বেপরোয়া চালনা তো রয়েছেই।
পরিণতিতে এই মহাসড়কে দুর্ঘটনাগুলো হচ্ছে আরো ভয়ংকর ও প্রাণসংহারী।
সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের এখনই উচিত হবে—১. দ্রুতগতির মহাসড়কের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সড়ক নির্দেশিকা, সংকেত ও নিয়ম সম্পর্কে সম্যক বিদ্যা অর্জন করে সেই মতো লোকবল নিয়োগ করা। ২. উপযুক্ত ও আন্তর্জাতিক মানের সড়ক নির্দেশিকা ও ট্রাফিক সংকেত যথাযথভাবে স্থাপন করা। ৩. ট্রাক, বাস ও স্বল্পগতিতে চলা সব বাহনের জন্য ওভারটেক ছাড়া সর্ব বাঁয়ের লেন নির্দিষ্ট করে দেওয়া। ৪. গণমাধ্যমে নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিয়ে দ্রুতগতির সড়ক ব্যবহারের নিয়মাবলি ও তা অবশ্যপালন বিষয়ে চালকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা। ৫. গাড়ির ফিটনেস ও টায়ারের মান নিশ্চিত করা। ৬. পথচারীদের সড়কে অনুপ্রবেশ ও দৌড়ে রাস্তা পারাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। ৭. স্থায়ীভাবে ও দৈবচয়ন ভিত্তিতে এই সড়কে গাড়ির ফিটনেস ও চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করা ও অবৈধ যানবাহন ও লাইসেন্সবিহীন চালকের বাহন জব্দ ও উচ্চহারে জরিমানা প্রচলন করা।

মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকে যদি সর্বোচ্চ গুরুত্ব না দেওয়া হয়, তবে দ্রুতগতির এই মহাসড়ক এক আতঙ্কের ভিন্ন নাম হিসেবে আবির্ভূত হবে। দ্রুত গন্তব্যের বদলে এই সড়ক মানুষকে দ্রুত অনন্তের পথে পৌঁছে দেবে। সেই পরিণতি নিশ্চয়ই আমাদের কারোরই কাঙ্ক্ষিত নয়।
তেমন পরিণতির আগে দায়িত্ববান কর্তৃপক্ষের সচেতন হওয়ার এখনই সময়। এ নিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকলে এই মহাসড়কে অরাজকতা বাড়তেই থাকবে আর অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় মানুষ হারাবে তার নিকটতম স্বজন।
লেখক : স্থপতি
Leave a Reply