সারা দেশে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ড্রেজিং প্রকল্পের সেক্টরে নীরব বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে। ১৫টি নৌরুটে ৩১টি ড্রেজারের ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে এক হাজার ৮০০ কিলোমিটার নৌপথ। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দুই হাজার ৩৮৬ কিলোমিটার নৌপথের উন্নয়ন হবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ইতোমধ্যে বরিশাল-পটুয়াখালী নৌরুটসহ গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে নৌযান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি নদীর খননে উত্তোলনকৃত মাটি দিয়ে পাঁচ হাজার একর অকৃষি জমিকে কৃষিজমিতে রূপান্তর করা হয়েছে।
হাওরাঞ্চলে ১০ কিলোমিটার নিচু জায়গা ভরাট করে গবাদিপশু পালন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে। ৫৩টি নৌরুটের ১২ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের জন্য প্রথম পর্যায়ে ২৪টি নদী খনন প্রকল্পের আওতায় এই নৌপথ উদ্ধার করা হয়। এক হাজার ৯২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৯৯৭ লাখ ঘনমিটার মাটি অপসারণ করে দুই হাজার ৩৮৬ কিলোমিটার নৌপথ উদ্ধার করা হবে বলে বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়।
জানা গেছে, সারা দেশে অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্পের আওতায় ২০১১ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া মংলা-ঘষিয়াখালী (এমজি) চ্যানেল ড্রেজিং করে ২০১৫ সালে নৌযান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এই চ্যানেল দিয়ে বর্তমানে এক লাখ ৩৯ হাজারটি ভেসেল (বড় জাহাজ) ৮-১৪ ফুট গভীরতায় চলাচল করছে। বর্তমানে এ চ্যানেলে সর্বনি¤œ ১২ ফুট এবং জোয়ারের সময় ২০ ফুট পর্যন্ত গভীরতা থাকে এবং প্রস্থ ২০০-৩০০ ফুট রয়েছে।
এ বিষয়ে নৌবিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি ও বেসরকারি ড্রেজারের মাধ্যমে এই নৌপথ খননকাজ করা হচ্ছে। বর্তমানে ১৫টি রুটে ৩১টি ড্রেজার ড্রেজিং কাজে নিয়োজিত রয়েছে। ভৈরব, আত্রাই, দুধকুমার, নরসিংদী জেলার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও আড়িয়াল খাঁ নদ খনন করা হয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া এমজি চ্যানেল খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে এনে কার্গো তথা সব রকম নৌযান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর সূত্র জানায়, প্রকল্পটি ২০১২ সালে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। ২০১২ সালের জুলাই ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। চলতি বছর জুনে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের আওতায় ২৪টি নৌপথে মোট ৯৯৭ লাখ ঘনমিটার মাটি খনন করা হবে। চলতি অর্থবছরে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি ড্রেজার দ্বারা ৬০১ দশমিক ৬৫ লাখ ঘনমিটার, বিআইডব্লিউটিএর নিজস্ব ড্রেজার দিয়ে ৮৩ দশমিক ৬৭ লাখ ঘনমিটার এবং এক্সকাভেটর দ্বারা ৪৬ দশমিক ৮০ লাখ ঘনমিটার অর্থাৎ সর্বমোট ৭৩২ দশমিক ১২ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করে এক হাজার ৮০০ কিলোমিটার নৌপথ নাব্য করা হবে।
গত ১৯ জানুয়ারি বরিশাল সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে বিআইডব্লিউটিএ ‘বরিশাল বিভাগের নদীগুলোর নাব্যতা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা গ্রাস, জলাভূমি, সেচ ও ল্যান্ডিং সুবিধাদি বৃদ্ধি করে নদী ব্যবস্থাপনার সম্ভাব্যতা যাচাই’ শীর্ষক সমীক্ষা কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply