‘বাসের প্রায় সিটেই যাত্রী ছিল। রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকার কল্যাণপুর থেকে বাসটি ছাড়ে। ঢাকা ছাড়ার পর থেকেই চালক বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন। আমিসহ অন্য যাত্রীরা একাধিকবার সাবধানে গাড়ি চালাতে অনুরোধ করি। কিন্তু সেদিকে কর্ণপাত করেননি চালক। ভোররাতে বগুড়ার ফুড ভিলেজে চা-নাশতার বিরতির সময়ও তাঁকে সাবধান করেন যাত্রীরা। এর পরও চালক বাসটি বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন। শেরপুর উপজেলার কলেজ রোডে প্রচণ্ড আওয়াজ শুনি। দেখি বাসটি মহাসড়কে গড়াগড়ি খাচ্ছে। বাসজুড়ে শুরু হয় চিৎকার-চেঁচামেচি। পরে কী হয়েছে জানি না। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি শেরপুর হাসপাতালে। পা-মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছি।’
কথাগুলো বলছিলেন পাবনা সদর উপজেলার বাসিন্দা ইয়াকুব আলী (৪২)। গতকাল রবিবার ভোরে বগুড়ার শেরপুর শহরের কলেজ রোডে বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় বাসটির যাত্রী তিনি। বর্তমানে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইয়াকুব বলেন, বেপরোয়া গতিতে বাসটি চালানোর কারণেই ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বাসটির যাত্রী ফিরোজ আলী অভিযোগ করেন, ‘বাসের চালক পাশের সিটে ঘুমাচ্ছিলেন। আর তাঁর সহকারী বাসটি চালাচ্ছিলেন। তাই যাত্রীরা বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও তিনি কথা শোনেননি।’
রাতে যাত্রীবাহী বাসটি ঢাকা ছাড়ার পর থেকেই বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন চালক। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় অনেক যাত্রীই বারবার তাঁকে সাবধানে গাড়ি চালাতে অনুরোধ করে; কিন্তু তিনি তাতে কান দেননি। শেষে যাত্রীদের আশঙ্কাই ফলেছে। বগুড়ার শেরপুরে পাথরবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে বাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে গাড়ি দুটির দুই চালকও আছেন। আছেন বাসচালকের সহকারী ও স্বামী-স্ত্রী। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে বাসটির অন্তত ১৫ জন যাত্রী। গতকাল রবিবার সকাল ৬টার দিকে শেরপুর উপজেলা শহরের কলেজ রোড নামক স্থানে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
এদিকে বেপরোয়া গতিই দুর্ঘটনাটির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বানিউল আলম বলেন, যাত্রীবাহী বাসটির গতি ছিল বেপরোয়া। তাই বিপরীতগামী পাথরবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে বাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
Leave a Reply