সবার দৃষ্টি আকাশে। এই বুঝি দৃষ্টিগোচর হবে সুদূর কানাডার প্রখ্যাত উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডি হ্যাভিল্যান্ড বোম্বার্ডিয়ার অ্যারোস্পেস থেকে যোজন যোজন মাইল পথ পাড়ি দিয়ে উড়ে আসা বহুল প্রতীক্ষিত ‘শ্বেতবলাকা’ নামের নতুন ড্যাশ৮-৪০০ উড়োজাহাজ।
কয়েক মিনিট নীরবতা আর অপেক্ষায় কেটে যায়। হঠাৎ উপস্থিত কেউ একজন চিৎকার করে বলে উঠলেন- ‘ওই তো দেখা যাচ্ছে শ্বেতবলাকা।’ নড়চড়ে বসলেন উপস্থিত কর্মকর্তাসহ সকলে। বলতে না বলতেই দ্রুতগতিতে ল্যান্ডমার্ক স্পর্শ করে শ্বেতবলাকা। অবতরণের পর উড়োজাহাজটিকে ওয়াটার ক্যানন স্যালুট দিয়ে স্বাগত জানানো হয়।
শুক্রবার (৫ মার্চ) সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমনই এক দৃশ্যপটের অবতারণা হয়। এর মধ্যদিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হলো আরেকটি নতুন ড্যাশ৮-৪০০ উড়োজাহাজ।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এমপি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে নতুন উড়োজাহাজটি গ্রহণ করেন। এ সময় এভিয়েশন ফ্যানফেয়ারের অংশ হিসেবে উড়োজাহাজটিকে ওয়াটার ক্যানন স্যালুট দিয়ে স্বাগত জানানো হয়।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান মো. সাজ্জাদুল হাসান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল প্রমুখ।
উড়োজাহাজটি গ্রহণের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। দেশের সকল সেক্টরের উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। বিমানের বহরকে আধুনিকায়ন ও সেবার মান বৃদ্ধি করা হয়েছে। তার অংশ হিসেবেই নতুন উড়োজাহাজ ‘শ্বেতবলাকা’ দেশে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের আগে এই মার্চ মাসে উড়োজাহাজটি দেশে পৌঁছানোয় আমরা আনন্দিত। আশা করি- আগামী ১৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ‘আকাশ তরী’ ও ‘শ্বেতবলাকা’ এর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন।
নতুন এই উড়োজাহাজের নামকরণ করেছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার সমন্নয়ে তৈরি উড়োজাহাজটিতে আসন রয়েছে ৭৪টি। উড়োজাহাজটি বিমান বহরে যুক্ত হওয়ার ফলে বিমান তার অভ্যন্তরীণ ও স্বল্প দূরত্বের রুটে ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি করবে। ফলে এই রুটেগুলোতে বিমান তার যাত্রীদের আরও উন্নত সেবা দিতে সক্ষম হবে।
কানাডার বিখ্যাত এয়ারক্রাফট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডি হ্যাভিল্যান্ড নির্মিত অত্যাধুনিক নতুন ‘ড্যাশ ৮-৪০০’ ৭৪ সিট সম্বলিত উড়োজাহাজ। পরিবেশবান্ধব এবং অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ এ উড়োজাহাজে রয়েছে হেপা ফিল্টার প্রযুক্তি, যা মাত্র ৪ মিনিটেই ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসসহ অন্যান্য জীবাণু ধ্বংসের মাধ্যমে উড়োজাহাজের অভ্যন্তরের বাতাসকে সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ করে। যাত্রীদের করে তোলে অধিক সতেজ ও নিরাপদ। এছাড়াও এ উড়োজাহাজে বেশি লেগস্পেস, এল ই ডি লাইটিং এবং প্রশস্ত জানালা থাকার কারণে ভ্রমণ হয়ে উঠবে অধিক আরামদায়ক ও আনন্দময়।
বাংলাদেশ ও কানাডা সরকারের মধ্যে জি টু জি ভিত্তিতে কেনা তিনটি ড্যাশ ৮ প্লেনের প্রথমটি ‘ধ্রুব তারা’ গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর ও দ্বিতীয়টি ‘আকাশ তরী’ চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিমান বহরে যুক্ত হয়। সবশেষ এলো ‘শ্বেতবলাকা’।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নতুন উড়োজাহাজ ‘শ্বেতবলাকা’ বহরে যুক্ত হওয়ার পর উড়োজাহাজের সংখ্যা হবে ২১টি। এরমধ্যে ১৬ টি নিজস্ব এবং ৫টি লিজ। নিজস্ব ১৬টির মধ্যে বোয়িং৭৭৭-৩০০ ইআর চারটি, বোয়িং ৭৮৭-৮ চারটি, বোয়িং ৭৮৭-৯ দুটি, বোয়িং ৭৩৭ দুটি এবং ড্যাশ-৮ চারটি।
Leave a Reply