দেশের বড় নদ-নদীগুলো ধীরে ধীরে নাব্য হারাচ্ছে বলে টেকসই ব্যবস্থাপনায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসাবে কেনা হচ্ছে ৩৫টি ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি। এতে ব্যয় হবে ৬ হাজার ১৪২ কোটি ১০ লাখ টাকা। ‘ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও বাংলাদেশের টেকসই নদী ব্যবস্থাপনার জন্য ৩৫টি ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ক্রয়’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) যে কোনো বৈঠকে তা উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদ্য সাবেক সদস্য (সাবেক সচিব) জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রতি বছর প্রায় ৬১৭ লাখ ৫৫ হাজার ঘনমিটার মাটি ড্রেজিং করা সম্ভব হবে। এতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী, খাল জলাশয়ের ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ের ক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে দেশের অধিকাংশ ভূমিই প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি নদীর পাড় ভাঙনের মুখে পড়ে। বিশেষভাবে পাহাড়ি নদী ও হাওর এলাকায় বর্ষার শুরুতেই ঢল নামে। এ কারণে বিপুল সম্পদ হুমকির মুখে পড়ে। এ প্রেক্ষিতে ১৮টি মাঝারি নদী স্বল্প সময়ে (৫ বছর), মধ্যম মেয়াদে (১০ বছর) ও সব বড় নদী (পদ্মা, মেঘনা, যমুনা) দীর্ঘ মেয়াদে (১৫ বছর) প্রায় এক হাজার কিলোমিটার ড্রেজিং করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু খাল বিশেষ করে হাওর ও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট নদী এবং বড় নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হলে নাব্য রক্ষায় মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং প্রয়োজন। ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও টেকসই নদী ব্যবস্থাপনার জন্য ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। ওই সমীক্ষার আলোকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- দুটি ট্রেইলিং সাকশন হুপার (ক্যাপাসিটি ৪০০০ ঘনমিটার) কেনা। এছাড়া কেনা হবে দুটি ৩৬ ইঞ্চি সামশন ড্রেজার (ইনবিল্ড, বুস্টার, সব এক্সেসরিজসহ)। আরও তিনটি ৩০ ইঞ্চি, আটটি ২৬ ইঞ্চি, আটটি ২০ ইঞ্চি, আটটি ১৮ ইঞ্চি ও চারটি ১২ ইঞ্চি কাটার সাকশন ড্রেজার কেনা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, কৃষি উন্নয়ন ও পণ্য পরিবহণের স্বার্থে এদেশের নদীগুলো সচল রাখা জরুরি। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পানিসম্পদ সেক্টরের অন্যতম উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে নদী, খাল ও জলাশয় ড্রেজিং করা। এর সঙ্গে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির সামঞ্জস্য রয়েছে। কেননা শুধু ড্রেজিং দিয়ে হবে না। সঙ্গে সঠিক ব্যবস্থাপনার উদ্যোগও থাকতে হবে।
Leave a Reply