চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২২৪টি প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে ফাস্টট্র্যাকসহ ২৪টি মেগাপ্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে উন্নয়ন খাতে ২৭ হাজার ৩০৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা দেওয়ার প্রাক্কলন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আর জিওবি খাতে যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে, তাতে প্রকল্প সাহায্য খাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না বলে আশঙ্কা করছে বিভাগটি। বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের কাছে আধাসরকারি পত্রে (ডিও লেটার) এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বাজেটের কোনো কিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তাই প্রয়োজনে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে।
সূত্র মতে, আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রাক্কলন অনুযায়ী এই বিভাগের উন্নয়ন খাতে ২৭ হাজার ৩০৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকার সংস্থান রয়েছে। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে আট হাজার ৯৮২ কোটি আট লাখ টাকা পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। আর আগামী অর্থবছরে জিওবি খাত থেকে দেওয়া হতে পারে ১৮ হাজার ৩২৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর সংশোধিত বাজেটে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৫ হাজার ৬৬৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রাক্কলন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে নিজস্ব অর্থ বা জিওবি খাতে ১৮ হাজার ৩২৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য খাতে সাত হাজার ৩৪২ কোটি ২৫ লাখ টাকার সংস্থান রয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বলছে, চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রাক্কলন অনুযায়ী প্রকল্প সাহায্য বরাদ্দ এক হাজার ৬৩৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বেশি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু আনুপাতিক হারে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে জিওবি খাতের বরাদ্দ বাড়ানোর পরিবর্তে কমানো হয়েছে। প্রকল্প সাহায্য খাতের বরাদ্দ ব্যয় করতে ন্যূনতম ৩৫ শতাংশ ম্যাচিং ফান্ড হিসেবে জিওবি খাতে বরাদ্দ রাখতে হয়। এ ছাড়া প্রকল্প সাহায্য খাতের বিপরীতে ভ্যাট/আইটি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক বাবদ জিওবি বরাদ্দ নিশ্চিত করার প্রয়োজন পড়ে। এটি বাদেও প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে প্রতিবছর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য জিওবি খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজন হয়।
অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে দেওয়া ডিও লেটারে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের স্বাস্থ্যসচিব বলেছেন, এই বিভাগের আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর মাঠ পর্যায়ে প্রকৃত চাহিদা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২২৪টি প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের স্বার্থে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে জিওবি খাতে ২৬ হাজার ৬৫৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন আছে। এমটিবিএফ বাজেট প্রাক্কলনের তুলনায় জিওবি খাতে আরো আট হাজার ৩৩২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার চাহিদা রয়েছে। পক্ষান্তরে প্রকল্প সাহায্য খাতে চাহিদা মোতাবেক জিওবি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলে সর্বোচ্চ সাত হাজার ৫৯৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা চাহিদা রয়েছে। এটি এ খাতে বাজেট প্রাক্কলনের তুলনায় এক হাজার ৩৮৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা কম। চাহিদা মোতাবেক জিওবি অর্থ দেওয়া না গেলে প্রকল্প সাহায্য খাতে অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে না। তাই আগামী অর্থবছরে উন্নয়ন খাতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অনুকূলে জিওবি খাতে নির্ধারিত বরাদ্দের অতিরিক্ত আট হাজার ৩৩২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রকল্প সাহায্য খাতে এক হাজার ৩৮৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বরাদ্দ কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। উৎস : কালের কণ্ঠ।
Leave a Reply