মৃতপ্রায় মোংলা বন্দরকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচল করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, মোংলা বন্দরটি গত বিএনপি সরকারের আমলে মৃতপ্রায় বন্দরে পরিণত হয়। প্রধানমন্ত্রী মৃতপ্রায় মোংলা বন্দরকে জীবিত করেছেন। প্রায় ১৫০ কিলোমিটার নৌ চ্যানেল ড্রেজিং করে ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ এ বন্দরে প্রবেশ করাতে তিনিই উদ্যোগ নিয়েছেন। ফলে আগামী দিনের উন্নত বাংলাদেশ তৈরির পথযাত্রা শুরু হলো। অধিক গভীরতার বিদেশি জাহাজ প্রবেশ করাতে মোংলা বন্দরে শনিবার ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী সারাবিশ্বে বাংলাদেশকে আলোকিত করে তুলছেন জানিয়ে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশকে আলোকিত করেছিলেন। তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বে বাংলাদেশকে আলোকিত করে তুলছেন। প্রধানমন্ত্রী সাহসী নেতৃত্ব দিয়ে পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করছেন। মর্যাদার জায়গায় নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত স্বীকৃতি লাভ করেছে, যা আমাদের অহঙ্কার ও গর্বের। নৌ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, মোংলা বন্দরে ইতোমধ্যে ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। মোংলা বন্দরের সঙ্গে রেললাইন যুক্ত হচ্ছে, বন্দর চ্যানেলে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে এখানে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলছে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও মজবুত হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতিসহ অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ড্রেজিং করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে বন্দরের বিভিন্ন ধরনের হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ, অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং ড্রেজিং করার জন্য নানাবিধ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় করে মোংলা বন্দরের আউটার বারে ড্রেজিং করা হয়েছে। আউটার বারে ড্রেজিংয়ের ফলে বন্দরের অ্যাঙ্কোরেজ এলাকা পর্যন্ত ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ অনায়াসে আসতে পারবে। ইতোমধ্যে ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ আসা শুরু করেছে। এতে করে বন্দরে আগত জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি ও বন্দরের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ইনার বারে ড্রেজিং সমাপ্ত হওয়ার পর বন্দরে আগত জাহাজের টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম কমে যাবে, পণ্য পরিবহন খরচ সাশ্রয় হবে। মোংলা বন্দরে জাহাজের সংখ্যা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে, যা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নসহ দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। মোংলা বন্দর ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখবে, যা বর্তমান সরকারের ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ১৩১ কিলোমিটার উজানে পশুর নদীর তীরে মোংলা বন্দর অবস্থিত। পশুর চ্যানেলের নাব্যতা সঙ্কটের কারণে মোংলা বন্দরের জেটিতে ৭ দশমিক ৫ মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হতো না। ফলে এসব জাহাজ প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার খালাস করে ড্রাফট কমিয়ে মোংলা বন্দরে আসত। এতে মোংলা বন্দরে কন্টেইনার পরিবহনের খরচ ও সময় বৃদ্ধি পায়। মূলত এ কারণেই কন্টেইনারাইজড মালামাল আমদানি-রফতানিতে ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করতেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরেও সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডেল করা হচ্ছে। সে বিবেচনায় এই ড্রেজিং করা হলে মোংলা বন্দরেও সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডেল করা সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম বন্দর ও মোংলা বন্দরের ড্রাফটের কোনো পার্থক্য থাকবে না এবং মোংলা বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের উপযুক্ত বিকল্প বন্দরে পরিণত হবে।
এ সময় নৌ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, উপমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য বেগম হাবিবুননাহার, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা, সদস্য (হারবার ও মেরিন) ইমতিয়াজ হোসেন, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ও চ্যানেল খননের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না সিভিল করপোরেশনের বাংলাদেশ প্রধান কি চ্যাং গিলাইং। পরে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেন এবং ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় অন্যদের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply