তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট
করোনায় লকডাউনের সময়ে সরকারি ড্রাইভারদের অবৈধভাবে ওভারটাইমের টাকা গ্রহণ ও পরিশোধের সঙ্গে জড়িত ড্রাইভার এবং কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এ কমিটি করে ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে হলফনামা আকারে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ২৭ জুন এ ব্যাপারে পরবর্তী আদেশের জন্য ধার্য করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের জনস্বার্থে দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গতকাল বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং মো. কামরুল হোসেন মোল্লার বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একই সঙ্গে লকডাউনের সময় সরকারি ড্রাইভারদের মাসিক ২৫০ ঘণ্টা করে ওভারটাইম দেখিয়ে অবৈধভাবে অর্থ প্রদান বিষয়ে তদন্ত এবং সেই অর্থ পুনরুদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা প্রদান এবং এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনবহির্ভূত হবে না এবং বিবাদীদের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে রুল জারি করা হয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, সড়ক ও জনপথ সচিব, অর্থ সচিব, মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক, পরিবহন পুলের অতিরিক্ত সচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার।
পরে ব্যারিস্টার পল্লব জানান, করোনাকালে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয় এবং সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সব ধরনের যানবাহন বন্ধ ছিল। গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত পুরো দেশে লকডাউন ছিল। জুলাই মাসের প্রথম দিকে সীমিত আকারে সরকারি অফিস আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। যেহেতু করোনাকালীন অফিস-আদালত বন্ধ ছিল সেহেতু সরকারি ড্রাইভারদের ওভারটাইম করার কোনো সুযোগই ছিল না। অথচ বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী অন্য সময়ের মতো লকডাউনের সময়েও প্রত্যেক ড্রাইভার প্রতিমাসে ২৫০ ঘণ্টা ওভারটাইমের জন্য বেতনভাতা নিয়েছেন। এসব ড্রাইভার প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার অধীনে গাড়ি চালিয়ে থাকেন এবং ওভারটাইম প্রত্যয়নের জন্য প্রত্যেক সরকারি অফিসার একটি প্রত্যয়নপত্র দিয়ে থাকেন। যার ভিত্তিতে ওভারটাইমের অর্থ পরিশোধ করা হয়। লকডাউনের সময় সরকারি কর্মকর্তারা তাদের ড্রাইভারদের দায়িত্ব পালনের প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে ওভারটাইম ডিউটির কথা উল্লেখ করা হয়নি। অথচ সরকারি পরিবহন বিভাগ থেকে প্রত্যেক ড্রাইভারের করোনাকালীন লকডাউনের সময় ২৫০ ঘণ্টা ওভারটাইমের বেতনভাতা ছাড় করা হয়েছে।
এভাবে ওভারটাইম না করেও ড্রাইভাররা সরকারি রাজস্ব থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করেছেন, যা শুধু বেআইনি নয় বরং অনৈতিক ও সরকারি চাকরি আইনের পরিপন্থী এবং সেই সঙ্গে দ-বিধি অনুযায়ী প্রতারণা এবং বিশ্বাসভঙ্গের শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অন্যদিকে যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ড্রাইভারকে ওভারটাইম না করা সত্ত্বেও প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন তারা প্রত্যেকেই দ-বিধি এবং সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়ে কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়টি তদন্ত করে পরিশোধিত টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট ড্রাইভার এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছিল। বিবাদীরা কোনোরকম পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় মানবাধিকার সংগঠনটির পক্ষে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রিট করেন।
Leave a Reply