বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম ধমনি সুয়েজ খালে আটকা পড়েছে কোয়ার্টার মাইলের জাহাজ ‘এভার গিভেন’। এর ফলে দুই শতাধিক জাহাজের ট্রাফিক জ্যাম দেখা দিয়েছে এবং এ অবস্থা স্বাভাবিক হতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। সিএনএন বলছে, গত সপ্তাহে এভার গিভেন সুয়েজ খালে আটকা পড়ার পর বৈশি্বক সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দেশে দেশে ব্যায়ামের উপকরণ, পনিরসহ বিভিন্ন পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।চাহিদা মেটাতে না পেরে দামও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সুয়েজ খালের অচলাবস্থা দীর্ঘ হলে পশ্চিম এবং পূর্বের দেশগুলোর যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, ব্যবসায়ীরা সংকটে পড়বেন। ইতিমধ্যে বন্দরে কনটেইনার সংকট দেখা দিয়েছে, ধারণক্ষমতার চেয়ে ভিড় বাড়ছে।
এভার গিভেনের কারণে এশিয়া থেকে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় ভোগ্যপণ্য সরবরাহে দেরি হচ্ছে। এর বিপরীতে এসব অঞ্চল থেকে কৃষিপণ্য পাচ্ছে না এশিয়ার দেশগুলো। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত তেল ট্যাংকারসহ ২৩৭টি জাহাজ বিভিন্ন কনটেইনার নিয়ে খালটি পারের অপেক্ষায় রয়েছে, যা বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় ১২ শতাংশ।
বিশ্বের বৃহৎ কারিগরি সহযোগিতার ফার্ম সিএইচ রবিনসনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বব বিয়েস্টারফিল্ড বলেন, ‘সরবরাহ ব্যবস্থায় এমন বিশৃঙ্খলা আমি আগে কখনো দেখিনি। সুয়েজ খাল বন্ধে নিশ্চিতভাবেই আকাশ, সাগর ও সড়ক পরিবহনব্যবস্থায় প্রভাব পড়বে। সত্যিকার অর্থেই এমনটি অপ্রত্যাশিত।
পণ্য পরিবহনবিষয়ক জার্নাল লয়েডস লিস্ট বলছে, সুয়েজ খালে এভার গিভেন আটকে যাওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ৪০ কোটি ডলারের ক্ষতি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পথ পীত সাগর ও ভূমধ্যসাগরকে সংযুক্ত করেছে সুয়েজ খাল। লয়েডস লিস্ট জানায়, এই খালের পশ্চিম দিক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫১০ কোটি ডলার ও পূর্ব দিক দিয়ে ৪৫০ কোটি ডলারের পণ্য পরিবহন করা হয়।
গত মঙ্গলবার জাহাজটি সুয়েজ খালের তলানীর সঙ্গে আটকে যায়। এটি সুয়েজ খালের মাঝ বরাবর আটকে যাওয়ায় দুদিক থেকে আর কোনো জাহাজ চলাচল করতে পারছে না। তাইওয়ানের কোম্পানি এভার গিভেন মেরিন জাহাজটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। এটির দৈর্ঘ্য পাঁচটি ফুটবল মাঠের সমান, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মালবাহী জাহাজের একটি। দুই লাখ টনের এই জাহাজে একসঙ্গে ২০ হাজার কনটেইনার পরিবহন করা যায়। পানামায় নিবন্ধনকৃত এভার গিভেন চীন থেকে নেদারল্যান্ডসে পণ্য পরিবহন করছিল। নেদারল্যান্ডসের বোসকালিস কোম্পানি জাহাজটিকে মুক্ত করার চেষ্টা করছে। এ কাজে কত সময় লাগবে তা বলার সময় এখনো হয়নি বলে বোসকালিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিটার বেরদোওস্কি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে, কয়েক সপ্তাহও লেগে যেতে পারে। ’
শিপ-ট্র্যাকিং সফটওয়্যারগুলো দেখিয়েছে, এভার গিভেনের চারপাশে পাঁচটি টাগবোট আছে এবং আরও তিনটি জাহাজটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এত সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও গত ২৪ ঘণ্টায় এটি আগের অবস্থান থেকে খুব একটা সরেনি।
Leave a Reply