বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পণ্য আটকা পড়েছে চারটি ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে। সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কার কলম্বো, মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং ও তানজুংগ পেলিপাস—এই চার বন্দরে জাহাজজটের কারণে ব্যবসায়ীদের অন্তত ১৮ হাজার কনটেইনার পড়ে আছে। কাঙ্ক্ষিত জাহাজ না পাওয়ায় ২০ দিন ধরে দেশমুখী করা যাচ্ছে না এসব কনটেইনার। এসব কনটেইনারে থাকা পণ্যের বেশির ভাগই সুতা, শিল্প-কারখানার কাঁচামাল এবং বাণিজ্যিক ও স্ক্র্যাপ পণ্য। যথাসময়ে এসব পণ্য আনতে না পারায় কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আর বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা।
মেডিটেরিয়ান শিপিং কম্পানির (এমএসসি) সহকারী মহাব্যবস্থাপক আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘কলম্বো বন্দরে আমাদের শিপিং লাইনের অন্তত ১০ হাজার পণ্যভর্তি কনটেইনার আছে। তবে সিঙ্গাপুরে আমাদের তেমন পণ্য আটকে নেই। মূলত এই বন্দরে জাহাজজটের কারণে আমরা সঠিক সময়ে পণ্য জাহাজীকরণ করতে পারিনি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আটকে থাকা এসব পণ্য চট্টগ্রামে আনতে আমরা দুটি বিশেষ জাহাজ এমএসসি এমিলি ও এমএসসি কাইমিয়া বরাদ্দ দিয়েছি। এর মধ্যে এমএসসি এমিলি শনিবার কলম্বো বন্দর থেকে রওনা দিয়েছে। জাহাজগুলো অনটাইমে চালাতে পারলে আটকে থাকা পণ্য দ্রুত চলে আসবে।’
বিশ্বের শীর্ষ শিপিং লাইন মায়ের্কসর এক কর্মকর্তা বলছেন, ‘ট্রান্সশিপ মেন্ট বন্দরে আমাদের অনেক পণ্য আছে। নিয়মিত জাহাজেই সেগুলো দেশে আসছে। সমস্যা জটিল আকার ধারণ করবে যদি ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া লকডাউনে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি না হয়।’
হুন্দাই শিপিংয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বেশির ভাগ জাহাজ কম্পানি নতুন পণ্য বুকিং নিচ্ছে নিয়ন্ত্রিতভাবে। ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোতে আটকে থাকা পণ্য সরাতেই তারা অগ্রাধিকার দিচ্ছে। জট কাটলে নতুন বুকিং নেবে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নতুন নির্বাচিত পরিচালক মুনতাসির রুবাইয়াত বলেন, যে পরিমাণ পণ্য আটকা পড়েছে সেসব দ্রুত চট্টগ্রামে আনতে কাঙ্ক্ষিত জাহাজ বা বন্দরে প্রবেশের উপযোগী জাহাজ পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু জাহাজ পাওয়া গেলেও সেগুলো উচ্চ মাসুল চাইছে। সে জন্য অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও উচ্চ ভাড়ার কারণে জাহাজ বুকিং দিতে পারছে না।
জানা গেছে, ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকা থেকে কনটেইনার ভর্তি আমদানি পণ্য সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে আনা সম্ভব হয় না। নাব্যতা সংকটের কারণে বড় আকারের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ভিড়তে পারে না। এ কারণে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোতে পণ্য নামিয়ে সেখান থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট জাহাজ বা ফিডার জাহাজে করে কনটেইনারগুলো চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে আনা হয়। একইভাবে রপ্তানি পণ্য ভর্তি কনটেইনারও চট্টগ্রাম থেকে ছোট জাহাজে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে যায়; সেখান থেকে বড় বা মাদার ভেসেলে ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকায় যায়। ফলে কনটেইনার ভর্তি আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশ ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোর ওপর নির্ভরশীল।
এদিকে বেশ কয়েক মাস ধরেই সেই বন্দরগুলোতে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের জাহাজজট। এর নেতিবাচক প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্য কম আসছে।
গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি এম এ সালাম বলেন, আমদানি পণ্য জাহাজীকরণ থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানো, কারখানায় নেওয়া; সেখানে উৎপাদনের পর আবার নির্ধারিত সময়ে রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ এবং ক্রেতার কাছে পৌঁছানো—এ রকম একটি সাইকেল আছে। এর যেকোনো একটি অংশে ব্যাঘাত ঘটলেই পুরো প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। তিনি আরো বলেন, ‘ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোতে জটের কারণে শিপিং লাইনগুলো বাড়তি মাসুল আরোপ করেছে। এর পরও সঠিক সময়ে আমরা পণ্য পাইনি। ফলে বাড়তি মাসুল গুনতে হয়েছে; আবার পণ্য উৎপাদনেও ব্যাঘাত ঘটেছে। এখনো এর প্রভাব কাটেনি।’ উৎস: কালের কণ্ঠ।
Leave a Reply