দেশের প্রধান বন্দর ও জাতীয় অর্থনীতির হৃৎপি- হিসেবে চিহ্নিত চট্টগ্রাম বন্দরের আজ ১৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের এ গৌরবোজ্জ্বল সময়ে করোনা পরিস্থিতিজনিত কারণে এবার এ দিবস কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া অনাড়ম্বরভাবে পালন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল এম শাহজাহান। তিনি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক শুভেচ্ছা বার্তায় বন্দর ব্যবহারকারী, কর্মকর্তা কর্মচারী, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছেন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিবসের প্রাক্কালে শনিবার চবক প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের আমদানি ও রফতানির ৯২ শতাংশেরও অধিক পণ্য এবং ৯৮ শতাংশ কনটেনারজাত পণ্য হ্যান্ডিলিং করে থাকে। ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী কোভিড পরিস্থিতিতেও এই বন্দর ২৮ লক্ষাধিক কন্টেনার হ্যান্ডেল করেছে। ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দর ১০০টি কন্টেনার বন্দরের তালিকায় ৯৮তম অবস্থান নিয়ে নিজের স্বীকৃতি অর্জন করে। মাত্র ১১ বছরে ৪০ ধাপ এগিয়ে ২০২০ সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর ৫৮তম অবস্থানে উন্নীত হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের এই অর্জন বর্তমান সরকারের চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নেরই প্রতিফলন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, জাতীয় অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্ম শতবর্ষে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন স্বল্প-মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্প বাস্তবায়নে বন্দর কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর। তাছাড়া একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বন্দরের আধুনিকায়ন, যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণ ও নিউমুরিং ওভার ফ্লো ইয়ার্ড নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। ইতিমধ্যে পতেঙ্গাস্থ লালদিয়াচর এলাকায় বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ৫২ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। উক্ত এলাকায় বন্দর সুবিধাদি বৃদ্ধির বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হচ্ছে।
২০২০ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে আগত জাহাজের সংখ্যা ছিল ৩৬৬টি, কন্টেনার হ্যান্ডিলিং ২,৪৯,৬৬৯ টিইইউস, কার্গো হ্যান্ডিলিং ১০২৬৪৪০২ মে.টন। ২০২১ সালের মার্চ মাসে তা যথাক্রমে জাহাজের সংখ্যা ছিল ৩৭৬টি, কন্টেনার হ্যান্ডিলিং ২,৬৯,৪৪৬ টিইইউস, কার্গো হ্যান্ডিলিং ১১০৪২৮১৮ মে.টন। কন্টেনার ও কার্গো হ্যান্ডিলিং-এ প্রবৃদ্ধি প্রায় ৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডিলিং-এ ২ দশমিক ৭ শতাংশে। কোভিড-১৯ এর কারণে উন্নত বিশ্বের অনেক বন্দরেরই কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হলেও চট্টগ্রাম বন্দর ২৪/৭ চালু ছিল। চট্টগ্রাম বন্দর কোভিডের ঢেউয়ের সময়কালে প্রায় ডেলিভারি শূন্য অবস্থা হতে অত্যন্ত অল্প সময়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছিল। বিগত বছরের অভিজ্ঞতা কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা এবং বন্দরের অপারেশন স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করছে।
বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর এক কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিকালীন চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকগণ দেশের সাপ্লাই চেন নির্বিঘœ রাখার স্বার্থে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ২৪/৭ কাজ করে যাচ্ছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বিগত বছরে এ বন্দরের যে কয়েকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য তারমধ্যে রয়েছে, বহির্নোঙ্গরে শূন্য পাইরেসি (দস্যুতা), লয়েড লিস্টে ৬ ধাপ এগিয়ে ৬৪ হতে ৫৮ তে উন্নীত হওয়া, পরীক্ষমূলকভাবে ভারতের কলকাতা বন্দর হতে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য ট্রানজিট (পণ্য পরিবহন) চালু। সর্বোপরি ২০২০ সালে বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মূল্যায়নে পরিকল্পনা কমিশন চট্টগ্রাম বন্দরের নেতৃত্ব ও ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছে এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরকে অনূকরণীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে মন্তব্য করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের এসকল অর্জনের ভাগিদার বন্দরের সকল অংশীজনসহ সকল সরকারী ও বেসরকারী সংস্থা এবং সকল প্রতিষ্ঠান। সকলের সহায়তার বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষ কতৃজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছে।
বন্দর ব্যবহারকারী সকল স্টেক হোল্ডারের আন্তরিক সহযোগিতার কারণে এবং চবক কর্তৃক গৃহীত নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে করোনার ২য় ঢেউ চলাকালীন বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। বর্তমানে বন্দর অভ্যন্তরে কোন জাহাজ জট বা কন্টেনার জট নেই। আমদানিকারকগণ দ্রুততম সময়ে তাদের আমদানিকৃত পণ্য খালাসের মাধ্যমে বন্দরকে করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতেও বন্দরের কার্যক্রম আরও নির্বিঘœ রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারেন। ফলশ্রুতিতে বহির্বিশ্বে দেশের ও চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি উজ্বল হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই শুভলগ্নে চট্টগ্রাম বন্দরকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সর্বাত্মক সহায়তার জন্য বন্দরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, বার্থ অপারেটর, টার্মিনাল অপারেটর, শিপ হ্যান্ডিলিং অপারেটর, সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার, বিকডা, শিপিং এজেন্টগণ, শ্রমিকবৃন্দ, বন্দর ব্যবহারকারীগণ ও স্টেকহোল্ডারগণকে বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফ হতে চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দিত করেছেন।
Leave a Reply