পদ্মা সেতু, খুলনা-মোংলা রেললাইন ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকাজ শেষ হলে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা দিয়ে বাড়বে আমদানি-রপ্তানি। কিন্তু সেই চাপ সামাল দিতে এখনও পুরোপুরি প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারেনি বন্দরটি। নাব্য সংকটের কারণে বন্দরের ইনার বার ও জেটিতে আসতে পারছে না বেশি গভীরতার বিদেশি জাহাজ। জেটি থেকে রামপাল পর্যন্ত ড্রেজিংয়ের পর আবারও ব্যাপক হারে পলি পড়েছে। এ ছাড়া রয়েছে যন্ত্রপাতি ও জনবল সংকট।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছরের জুনে পদ্মা সেতু এবং খুলনা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চলতি বছরের শেষে চালু হওয়ার কথা। পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানীর সঙ্গে দূরত্ব কমবে, থাকবে না ফেরি পারাপারের ঝামেলা। এর ফলে রাজধানীর গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা এ বন্দরের দিকে ঝুঁকবেন বলে প্রত্যাশা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। রেললাইন নির্মিত হলে এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হবে ভারত। এ ছাড়া রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে এ বন্দরে বাড়বে বিদেশি জাহাজ আগমনের সংখ্যা। কিন্তু সম্ভাব্য এই চাপ মোকাবিলায় এখনও প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। নাব্য সংকটের কারণে মোংলা বন্দরের হাড়বাড়িয়া থেকে জেটি পর্যন্ত ইনার বার ও জেটিতে এখন ৭ মিটারের বেশি গভীরতার বিদেশি জাহাজ আসতে পারে না। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে সাড়ে ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারে।
এ ব্যাপারে মোংলা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিকারক এইচ এম দুলাল বলেন, বন্দরের জেটিতে ৭ মিটার গভীরতার কথা বলা হলেও ভাটার সময় গভীরতা থাকে ৬ থেকে সাড়ে ৬ মিটার। এ নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের জুনে ১৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরের জেটি থেকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার নদীপথ ড্রেজিং করা হয়। তখন নদীর গভীরতা সাড়ে ৩ মিটার থেকে বেড়ে সাড়ে ৫ মিটার হয়। কিন্তু পলি পড়ে পশুর নদের এই অংশে আবারও নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালের পর আর মেইনটেইন্যান্স ড্রেজিং না করায় জেটি থেকে রামপাল পর্যন্ত নাব্য আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। ধারাবাহিকভাবে মেইনটেইন্যান্স ড্রেজিং করা প্রয়োজন।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে একসঙ্গে ১৭টি জাহাজ ভিড়তে পারে। আর মোংলা বন্দরের জেটিতে পারে মাত্র পাঁচটি। নতুন দুটি জেটি নির্মাণকাজ চলছে ধীরগতিতে। বর্তমানে ৭২টি যন্ত্রপাতির মধ্যে মোবাইল ক্রেনসহ ১৫টি বিকল পড়ে রয়েছে। নেই নদীতে ভাসমান কোনো ক্রেন। মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী সমন্বয় কমিটির মহাসচিব মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বন্দরের জন্য ভাসমান ক্রেনসহ আধুনিক কিছু যন্ত্রপাতি কেনা প্রয়োজন।
বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি শেখ লিয়াকত হোসেন বলেন, এ বন্দরের কার্যক্রম গতিশীল করতে পুরোনো কিছু যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করে নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন করা প্রয়োজন।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বন্দরের দুই হাজার ৮০০ পদের মধ্যে এক হাজার ৭০০টি শূন্য। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা জানান, ৭১২ কোটি টাকা ব্যয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে আউটার বার থেকে হাড়বাড়িয়া পর্যন্ত ড্রেজিংয়ের পর এখন সাড়ে ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ বন্দরের পশুর চ্যানেলে আসতে পারে। ৭৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে গত ১৩ মার্চ বন্দরের হাড়বাড়িয়া থেকে জেটি পর্যন্ত ইনার বারে ২৩ কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজিং শুরু হয়েছে, যা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হবে। তখন বন্দরের জেটিতেও সাড়ে ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ আসতে পারবে। তিনি জানান, চার হাজার টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের কাজ আগামী ডিসেম্বরে শেষ হবে। ক্রেন ও ফর্কলিফটসহ ৭৫টি নতুন যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। এসব যন্ত্রপাতি এলে হ্যান্ডলিং কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। পদ্মা সেতু চালুর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যমান সংকট অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা যাবে। সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হবে নাব্য ধরে রাখার জন্য মেইনটেইন্যান্স ড্রেজিং করা।
Leave a Reply