বাজেটে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বিশেষ গুরুত্ব
গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ খাতে ৭২ হাজার ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। আগের বাজেটে বরাদ্দ প্রস্তাব ছিল ৬৪ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে বরাদ্দ করা হয় ৬০ হাজার ১১০ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে আধুনিক ও নিরাপদ যোগাযোগ অবকাঠামো গুরুত্বপূর্ণ। সে লক্ষ্য পূরণে সড়কপথ, সেতু, রেলপথ, নৌপথ ও আকাশপথে ধারাবাহিক ও সমন্বিত বিনিয়োগের মাধ্যমে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরিতে নিরলস কাজ করছে সরকার।
সড়ক পরিবহন খাতে ৩২ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয়ে যাবে চার হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ টাকা যাবে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য খরচে। বাকি ২৮ হাজার ৪২ কোটি টাকা উন্নয়ন প্রকল্প অর্থাৎ সড়ক, মেট্রোরেল, সেতু নির্মাণে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। আগের দুই বছরে উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ২৪ হাজার ৮২৫ কোটি এবং ২০ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেন, গত ১২ বছরে সড়কের উন্নয়নে ৩৩১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে ৪৫২টি। ৪৫৩ কিলোমিটার মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীনে ২৬টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে।
সেতু বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৮২০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। সাত কোটি টাকা পরিচালন ব্যয় বাদে বাকিটা খরচ হবে উন্নয়ন প্রকল্পে। সেতু বিভাগের বরাদ্দের বড় অংশই যাবে পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণে।
রেলে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১৭ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা। গত বাজেটে বরাদ্দের প্রস্তাব ছিল ১৬ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমে হয় ১৫ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। রেলে বাজেটের ২২ শতাংশের বেশি অর্থাৎ তিন হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা যাবে ট্রেন পরিচালনা ও বেতন-ভাতায়। ১৩ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ’ ও ‘দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ’, যমুনা নদীর ওপর ‘বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পে যাবে উন্নয়ন বরাদ্দের বড় অংশ।
নৌপরিবহন খাতে পাঁচ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা, বিমান পরিবহনে চার হাজার ৩২ কোটি টাকা এবং টেলিযোগাযোগে দুই হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিমান খাতের বরাদ্দের অংশ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় হবে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকার যোগাযোগ খাতকে গুরুত্ব দিলেও মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ধীর ও অস্বচ্ছ। বিপুল বিনিয়োগের পরও সড়কের উন্নয়নের গতি ধীর। উন্নয়ন প্রকল্পের বেশিরভাগ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় ব্যয় বাড়ছে। ভুল পরিকল্পনার কারণে প্রকল্পের সুফল মিলছে না। রেলও একই সমস্যায় জর্জরিত। গত ১২ বছরে রেলে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হলেও সংস্থাটি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বিনিয়োগের টাকা দূরে থাক, রেলে পরিচালন ব্যয়ই উঠে আসছে না। বছর বছর লোকসান বাড়ছেই।
Leave a Reply