রিকন্ডিশন্ড বা ব্যবহৃত গাড়ি আমদানিতে কোনো সুখবর মিলল না প্রস্তাবিত বাজেটে। কয়েক বছর ধরে এই ধরনের গাড়ির ব্যবসায় দুর্দিন যাচ্ছিল, কভিড মহামারির পর সেই গাড়ির ব্যবসা প্রায় লাটে উঠেছিল। এখন বাজেটেও নতুন কোনো সুখবর না থাকায় এই ব্যবসা নিয়ে অনিশ্চয়তা আরো চরম আকার ধারণ করল। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী হাইব্রিড গাড়ি আমদানিকে উৎসাহিত করেছেন, তা-ও উচ্চ শ্রেণির গাড়ি। সাধারণ বা বহুল জনপ্রিয় হাইব্রিড গাড়িতে কোনো সুযোগ দেননি। ফলে একজন ক্রেতার কম দামে জাপানি গাড়ি কেনার সুযোগ দিন দিন আরো কমল। তবে দেশে তৈরি ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ গাড়ি তৈরিতে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে সরকার পুরনো গাড়ির বদলে পরিবেশবান্ধব এবং দেশে তৈরি গাড়ির দিকেই মনোযোগ দিচ্ছে।
রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারক স্টার অটোমোবাইলসের কর্ণধার মাহবুবুল হক চৌধুরী বাবর বলেন, ‘বাজেটে পরিবেশবান্ধব গাড়ি আমদানিতে জোর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী; এটা প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রীত গাড়ি হচ্ছে ১৮০০ সিসির নিচের সেডান কার। অথচ সেই গাড়ির ক্ষেত্রে কোনো সুবিধা নেই। একই সঙ্গে করোনাকালীন অনেক জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত হাইয়েস মাইক্রো আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়নি। প্রয়োজনীয়, জনপ্রিয় ও বেশি বিক্রি হয় সেসব গাড়িতে বাজেটে বেশি পরিমাণ সম্পূরক শুল্ক সুবিধা থাকলে বিষয়টি প্রশংসিত হতো।’

বাজেটের প্রস্তাবিত শুল্কহার পাস হলে হাইব্রিড এবং সাধারণ দুই ধরনের মাইক্রোবাস কিনতে গ্রাহকের কম খরচ হবে। কারণ এই ধরনের গাড়িতে সম্পূরক শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু দেশের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজারে সবচেয়ে বিক্রীত ১৮০০ সিসির নিচের গাড়ি আমদানিতে সম্পূরক শুল্কহারে হেরফের হয়নি। ফলে এসব গাড়ি আগের দামেই কিনতে হবে ক্রেতাকে। ১৬০০ সিসির একটি টয়োটা এক্সিও হাইব্রিড গাড়ি কিনতে এখন খরচ হচ্ছে ১৮ লাখ টাকার মতো। কিন্তু সিসি কমিয়ে শুল্ক কমানো গেলে সেটি ১২-১৩ লাখ টাকার মধ্যে আনলে ক্রেতারা সুফল ভোগ করত।
প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী এখন থেকে একটি ১৮০০ সিসির মাইক্রোবাস কিনতে ক্রেতাকে আগের চেয়ে তিন-চার লাখ টাকা শুল্ক কম দিতে হবে। সে হিসাবে এই ধরনের গাড়ির দাম কমতে পারে। যদিও সেটি নির্ভর করছে গাড়ি ব্যবসায়ীদের ওপর।

বাজেটে হাইব্রিড গাড়ি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক কমানোর প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু সেগুলো ১৮০০ সিসি থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত। মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রেও ১৮০০ থেকে ২০০০ সিসির ওপরে গাড়ির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু ১৮০০ সিসির ওপরের মাইক্রোবাস সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নেই। আর ১৮০০ সিসির ওপরে কার-জিপের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক কমানোর প্রস্তাব এসেছে। সেগুলোও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নেই। ফলে উচ্চবিত্ত বা বিশেষ শ্রেণির ক্রেতারা এই সুবিধা পাচ্ছে। একই সঙ্গে গণপরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত ১২-১৪ সিটের হাইয়েস মাইক্রোবাস আমদানিতেও কোনো শুল্ক কর কমানো হয়নি। ফলে সেগুলোর দামের হেরফের হবে না। মোটাদাগে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ক্ষেত্রে নতুন কিছু মেলেনি বাজেটে।

এইচএনএস অটোমোবাইলসের কর্ণধার শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘হাইব্রিড গাড়ি ১০০০ থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির ক্রেতা সবচেয়ে বেশি; কিন্তু সেটি বাড়িয়ে ১৮০০ থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত করা হয়েছে। আমরা প্রস্তাব করেছিলাম ১০০০ থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত একটি স্ল্যাব থাকুক; কিন্তু বাজটে প্রতিফলন না থাকায় এর সুফল ভোক্তারা পাবে না।’ রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডার প্রাক-বাজেট আলোচনায় বেশ কিছু প্রস্তাব করেছিল। এর মধ্যে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির সঙ্গে রিকন্ডিশন্ড বা পুরনো গাড়ি আমদানিতে স্পেসিফিক ডিউটি বা সুনির্দিষ্ট শুল্ক নির্ধারণ করা, অবচয় হার পুনর্নির্ধারণ, সিসি স্ল্যাব ও সম্পূরক শুল্কের হার পুনর্বিন্যাস অন্যতম। এর কোনোটিই পূরণ হয়নি বাজেটে। একই সঙ্গে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির সংজ্ঞা নির্ধারণ, অবচয় প্রদানের উদ্দেশ্যে গাড়ির বয়স গণনা পদ্ধতি সংশোধন, বেশিসংখ্যক যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার, পাবলিক ট্রান্সপোর্টের এবং পিকআপ, ডাম্প ট্রাক, ফায়ার ফাইটিং ভেহিক্যালসহ অন্যান্য বিশেষায়িত মোটরযানের আমদানি শুল্ক কমানো অন্যতম। এর মধ্যে শুধু মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রে কিছু শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। আর ডাম্প ট্রাকের ক্ষেত্রে শুল্ক সুবিধা কমানো হয়েছে।
Leave a Reply