1. paribahanjagot@gmail.com : pjeditor :
  2. jadusoftbd@gmail.com : webadmin :
শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:১৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
র‌য়্যাল এনফিল্ডের ৩৫০ সিসির নতুন ৪ বাইকের যত ফিচার ঝালকাঠি থেকে ১১ রুটে বাস চলাচল বন্ধ বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ১০ দেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি হলেন স্টার লাইনের হাজী আলাউদ্দিন তরুণরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নামুক আবার পেট্রোনাস লুব্রিক্যান্টস বিক্রি করবে মেঘনা পেট্রোলিয়াম অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশে ভারতীয় সব ভিসা সেন্টার বন্ধ মন্ত্রী এমপিদের দেশত্যাগের হিড়িক : নিরাপদ আশ্রয়ে পালাচ্ছেন অনেকেই বাস ড্রাইভার নিকোলাস মাদুরো আবারও ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট ইউএস-বাংলার দশম বর্ষপূর্তি : ২৪ এয়ারক্রাফট দিয়ে দেশে বিদেশে ২০ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা

বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবস এবং বাংলাদেশের হাইড্রোগ্রাফি সক্ষমতা

মোঃ মিনারুল হক
  • আপডেট : রবিবার, ২০ জুন, ২০২১

প্রতি বছর ২১শে জুন আন্তর্জাতিক হাইড্রোগ্রাফিক সংস্থা (আইএইচও) প্রতিষ্ঠার দিনটি ‘বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। এ বছর বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- “হাইড্রোগ্রাফিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একশত বছর”। হাইড্রোগ্রাফিক সংস্থাসমূহ, সংশ্লিষ্ট শিল্পকারখানাসমূহ এবং বিশেষজ্ঞগণের সহযোগিতা ও অক্লান্ত পরিশ্রম সমুদ্রকে আরো গভীরভাবে জানার সুযোগ করে দিয়েছে। এ বছরের প্রতিপাদ্যটি এসবেরই অর্জন থেকে নির্ধারিত। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার সময় সংস্থাটির নাম ছিল আন্তর্জাতিক হাইড্রোগ্রাফিক ব্যুরো (আইএইচবি)। বর্তমান নামটি ১৯৭০ সালে সদস্য দেশগুলো কর্তৃক এক অধিবেশনের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়।
এ বছর বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবসটির ভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে। কেননা চলতি বছরে সংস্থাটি শতবর্ষে পদার্পণ করছে। বিশ্বজুড়ে সকল সদস্য দেশ, সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার শততম বার্ষিকী উদযাপন করছে। আইএইচও একটি আন্তর্জাতিক পরামর্শমূলক সংস্থা। সকল হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ এবং নটিক্যাল চার্টসমূহের তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সংস্থাটি জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত। উনিশ শতকের শেষের দিকে বিশ্বজুড়ে হাইড্রোগ্রাফার এবং সমুদ্রবিজ্ঞানীগণ হাইড্রোগ্রাফিক যাবতীয় কার্যাবলী একই মান ও পদ্ধতিতে সম্পন্নের জন্য একটি স্থায়ী কমিশন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন। বেশ কিছু উদ্যোগের পর একটি স্থায়ী কাঠামো গঠন করা হয় এবং ১৮টি দেশ নিয়ে মোনাকোতে এর কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে সংস্থাটির সদস্য সংখ্যা ৯৪। তৎকালীন মোনাকোর প্রিন্স অ্যালবার্ট-১ যিনি একজন সমুদ্রবিজ্ঞানী ছিলেন, তারই প্রস্তাবে মোনাকোতে সংস্থাটির প্রধান দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
আইএইচও আরো কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন আইএমও, আইওসি, আইএএলএ, আইসিএ সহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে থাকে। গত ২ জুলাই ২০০১ সালে বাংলাদেশ আইএইচও এর ৭০তম সদস্য নির্বাচিত হয়। বাংলাদেশের সমুদ্র জলসীমার হাইড্রোগ্রাফি কর্মকান্ড বাংলাদেশ নৌবাহিনী সম্পন্ন করে থাকে।
হাইড্রোগ্রাফি হলো সেই বিজ্ঞান যা সমুদ্র, সমুদ্র তলদেশ এবং তৎসংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলের ভৌত বৈশিষ্ট্যাবলী পরিমাপ করে। তবে এটি শুধুমাত্র নটিক্যাল চার্ট এবং প্রকাশনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি সমুদ্র ও সমুদ্র বিজ্ঞানের সকল শাখা-প্রশাখার সাথে জড়িত। সামুদ্রিক সম্পদের ব্যবহার, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা, সমুদ্রসীমা নির্ধারণ, সামুদ্রিক পরিকল্পনা, সুনামি ও জলোচ্ছ্বাস মডেলিং, ঊভখ্যস£ঁ এলাকার ব্যবস্থাপনা, সামুদ্রিক পর্যটন এবং সমুদ্র প্রতিরক্ষা ইত্যাদি সকল বিষয়ে হাইড্রোগ্রাফি বিশেষভাবে জড়িত। ফলে এর যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
হাইড্রোগ্রাফিক পরিসেবাগুলো প্রদান করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা বিদ্যমান। সোলাস অধ্যায়-৫ এর বিধি ৯ অনুয়ায়ী সকল সোলাস কনভেনশন চুক্তিকারী দেশকে জাহাজের নিরাপদ নেভিগেশনের জন্য আবশ্যিকভাবে হাইড্রোগ্রাফিক পরিসেবাসমূহ প্রদান করতে হয়।
সমুদ্র জরিপ আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর কর্মকান্ড যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। তাই আধুনিক প্রযুক্তি উপযুক্তভাবে ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য, সহযোগিতা এবং সমন্বয়ের কোন বিকল্প নাই। বাংলাদেশ নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক হাইড্রোগ্রাফিক সংস্থাগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। বলা বাহুল্য যে, বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে হাইড্রোগ্রাফি সার্ভিসের আধুনিকায়নের যাত্রা সূচনা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে, ফরাসি সরকারের সহযোগিতায়। আধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এই সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল যা দ্বিতীয় ধাপে ২০০১ সালে সম্পন্ন হয়। ফরাসি সরকারের প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভিস ডিজিটাল জরিপ শুরু করে। চট্রগ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাইড্রোগ্রাফিক স্কুলটি ২০০৫ সাল থেকে ক্যাটাগরি “বি” কোর্স পরিচালনার জন্য “ইন্টারন্যাশনাল বোর্ড অব স্ট্যান্ডার্স এন্ড কমপিটেন্স” (আইবিএসসি) দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যা হাইড্রোগ্রাফির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ প্রদান করে। অদ্যাবধি ৬৯ জন প্রশিক্ষণার্থী এই প্রতিষ্ঠান থেকে ক্যাটাগরি “বি” কোর্স সম্পন্নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সনদ লাভ করেছেন। আইএইচও সদস্য রাষ্ট্রসমূহের ১৬ জন বিদেশী প্রশিক্ষণার্থী এবং দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ১৬ জন হাইড্রোগ্রাফার সাফল্যের সাথে কোর্সটি সম্পন্ন করেছেন।
২০১০ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং যুক্তরাজ্য হাইড্রোগ্রাফি অফিস (ইউকেএইচও) এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সমঝোতা চুক্তির আওতায় ইউকেএইচও আমাদের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলের আন্তর্জাতিক সিরিজের পেপার চার্ট বিতরণ করছে যা দেশ বিদেশের সকল জাহাজে নিরাপদ নেভিগেশনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ৯টি আন্তর্জাতিক সিরিজ পেপার চার্ট এবং ১১টি ইলেকট্রনিক নেভিগেশনাল চার্টসহ সমুদ্র অঞ্চলের সর্বমোট ৬৩টি নেভিগেশনাল চার্ট প্রকাশে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছে।
সরকার সমুদ্র জরিপের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে অর্পণ করেছে। বিআইডব্লিউটিএ অভ্যন্তরীণ জলসীমায় জরিপের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং দেশের বিভিন্ন সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষসমূহ তাদের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় জরিপের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। বাংলাদেশের অন্তর্গত সমুদ্র সীমার জরিপ কার্য বাংলাদেশ নৌবাহিনী ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছে এবং প্রতি বছর নিরাপদ নেভিগেশনের স্বার্থে হালনাগাদ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিআইডব্লিউটিএ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে নিরাপদ নেভিগেশনের জন্য চার্ট প্রণয়ন করছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম, মংলা এবং পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের আধুনিক জরিপ সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষিত জনবল সমন্বিত জরিপ বিভাগ রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষসমূহ বন্দর সীমানাতে নিরাপদ নেভিগেশন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চার্ট প্রণয়ন ছাড়াও অন্যান্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে আসছে। সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সকল হাইড্রোগ্রাফি এবং সমুদ্র বিষয়ক কর্মকান্ড সমন্বয়ের জন্য ২০০১ সালে “ন্যাশনাল হাইড্রোগ্রাফিক কমিটি” (এনএইচসি) গঠন করে। কমিটিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং সংস্থার সদস্য রয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সহকারী নৌপ্রধান (অপারেশা›স) এই কমিটির সভাপতি। এনএইচসি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে এবং দেশের সমুদ্র সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছে।
বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের শতকরা ৯৪ ভাগ পণ্য বঙ্গোপসাগরের মধ্য দিয়ে পরিবহন করা হয়। সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে খনিজ, কৃষি, মৎস্য, পরিবেশ ও শিল্প ক্ষেত্রের উন্নয়ন এবং পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ তথ্য-উপাত্ত একান্ত— প্রয়োজন। সুনীল অর্থনীতির (য‘¤ ইকোনমি) সম্ভাবনাসমূহ পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হাইড্রোগ্রাফি অত্যন্ত জোরালো ভূমিকা রাখছে। নিরাপদ নেভিগেশন ছাড়াও সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষা ও দেশের প্রতিরক্ষা বিষয়েও হাইড্রোগ্রাফীর তথ্য-উপাত্ত বিশেষ অবদান রাখে।
জাতিসংঘের এসডিজি এর লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হচ্ছে “টেকসই উন্নয়নের জন্য মহাসাগর, সাগর এবং সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই ব্যবহার”। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য সমুদ্রের জরিপ তথ্য-উপাত্ত অপরিহার্য। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত “ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০” এর বাস্তবায়নেও হাইড্রোগ্রাফিক তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন হবে। উপকূলীয় অবকাঠামো স্থাপন, স্থাপনাসমূহের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ, সমুদ্র বন্দরসমূহের আধুনিকায়ন এবং সম্প্রসারণের জন্য হাইড্রোগ্রাফি তথ্য-উপাত্তের কোন বিকল্প নেই। এছাড়াও সুনীল অর্থনীতির (য‘¤ ইকোনমি) পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য জরিপ তথ্য-উপাত্ত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জলসীমা নিরাপদ রাখার জন্য বাংলাদেশের হাইড্রোগ্রাফি সংস্থাসমূহ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মায়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের পর সমুদ্র সম্পদের অনুসন্ধান ও ব্যবহার সম্পর্কিত কার্যক্রম ভবিষ্যতে আরো জোরদার হবে। ফলে সমুদ্র জরিপের প্রয়োজনীয়তাও আগামী দিনগুলোতে আরো বেশি অনুভূত হবে। সুতরাং, সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং আমাদের সমুদ্রকে নিরাপদ ও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে দেশের হাইড্রোগ্রাফিক সংস্থাসমূহ এবং সমুদ্র ব্যবহারকারী সকল সংস্থাসমূহের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয় বাড়াতে হবে। ‘বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবস’ আমাদের নীতিনির্ধারক এবং সমুদ্র গবেষণা তথা সমুদ্র ব্যবহারকারীদের মধ্যে একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।
মো ঃ মিনারুল হক, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ মেরিটাইম রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিমরাড) এর মহাপরিচালক।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
© 2020, All rights reserved By www.paribahanjagot.com
Developed By: JADU SOFT