1. paribahanjagot@gmail.com : pjeditor :
  2. jadusoftbd@gmail.com : webadmin :
শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:০৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
র‌য়্যাল এনফিল্ডের ৩৫০ সিসির নতুন ৪ বাইকের যত ফিচার ঝালকাঠি থেকে ১১ রুটে বাস চলাচল বন্ধ বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ১০ দেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি হলেন স্টার লাইনের হাজী আলাউদ্দিন তরুণরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নামুক আবার পেট্রোনাস লুব্রিক্যান্টস বিক্রি করবে মেঘনা পেট্রোলিয়াম অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশে ভারতীয় সব ভিসা সেন্টার বন্ধ মন্ত্রী এমপিদের দেশত্যাগের হিড়িক : নিরাপদ আশ্রয়ে পালাচ্ছেন অনেকেই বাস ড্রাইভার নিকোলাস মাদুরো আবারও ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট ইউএস-বাংলার দশম বর্ষপূর্তি : ২৪ এয়ারক্রাফট দিয়ে দেশে বিদেশে ২০ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা

মোটরসাইকেলে মৃত্যুফাঁদ : জুনে ১৪২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৫১ জন

হাসান ইকবাল
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১

সড়ক মহাসড়কে যানবাহন হিসাবে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে মোটরসাইকেল। দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত জুন মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩২৭টি। নিহত ৩৯৮ জন এবং আহত ৪২৩ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৫২, শিশু ৩৩। ১৪২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৫১ জন, যা মোট নিহতের ৩৭.৯৩ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৩.৪২ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৯৪ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২৩.৬১ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারি নিহত হয়েছেন ৬৭ জন, অর্থাৎ ১৬.৮৩ শতাংশ। এই সময়ে ২টি নৌ-দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত এবং ১ জন আহত হয়েছে। ১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত হয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। গতকাল বুধবার এটি প্রকাশ করা হয়েছে।
যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র : দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৫১ জন (৩৭.৯৩%), বাস যাত্রী ১৪ জন (৩.৫১%), ট্রাক-পিকআপ-ট্রলি যাত্রী ৩৮ জন (৯.৫৪%), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-এ্যাম্বুলেন্স যাত্রী ২০ জন (৫.০২%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (সিএনজি-ইজিবাইক-অটোরিকশা-টেম্পু-লেগুনা) ৫৭ জন (১৪.৩২%), নসিমন-মাহিন্দ্র-চান্দের গাড়ি-টমটম যাত্রী ৯ জন (২.২৬%) এবং প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান-বাইসাইকেল ও ঠ্যালাগাড়ি আরোহী ১৫ জন (৩.৭৬%) নিহত হয়েছে।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন : রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১১৫টি (৩৫.১৬%) জাতীয় মহাসড়কে, ১২৭টি (৩৮.৮৩%) আঞ্চলিক সড়কে, ৫১টি (১৫.৫৯%) গ্রামীণ সড়কে, ৩০টি (৯.১৭%) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৪টি (১.২২%) সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরণ : দুর্ঘটনাসমূহের ৭৮টি (২৩.৮৫%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১১৩টি (৩৪.৫৫%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৯৭টি (২৯.৬৬%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৩৫টি (১০.৭০%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৪টি (১.২২%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন : দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ২৪.৯০ শতাংশ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ৩.০৬ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-এ্যাম্বুলেন্স-জীপ ৬.১৩ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১২.০৬ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৭.২০ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-টেম্পু) ১৯.৩৪ শতাংশ, নসিমন-মাহিন্দ্র-চান্দের গাড়ি-টমটম ২.৪৯ শতাংশ, প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান-বাইসাইকেল-ঠ্যালাগাড়ি ৩.৪৪ শতাংশ এবং অন্যান্য (তেলবাহী ট্যাংকার-ড্রাম ট্রাক-ডাম্পার-হ্যান্ড ট্রলি) ১.৩৪ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা : দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৫২২টি। (ট্রাক ৮৭, বাস ৬৩, কাভার্ডভ্যান ১২, পিকআপ ৩১, ট্রলি ৮, ট্রাক্টর ৬, লরি ২, মাইক্রোবাস ১৬, প্রাইভেটকার ১২, এ্যাম্বুলেন্স ৩, জীপ ১, তেলবাহী ট্যাঙ্কার ১, ড্রাম ট্রাক ৩, ডাম্পার ২, হ্যান্ড ট্রলি ১, মোটরসাইকেল ১৪২, থ্রি-হুইলার ১০১(ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-টেম্পু), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ১৩ (নসিমন-মাহিন্দ্র-চান্দের গাড়ি-টমটম) এবং প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান-বাইসাইকেল-ঠ্যালাগাড়ি ১৮টি।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ : সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৩.৯৭%, সকালে ২৫.০৭%, দুপুরে ২২.৯৩%, বিকালে ১৯.৫৭%, সন্ধ্যায় ৭.০৩% এবং রাতে ২১.৪০%।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান : দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৬.২৯%, প্রাণহানি ২৫.৮৭%, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১১.৬২%, প্রাণহানি ১৩.৫৬%, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ২০.৭৯%, প্রাণহানি ২১.৩৫%, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ৮.২৫%, প্রাণহানি ৭.৫৩%, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৮.৮৬%, প্রাণহানি ৮.৫৪%, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.০৩%, প্রাণহানি ৫.৫২%, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.৬৪%, প্রাণহানি ৫.৭৭% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৯.৪৮%, প্রাণহানি ১১.৮০% ঘটেছে।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৮৬টি দুর্ঘটনায় নিহত ১০৩ জন। সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। ২৩টি দুর্ঘটনায় নিহত ২২ জন। একক জেলা হিসেবে ময়মনসিংহ জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৯টি দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত। সবচেয়ে কম নড়াইল জেলায়। ২টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কেউ হতাহত হয়নি।
আহত ও নিহতদের পেশাগত পরিচয় : গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ৩ জন, আনসার ব্যাটালিয়ান সদস্য ২ জন, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ১ জন, স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক ৮ জন, আইনজীবী ২ জন, আমিরাত প্রবাসী ১ জন, স্থানীয় সাংবাদিক ২ জন, ব্যাংক কর্মকর্তা ৩ জন, বিআরডিবি’র কর্মকর্তা ১ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ৪ জন, ঔষধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১১ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ১৮ জন, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিক ১ জন, সেনা নিবাসের কর্মচারী ১ জন, রেল কর্মচারী ১ জন, পোশাক শ্রমিক ৬ জন, জুতা কারখানার শ্রমিক ২ জন, কৃষি শ্রমিক ৪ জন, মটর শ্রমিক ১ জন, নির্মাণ শ্রমিক ৩ জন, ইটভাটার শ্রমিক ৫ জন, মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধি ২ জন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ৯ জন এবং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন ছাত্রসহ দেশের বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠানের ৫৩ জন শিার্থী নিহত হয়েছে।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ :
১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন;
২. বেপরোয়া গতি;
৩. চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা;
৪. বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট না থাকা;
৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল;
৬. তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো;
৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা;
৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা;
৯. বিআরটিএ’র সমতার ঘাটতি;
১০ গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
সুপারিশসমূহ :
১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে;
২. চালকের বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করতে হবে;
৩. বিআরটিএ’র সমতা বৃদ্ধি করতে হবে;
৪. পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে;
৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করতে হবে;
৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে;
৭. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে;
৮. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে;
৯. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে;
১০.”সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
গত মে মাসে ৪৪১টি দুর্ঘটনায় ৫৬২ জন নিহত হয়েছিল। গড়ে প্রতিদিন নিহত হয়েছিল ১৮.১২ জন। জুন মাসে প্রতিদিন নিহত হয়েছে ১৩.২৬ জন। জুন মাসের অর্ধেক সময়জুড়ে এলাকাভিত্তিক লকডাউনে বিভিন্ন জেলা শহরে যানবাহন বন্ধ ছিল এবং ২৮ জুন থেকে সর্বাত্মক লকডাউনে সারা দেশে গণপরিবহন বন্ধ ছিল। তার পরেও দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির এই উদ্বেগজনক চিত্র। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মম মানুষ নিহত হয়েছেন ৩২৯ জন, অর্থাৎ ৮২.৬৬ শতাংশ।
ট্রাক এবং মোটরসাইকেল সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চরম হুমকি হয়ে উঠেছে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে তারা নিজেরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এবং অন্যান্য যানবাহনকে আক্রান্ত করছে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় সড়ক দুর্ঘটনারোধে একটি সমন্বিত টেকসই উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
© 2020, All rights reserved By www.paribahanjagot.com
Developed By: JADU SOFT