পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু অব্যবস্থাজনিত সমস্যার কারণে বর্তমানে পোশাক শিল্পের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। বিজিএমইএ সভাপতি গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালের সঙ্গে তার বিমান বন্দরস্থ কার্যালয়ে সাক্ষাকালে এ কথা বলেন। এ সময় বিজিএমইএ সভাপতির সাথে সহসভাপতি মো. শহিদউল্লাহ আজিম, পরিচালক তানভির আহমেদ ও সাবেক পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন উপস্থিত ছিলেন। সভায় বাংলাদেশ বিমানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগনও উপস্থিত ছিলেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের মাধ্যমে সংগঠিত আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের সিংহভাগই রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের পণ্য চালানের মাধ্যমে হয়ে থাকে। সমুদ্র পথের তুলনায় আকাশ পথে রপ্তানি ব্যয়বহূল হলেও লিড টাইম মোকাবেলার জন্য উদ্যোক্তাদেরকে আকাশ পথে ক্রেতাদের কাছে পণ্য পাঠাতে হয়।
তিনি বলেন, কার্গো ভিলেজে পশ্চিমা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ইডিএস মেশিন না থাকা, বিমান বন্দর থেকে পণ্য নামানোর পর পণ্যগুলো খোলা আকাশের নিচে রাখা, ক্যানোপি’তে আমদানিকৃত মাল বিশৃঙ্খলভাবে রাখা ও পণ্যের কোন মার্কিং না থাকা, ডকুমেন্ট অনুযায়ী মাল খুঁজে না পাওয়া প্রভৃতি কারণে উদ্যোক্তারা সমস্যা মোকাবেলা করছেন। পোশাক শিল্পের আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম সাবলীল রাখার জন্য তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং সেবার মান বৃদ্ধি করার ওপর গুরুতারোপ করেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, রপ্তানি পণ্য তাৎক্ষনিক স্ক্যানিং করার জন্য বিমান বন্দরে পর্যাপ্ত সংখ্যক স্থাপিত ইডিএস মেশিন নাই। যে ইডিএস মেশিনগুলো বর্তমানে আছে, সেগুলোও প্রায়ই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নষ্ট থাকে। ফলে, রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অথচ ইডিএস স্থাপন বিষয়ে পশ্চিমা ক্রেতারা দীর্ঘদিন ধরে তাগিদ দিয়ে আসছেন। তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, ইডিএস মেশিনের সংখ্যা বৃদ্ধি না করা হলে অদূর ভবিষ্যতে ক্রেতারা কোলকাতা বা দুবাই থেকে পণ্য স্ক্যানিং করার শর্ত জুড়ে দিতে পারেন, যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করবে। একই সাথে আমাদের অর্ডারগুলোও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তিনি ইডিএস মেশিনগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও ইডিএস মেশিনের সংখ্যা বৃদ্ধি করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি যা শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। তিনি করোনাকালীন সময়ের সঙ্কট মোকাবেলায় কার্গো হ্যান্ডেলিং চার্জ কমানোর উদ্যোগ গ্রহনের জন্যও বিমান কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।
বিজিএমইএ সভাপতি কার্গো হ্যান্ডলিং প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করার জন্য অধিক জনবল নিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন যে, অধিক সংখ্যক গ্রাউন্ড হেলপার ও স্টাফ অফিসার নিয়োগের বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, কার্গো ভিলেজে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেক সময় পণ্য বিমান থেকে নামিয়ে খোলা জায়গায় রাখার ফলে বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়। এছাড়াও যথাস্থানে মার্কিং করে না রাখার কারনে পণ্য সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, পণ্য চালানগুলো খোলা আকাশের নিচে না রেখে বিজিএমইএ’র গুদাম বা ক্যানোপি’তে যথাসম্ভব রাখা প্রয়োজন। সকল গুদাম ও ক্যানোপি’তে সারিবদ্ধভাবে মাল রাখার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যাতে করে অধিক পরিমাণ পণ্য সংরক্ষণ করা যায়।
ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন যে, তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়ছে, সেজন্য কার্গো হ্যান্ডেলিং এ কিছু সমস্যা হচ্ছে। তবে বিমান কার্গো হ্যান্ডেলিং এ সেবার মান বৃদ্ধির জন্য সাম্প্রতিক সময়ে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন যে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে থার্ড টার্মিনাল সম্প্রসারণের কাজ চলছে, যা আগামী দুই বছরের মধ্যে সমাপ্ত হবে। এটি সমাপ্ত হলে কার্গো হ্যান্ডেলিং ব্যবস্থপনা আরও উন্নত হবে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য কার্গো হ্যান্ডেলিং এ সেবার মান বৃদ্ধির বিষয়ে আরও কিছু পরিকল্পনা তাদের রয়েছে।
Leave a Reply