চট্টগ্রাম বন্দরের সব আমদানিপণ্য বেসরকারি ডিপোতে পাঠানোর সিদ্ধান্তে নতুন করে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এখন চার দিনের আগে কোনোভাবেই পণ্য খালাস করা যাচ্ছে না, যা আগে বন্দরর জেটি থেকে এক দিনেই করা সম্ভব ছিল। ফলে আমদানিকারকদের পড়তে হয়েছে নতুন ভোগান্তিতে। পণ্য খালাসে তাদের খরচ ও সময় বেড়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের জট পরিস্থিতি সামাল দিতে হাজারো ধরনের আমদানিপণ্যের সবগুলো বন্দর জেটির পরিবর্তে বেসরকারি ডিপোতে (আইসিডি) নিয়ে শুল্কায়ন ও খালাস করার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় গত ২৬ জুলাই থেকে। তবে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, খালাসের আগে সব আমদানিপণ্যের কনটেইনার কাস্টমস এবং শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তার যৌথ তদারকিকে শতভাগ কায়িক পরীক্ষার পর শুল্কায়ন করতে হবে। ডিপোতে পাঠানোর আগে সব কনটেইনারের স্ক্র্যানিংও করতে হবে শতভাগ।
চট্টগ্রামে বেসরকারি আইসিডি আছে ১৯টি। এর কোনোটি শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে, যেখানে ব্যক্তিগত গাড়িতেও যাতায়াতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।
এসব কনটেইনারের পণ্য শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে দেখার জন্য শুল্ক গোয়েন্দার ৮ জনকে আইসিডিতে পদায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এবং ২ জন রাজস্ব কর্মকর্তা। এই ৮ জনকে দুই ভাগ করে ১৯টি ডিপোতে পালাক্রমে পণ্য খালাসের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁরা নির্দিষ্ট সময় অন্তর এক একটি ডিপোতে যাচ্ছেন। ফলে অন্য ডিপোতে তাঁদের অনুপস্থিতির কারণে পণ্য খালাস কার্যত বন্ধই থাকছে।
অবশ্য আগে থেকেই প্রত্যেক আইসিডিতে এক বা একাধিক কাস্টমস কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন। কিন্তু দুই দপ্তরের কর্মকর্তা একসঙ্গে না হলে পণ্যের কায়িক পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। শুল্ক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খালাস এবং শুল্কায়নের আগে একটি কনটেইনারের আমদানিপণ্য শতভাগ কায়িক পরীক্ষার জন্য দরকার দেড় থেকে তিন ঘণ্টা সময়। ফলে এই ৮ জনের পক্ষে কোনোভাবেই প্রতিদিন আটটি আইসিডির বেশিতে যাওয়া সম্ভব নয়।
বিষয়টি স্বীকার করেন শুল্ক কর্মকর্তারা। আইসিডিতে পদায়ন হওয়া কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের রাজস্ব কর্মকর্তা শোয়েব রায়হান বলেন, ‘এভাবে দৌড়ঝাঁপ করে কাজ করা সত্যি অসম্ভব। কী আর করব, চাকরি বলে দিনরাত কষ্টের মধ্যেও সরকারি দায়িত্ব পালন করছি।’ এক আমদানিকারক জানান, ডিপোতে জনবলের অভাবে এক দিনের পণ্য খালাসে চার দিন লাগছে। আমাদের খরচ ও মাশুল বেড়ে যাচ্ছে। এসব বাড়তি মাশুল কে দেবে।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ফাল্গুনী এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইসমাইল খান বলেন, ‘আমরা ডিপোতে গিয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষায় থাকি, তাঁরা কখন আসবেন? মাঝে মাঝে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের খুঁজেও পাওয়া যায় না।’
জটিলতা নিরসনে চিটাগাং কাস্টম ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইতিমধ্যে বৈঠক করেছেন। তিনি বলেন, এত কম শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা দিয়ে বিপুল আমদানিপণ্য খালাস কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাঁর মতে, সংকট নিরসনে প্রতিটি ডিপোতে অন্তত ১ জন করে ১৯ জন কর্মকর্তা পদায়নের দরকার। নইলে কনটেইনার জট নিরসনের পরিবর্তে উল্টো আরও বড় ধরনের জট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে বিষয়টি স্বীকার করছেন না কনটেইনার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের সচিব রুহুল আমিন শিকদার। তাঁর দাবি, পণ্য খালাসে কোনো জটিলতা তৈরি হয়নি। নিয়মমাফিকই সব হচ্ছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম শুল্ক গোয়েন্দার লোকবল সংকটের কারণে প্রাইভেট আইসিডিতে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে এটা নিরসনের চেষ্টা হচ্ছে বলে জানান তিনি। সূত্র : আজকের পত্রিকা।
Leave a Reply