শামীমা বেগম রাজধানীর কাফরুলের বাসিন্দা। বছরখানেক আগে তাঁর পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। নবায়ন করতে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু ই-পাসপোর্ট করতে পারছেন না। পাসপোর্ট অফিস থেকে জানানো হয়েছে, তাঁর মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের নামের সঙ্গে ই-পাসপোর্টের মিল নেই। এ কারণে ই-পাসপোর্ট করা যাবে না। এরপর তিনি নাম সংশোধন করতে সাত মাস ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল বুধবার আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসের তৃতীয় তলায় একটি বেঞ্চে হতাশ মনে বসে থাকতে দেখা যায় তাঁকে।
গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে মানুষের ঢল। তথ্যকেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রতিটি কাউন্টারের সামনে মানুষের লম্বা লাইন। বিভিন্ন বিষয় জানতে চাওয়ায় উত্তর দিতে দায়িত্বরত কর্মকর্তারাও হিমশিম খাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন করে ওই অফিসে এসেছে এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের নামের সঙ্গে কোনো অমিল নেই তারা দ্রুত কাজ শেষ করে চলে যেতে পারছে। করোনার কারণে দীর্ঘদিন পাসপোর্ট অফিস বন্ধ থাকায় এমন ভিড় জমেছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
আসমা আক্তার নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী মিরপুর থেকে এসেছিলেন। কয়েক মাস আগে ই-পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন তিনি। ছবি তোলার জন্য যে তারিখ দেওয়া হয়েছিল, ওই সময় কঠোর লকডাউন থাকায় আসতে পারেননি তিনি। এরপর নতুন করে তিনি আর কোনো এসএমএসও পাননি। তাই জানতে এসেছেন, কবে ফের ছবি তোলার তারিখ পাবেন। কিন্তু যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই ভীষণ ভিড়। এ পরিস্থিতিতে তাঁর অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
দোতলার যে কাউন্টার থেকে পাসপোর্ট বই সরবরাহ করা হয় সেখানেও দেখা গেছে অপেক্ষা করছে শতাধিক মানুষ। অনেকক্ষণ পর পর পাসপোর্ট বিতরণের জন্য ডাক পড়ছে। যে পাসপোর্ট পাচ্ছে সে খুশি মনে পাসপোর্ট উল্টেপাল্টে দেখে নিয়ে যাচ্ছে।
উল্টো চিত্র দেখা গেছে তৃতীয় তলায় এমআরপি বিতরণ কাউন্টারে। দুপুর দেড়টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা গেল ফাঁকা। দায়িত্বরত একজন জানালেন, এখন আর এমআরপি দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে সেখানে ভিড় নেই। জানতে চাইলে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী বলেন, দেশে ই-পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। আর বিদেশে দেওয়া হচ্ছে এমআরপি।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দেখা গেল, খাইরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি অনুনয়-বিনয় করে অন্য একজনকে পাসপোর্ট করে দেওয়ার জন্য বলছেন। জানতে চাইলে তিনি জানান, তাঁর বাড়ি ঢাকার দোহারে। তিনি পেশায় বাসচালক। তাঁর পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে। তিনি মালয়েশিয়া যেতে চান। এ কারণে পাসপোর্ট দরকার। পাসপোর্ট বই পেতে তিনি ঘুরছেন। এক দালাল বলেছেন, তাঁকে পাসপোর্ট বইয়ের ব্যবস্থা করে দেবেন। এ জন্য তিনি তাঁকে ৩০০ টাকা দিয়েছেন। তিন ঘণ্টা ধরে ঘুরছেন, কিন্তু ওই লোক কোনো কাজ করছেন না। এ কারণেই তিনি অনুনয়-বিনয় করছেন। এ সময় ওই দালালের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে দ্রুত এলাকা ছেড়ে অন্যত্র সরে পড়েন।
বিষয়টি নিয়ে পাসপোর্টের ডিজি বলেন, ছবি দেখাতে পারলে ভালো হতো। তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। এগুলো পাসপোর্ট অফিসের বাইরের বিষয়। পাসপোর্টের নাম সংশোধন করতে আসা শামীমা বেগম জানান, তিনি পাঁচ বছর আগে এমআরপি করেছেন। ওই সময়ে পাসপোর্টে তাঁর নাম ছিল শামীমা খাতুন। এখন তিনি শামীমা বেগম করতে চান। এই নাম না হলে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সমস্যা সৃষ্টি করবে। এ কারণে তিনি সাত মাস ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসে ঘুরেও কারো কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, কেউ যদি নাম পরিবর্তন করতে আসেন, তাঁর নাম তো সহজেই পরিবর্তন করে দেওয়া যাবে না। যাচাই-বাছাইয়ের ব্যাপার আছে। পাসপোর্টে একটি মানুষের নাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি একবার যে নামে পাসপোর্ট করেছেন, পরে এসে তিনি নাম বদল করতে চাইলে সেটা তো সমস্যা হবেই। তিনি যে অপরাধী না, তার নিশ্চয়তা কী? অপরাধী হয়ে যদি তিনি নাম বদল করে আইনি সুযোগ নিতে চান, তার জবাব কে দেবে? ছোটখাটো ভুল ঠিক করে দেওয়া হয়।
চাঁদপুর থেকে পাসপোর্ট করতে আসেন ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান। তিনি জানান, সাড়ে ১০ হাজার টাকা ফি দিয়েছেন সুপার এক্সপ্রেস পাসপোর্টের জন্য। ৩০০ টাকা দিয়েছেন এক দোকানিকে পাসপোর্টের ফরম ফিলাপ করে দিতে। এরপর তিনি সোনালী ব্যাংকে যান পাসপোর্ট ফি জমা দিতে। সেখানে গিয়ে দেখেন লম্বা লাইন। এ সময় তিনি এক দালালের দেখা পান। তাঁকে ৫০০ টাকা দিয়ে সাড়ে ১০ হাজার টাকা ফি জমা দিয়েছেন।
Leave a Reply