বাঁশখালী উপজেলার সরল ইউনিয়নের জালিয়াখালী ও শীলকূপ মনকিচর ইউনিয়নের মাঝামাঝি জালিয়াখালী জলকদর খালের ওপর রয়েছে একটি সাঁকো। সাঁকোটি দুই ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক বাসিন্দার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। কয়েক বছর ধরে জোয়ার-ভাটার পানির তোড়ে সেটি নড়বড়ে হয়ে ওঠে। পারাপারে জন্য লোকজন উঠলেই দুলতে থাকে। ফলে এ দুই এলাকার সাধারণ জনগণসহ নারী, শিশু, বৃদ্ধা, স্টু্কল-কলেজ ও মাদ্রাসাপড়ূয়া শিক্ষার্থীদের জন্য সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যে কোনো মুহূর্তে মারাত্মক দুর্ঘটনাসহ প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এ সাঁকো দিয়ে চলাচলকারী স্থানীয়রা জানান, বিগত দিনে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর সময় সাঁকোটি ভেঙে গেলে অনেক দিন ধরে যাতায়াত বন্ধ হয়ে হয়ে যায় এ দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। পরে স্থানীয়রা সংস্কার করেন সাঁকোটি। তবে এই সংস্কার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। জোয়ারের পানির ধাক্কায় দিন দিন সেটি আবারো নড়বড়ে হয়ে উঠেছে। বর্ষা মৌসুমে নৌকায় এবং শুকনো মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়েই পারাপার হন ওই এলাকার সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এটি পারাপার হতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হন অনেকে।
এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিন জেলেদের কাছ থেকে সামুদ্রিক মাছ কেনার জন্য সরল, জলদীসহ বিভিন্ন এলাকার শত শত ব্যবসায়ীকে শীলকূপ মনকিচর ও গন্ডামারা যেতে হয়। পাশাপাশি সরল এলাকার বহু শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য শীলকূপ মনকিচরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়। সাঁকোটির জীর্ণদশার কারণে স্থানীয় চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের যাওয়া-আসা খুবই কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে।
এই সাঁকো দিয়ে পারাপার হওয়া উপজেলার সরল ইউনিয়নের জালিয়াখালী গ্রামের ৬০ ঘরপাড়া, খালাইচ্ছ্যার পাড়া, মিনজিরীতলা এবং শীলকূপ ইউনিয়নের মনকিচর গ্রাম ও গন্ডামারা ইউনিয়নে যাতায়াতকারী অর্ধলক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, সেতু নির্মাণ না হওয়ায় এলাকাবাসী নিজেরাই বাঁশের সাঁকো বানিয়েছেন। গ্রামগুলোতে যানবাহন প্রবেশ করতে না পারায় কৃষক ও শুঁটকি ব্যবসায়ীরা তাদের আবাদি শস্য হাটবাজারে সঠিক সময়ে নিতে পারছেন না। অনেকে বাড়িতে বসে আবাদ করা শস্য বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে করে ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বেশিরভাগ কৃষক। এ ছাড়া কোনো মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে বাঁশের মাচায় করে সাঁকো পার হয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসতে হয়। এতে সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে না পেরে রোগীদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। অন্যদিকে, এই সাঁকোটিতে দু-তিনজনের বেশি উঠলেই বিপজ্জনকভাবে দুলতে থাকে। খালের দুই পাড়ের বাসিন্দারা অনেক কষ্টে চলাচল করছেন সাঁকোটি দিয়ে।
বাঁশখালী উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, এলাকার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে এই সাঁকোটি ভেঙে নতুন করে সেতু নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগির এর সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
Leave a Reply