বীমা সময়ের চাহিদা। ব্যক্তিকে পরিবার, কর্মী ও অন্য সব চিন্তার সঙ্গে সম্পদের চিন্তাও করতে হয়। কারণ এগুলো এক অর্থে রাষ্ট্রীয় সম্পদ। আমরা যারা নন-লাইফ বীমা পেশায় জড়িত তারা জানি ‘থার্ড পার্টি’ বীমায় বীমাগ্রহীতার নিজের গাড়ির ক্ষতিপূরণ ছাড়াও যাত্রী, ড্রাইভার, হেলপার এবং থার্ড পার্টির গাড়ি, রাস্তায় চলাচলকারী পথিক ও থার্ড পার্টির সম্পদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ক্ষতিপূরণের হার খুবই নগণ্য। এই হারকে কতটা যুক্তিসংগত করা যায় তা বিবেচনায় নিতে হবে।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা আছে, অতিরিক্ত প্রিমিয়াম দিয়ে ক্ষতিপূরণের হার আরও ৯ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যায়। ক) কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর জন্য পলিসির ক্ষতিপূরণ অঙ্ক + আরও ৯ গুণ = ২,০০,০০০/- (সর্বোচ্চ দুই লাখ) টাকা পর্যন্ত পাওয়া যেতে পারে। খ) কোনো সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে পলিসির ক্ষতিপূরণ অঙ্ক + আরও ৯ গুণ = ৫,০০,০০০/- (সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ) টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ আছে। প্রতি যাত্রীকে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হলেও ৯ গুণ অতিরিক্ত প্রিমিয়াম আদায় করতে হবে।
আমরা জানি, থার্ড পার্টি বীমার পয়সা দিয়ে বীমা কোম্পানির শাখাগুলোর মাসিক অফিস খরচ অনায়াসেই চলে যায়। থার্ড পার্টি বীমা বন্ধের কারণে শুধু যে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়, সরকারও হারাচ্ছে ভ্যাট ও বীমা স্ট্যাম্প বাবদ অকল্পনীয় রাজস্ব। আমাদের দেশে বীমার অবস্থা এমন যে, বাধ্য না হলে কেউ বীমা করতে চায় না। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ‘থার্ড পার্টি বীমা বাধ্যতামূলক নয় এবং কোনো গাড়ির থার্ড পার্টির বীমা করা না থাকলে মোটরযান মালিকের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী কোনো মামলা দেওয়ার সুযোগ নেই।’ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বীমা বিশেষজ্ঞ নয়। তাই তাদের এ ধরনের আইন প্রণয়ন ও নির্দেশনা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাজে প্রত্যক্ষভাবে বাধা প্রদানের শামিল।
থার্ড পার্টি বীমা অবশ্যই চালু করতে হবে, তা যে নামেই হোক বা যে ফরম্যাটেই হোক না কেন
সরকারের রাজস্ব আয় এবং জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগ কাজ করছে। তারা কোনোভাবেই সরকারের আয়ের উৎস ও সরকারি সিদ্ধান্তের বিপরীতে কাজ করতে পারে না। কিন্তু সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর ৬০ ধারা অনুযায়ী মোটরযানের কোনো ক্ষতি হলে সড়ক পরিবহন আইনের ৫৩-এর অধীনে মালিকরা তাদের অনুদানে গঠিত আর্থিক সহায়তা তহবিল থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন না। এ কথার মানে এই নয় যে, বীমা করা যাবে না। সরকার আইনের মাধ্যমে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ২০১০ গঠন করেছে। সরকারের আইন বাস্তবায়নে পুলিশ বাহিনী রয়েছে। তাদের উপেক্ষা করে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিনা ভেবে দেখার বিষয়।
আমরা সাধারণত নতুন বা রিকন্ডিশন গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের পর পাঁচ বছরের জন্য কমপ্রিনসিভ বা সব ধরনের ক্ষতির বীমা করে থাকি। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। যদি প্রিমিয়াম কিছুটা কমানো যায় তা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের রেটিং কমিটি বিবেচনায় নেবে। থার্ড পার্টি বীমা অবশ্য চালু করতে হবে, তা যে নামেই হোক বা যে ফরম্যাটেই হোক না কেন, পাঁচ বছর মেয়াদ অতিক্রান্তের পর পরবর্তী পাঁচ বছর একটি নির্ধারিত মূল্য ধরে গাড়ির বীমার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে কোনো ব্যক্তি নিজের গাড়ি, থার্ড পার্টির গাড়ি, প্যাসেঞ্জার ও রাস্তায় চলাচলকারী পথিক সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সার্কুলার অনুযায়ী ৯ গুণ প্রিমিয়াম বাড়িয়ে ৯ গুণ ক্ষতিপূরণ প্রদান, যা ১০ বছর পর গাড়ির লাম্পসাম মূল্য ধরে করা যেতে পারে। এই প্রক্রিয়ার ফলে ব্যক্তি ও সম্পদ নিরাপদ থাকবে, বীমা কোম্পানিগুলোর আয় বাড়বে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।
লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কো. লি:।
Leave a Reply