♦ ২০২১ সালের ৯ মাসে দস্যুতা ঘটেনি
♦ ২০২০ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ৩ দস্যুতা
♦ ধারাবাহিকতা চান ব্যবসায়ীরা
চট্টগ্রাম বন্দর জলসীমায় পণ্য নিয়ে আসা বাণিজ্যিক জাহাজে চলতি বছরের ৯ মাস পর্যন্ত কোনো দস্যুতা বা পাইরেসির ঘটনা ঘটেনি। এটি চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী, বিশেষ করে দেশি-বিদেশি জাহাজ পরিচালনাকারীদের জন্য খুশির খবর। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে যেখানে তিনটি দস্যুতার ঘটনা ঘটেছিল, সেখানে চলতি ২০২১ সালের ৯ মাসে কোনো দস্যুতা ঘটেনি।
বাণিজ্যিক জাহাজে সংঘটিত সশস্ত্র ডাকাতি, দস্যুতা ও চুরি প্রতিরোধে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘রিক্যাপ’ জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসের এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গত সপ্তাহে। প্রতিবেদনে ভারতে দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে চারটি, ২০২০ সালে ছিল আটটি। ইন্দোনেশিয়ায় ১০টি, মালয়েশিয়ায় একটি, ফিলিপাইনে ১১টি, ভিয়েতনামে দুটি, দক্ষিণ চীন সাগরেও কোনো দস্যুতার ঘটনা ঘটেনি। তবে সবচেয়ে বেশি ২৭টি ঘটনা ঘটেছে সিঙ্গাপুর-মালাক্কা প্রণালিতে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলছেন, ‘নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের সমন্বিত-কার্যকরী কৌশল প্রয়োগের সুফল দস্যুতামুক্ত বন্দর জলসীমা। তবে এখানেই থেমে থাকলে, আত্মতৃপ্তিতে ভুগলে চলবে না। যেহেতু বন্দর জলসীমা এখন অনেক বেড়েছে, তাই বাড়তি জলসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিতে নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়িত হলে আগামী দিনেও এই সুফল ধরে রাখতে পারব।’
রিক্যাপ প্রতিবেদন মতে, ২০২১ সালের ৯ মাসে ৫২টি দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে। দস্যুতার ঘটনাকে গুরুত্ব অনুযায়ী চারটি শ্রেণিতে ভাগ করে গণনা করে রিক্যাপ। ৫২টি ঘটনার মধ্যে সাতটি ঘটনা ঘটেছে ক্যাটাগরি-২; ১৬টি ঘটনা ক্যাটাগরি-৩; ২৯টি ঘটনা ক্যাটাগরি-৪। তবে সবচেয়ে বিপজ্জনক ক্যাটাগরি-১-এ কোনো দস্যুতার ঘটনা ঘটেনি। ক্যাটাগরি-১-এ দস্যুতার ক্ষেত্রে সশস্ত্র হামলা হয়, যেখানে জাহাজে থাকা নাবিক হতাহতের ঘটনাও ঘটে।
বহির্নোঙরে দস্যুতা নিয়ন্ত্রণে অন্যতম ভূমিকা আছে কোস্ট গার্ড-নৌবাহিনীর। মূলত তাদের জাহাজ দিয়েই বন্দর জলসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
কোস্ট গার্ড পূর্ব জোনের স্টাফ অফিসার (অপা রেশনস) লে. কমান্ডার আজহার বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে একটি কৌশল প্রয়োগের কারণেই এই সফলতা এসেছে। সেটি হচ্ছে, বিদেশি জাহাজের ক্যাপ্টেন পাইরেসির অভিযোগ দিলেই আমরা গ্রহণ করি না। সরেজমিনে গিয়ে যাচাই করে প্রমাণ পাওয়ার পরই অভিযোগ আকারে রেকর্ড করা হচ্ছে। এর ফলে কেউ ভুয়া তথ্য দিয়ে পাইরেসির অভিযোগ করার সুযোগ থাকছে না।’
একই সঙ্গে বন্দর বাড়তি জলসীমার নিরাপত্তাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। কর্ণফুলীর ১৫ নম্বর ঘাটে কুইক রেসপন্স টিম রয়েছে, যেখান থেকে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে স্পিডবোট ও জাহাজ দিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। একই সঙ্গে বহির্নোঙরে অ্যান্টিপাইরেসি নিয়ে ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে একাধিক টিম। নিরাপত্তা বাড়ানোর কারণেও পাইরেসির ঘটনা শূন্যে নেমেছে।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, দেশের বহির্নোঙর ও জলসীমায় আসা জাহাজে চুরি-দস্যুতা-ডাকাতির ঘটনা বাড়লে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। পণ্য পরিবহনে বাড়তি জাহাজ ভাড়া আরোপ করে বিদেশি জাহাজ মালিক ও শিপিং লাইনগুলো। এতে বিপাকে পড়তে হয় দেশীয় আমদানি-রপ্তানিকারকদের। আর বাংলাদেশমুখী রুটে জাহাজ ভাড়া দিতে চান না বিদেশি জাহাজ মালিকরা। ১২ বছরের মধ্যে ২০১৯ সালেই শুধু স্বস্তিতে ছিলেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। ২০২০ সালেও তিনটি দস্যুতার ঘটনা ঘটেছিল। এবার ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দস্যুতামুক্ত আছে বন্দর জলসীমা।
উল্লেখ্য, গত বছরের শেষ দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা সাড়ে সাত নটিক্যাল মাইল থেকে বেড়ে ৫০ নটিক্যাল মাইলে উন্নীত হয়েছে। বহির্নোঙরে সাগরের সীমানা সীতাকুণ্ড থেকে বেড়ে মহেশখালীর মাতারবাড়ী, কুতুবদিয়া হয়ে সোনাদিয়া পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে পুরো জলসীমা চুরি-দস্যুতামুক্ত রাখা ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
জাহাজে দস্যুতার ঘটনা কমলে কী লাভ জানতে চাইলে শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলছেন, বিশ্ব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশ জলসীমায় জাহাজে যেসব ঘটনা ঘটত সেগুলো একেবারেই নগণ্য। বন্দর, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সমন্বিত প্রয়াসে এখন ছোট্ট চুরির ঘটনায়ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এতে নিরাপদ বন্দর হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল হবে সন্দেহ নেই। তবে এটিকে ধরে রাখারও কোনো বিকল্প নেই।
রিক্যাপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় বিগত ১২ বছরের মধ্যে ২০১৯ সালেই শুধু দস্যুতার ঘটনা শূন্যে নেমেছে। এর আগে ২০১০ সালে সর্বোচ্চ ২১টি, ২০১১ সালে ১৪টি, ২০১২ সালে ১২টি, ২০১৫ সালে ১০টি, ২০১৬ সালে একটি, ২০১৭ সালে ১১টি এবং ২০১৮ সালে ৯টি দস্যুতা-চুরির ঘটনা ঘটে। সূত্র
: কালের কণ্ঠ।
Leave a Reply