আমি উচ্চ আদালতে সুবিচার পেয়েছি
: এস. এম. আনোয়ার সাদাত
রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স এন্ড ডিলারস এসোসিয়েশন-বারভিডার নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেছে। গতকাল রবিবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ সংক্রান্ত আপিলের নিষ্পত্তি করে আদেশে বলেন, আসন্ন বারভিডা নির্বাচন স্থগিত করতে হবে ও পুনঃতফসিল করতে হবে। আগামী ৯ ডিসেম্বর বারভিডার নির্বাচন হওয়ার তারিখ নির্ধারিত ছিল। নির্বাচনে দুটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেলসহ তিনটি প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলিয়ে ২৫ পদের জন্য ৭৮জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতায় ছিলেন। ভোটার ছিলেন ৬শ’ ৭০জন। আপীল বিভাগের এই আদেশের ফলে নতুন করে নির্বাচনের তারিখ, ভোটার তালিকা সংশোধন ও প্রার্থীতা নির্ধারনের ব্যবস্থা করতে হবে।
এর আগে বারভিডার বর্তমান কমিটি কর্তৃক বাতিল সদস্য পদ পুনর্বহাল এবং নির্বাচনে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্তির জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বারভিডা’র ভাইস প্রেসিডেন্ট-১ এস. এম. আনোয়ার সাদাত এবং সদস্য দীনুল ইসলাম উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে ‘বারভিডা লেভি’র নামে চাঁদা আদায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছিলেন বারভিডা সদস্য দীনুল ইসলাম। পরে লেভি আদায় স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। আদায়কৃত সেই টাকা অবৈধ উল্লেখ করে তা সরকারি কোষাগারে ফেরতের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই প্রতিবাদের জের ধরে সদস্যপদ হারান দীনুল ইসলাম। একইসাথে সংগঠনের আর্থিক অনিয়ম এবং প্রধানমন্ত্রীর করোনা তহবিলের টাকার হিসাব চেয়ে অভিযাগকারী বারভিডা’র ভাইস প্রেসিডেন্ট-১ কে কে অটোমোবাইলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আনোয়ার সাদাতের সদস্যপদ বাতিল করে বর্তমান কমিটি। গতকালের আদেশে বলা হয়, যেহেতু রিট পিটিশনার এস. এম. আনোয়ার সাদাত এর বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ইত্যাদি সংক্রান্তে ডিটিও (পরিচালক-বাণিজ্য সংগঠন) কার্যালয়ে দরখাস্ত বিচারাধীন ফলে এবং উক্ত দরখাস্ত নিষ্পত্তি ব্যতিরেকে যদি বারভিডা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে এস. এম. আনোয়ার সাদাত এর প্রতি অন্যায়/পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হবে এবং সে বিবেচনায় আসন্ন বারভিডা নির্বাচন স্থগিত করতে হবে ও পুনঃতফসিল করতে হবে এবং আদালতের উক্ত আদেশ হস্তগত হওয়ার পরবর্তী ২ সপ্তাহের মধ্যে ডিটিও’কে এস. এম. আনোয়ার সাদাত এর ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখের আবেদন নিষ্পত্তি করতে আদেশ প্রদান করেন আদালত।
উল্লেখ্য, এর আগে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও বহিষ্কৃত দুই গাড়ি ব্যবসায়ীকে সদস্যপদ ফিরিয়ে দেয়নি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডা। উচ্চ আদালত এই সংক্রান্ত আদেশ দিয়েছেন গত ২৫ অক্টোবর। আদালতের আদেশের কপি বারভিডা নির্বাচনের আপিল বোর্ড লিখিতভাবে গ্রহণ করেছেন ২৬ অক্টোবর। কিন্তু দুই সদস্যকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করেই ৩১ অক্টোবর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে বারভিডা। অথচ তার আগের দিন ঠিকই দুই সদস্যের কাছ থেকে বক্তব্য শুনেছেন বারভিডা নির্বাচন আপিল বোর্ড।
আদালতের আদেশ না মানায় বিস্মিত দুই সদস্য ১ নভেম্বর বারভিডা আপিল বোর্ডকে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে আইনি নোটিশ দেন। অন্যথায় আদালত অবমাননার বিষয়টি নজরে আনা হবে বলে সতর্ক করে চিঠি দেন তারা। এ ব্যাপার বারভিডার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট-১ এস এম আনোয়ার সাদাত বলেন, আপিল বোর্ডের নিয়ম আদেশ মেনে আমি ৩০ অক্টোবর সশরীরে হাজির হয়ে আমার বক্তব্য ডুকমেন্টসহ উপস্থাপন করি। আপিল বোর্ড তখন আমার কথা শুনে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা দেখার পরামর্শ দেন। ৩১ অক্টোবর চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় দেখি আমাদের নাম নেই। তিনি বলেন, উচ্চ আদালত রায়ে স্পষ্টভাবে বলেছেন, আমাকে বহিষ্কার করা যৌক্তিক হয়নি; এই কারণে সদস্যপদ ফিরিয়ে দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তারা আদালতের রায় পর্যন্ত মানল না।
জানা গেছে, দুই গাড়ি ব্যবসায়ীর পৃথক মামলায় হাইকোর্ট গত ২৫ অক্টোবর এবং ২৬ অক্টোবর পৃথকভাবে এই রায় দেন। বারভিডা নেতা এস এম আনোয়ার সাদাতের মামলার রায় দেন হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিল। বারভিডার সদস্য দীনুল ইসলামের করা মামলায় রায় দেন বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম এবং এম. মোস্তাফিজুর রহমান।
উল্লেখ্য, রিকন্ডিশন্ড গাড়ি চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ছাড় করার আগে এক হাজার টাকা লেভি বা চাঁদা আদায় ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে শুরু করে গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডা। বারভিডার পক্ষে এই লেভি প্রথম আদায় শুরু করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ১০০ টাকা নিজেদের জন্য রেখে বাকি ৯০০ টাকা বারভিডা তহবিলে জমা করবে মোংলা বন্দর। কিন্তু বেসরকারি সংগঠনের চাঁদা সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আদায়ের আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন বারভিডার সদস্য দীনুল ইসলাম। এ নিয়ে তখন গাড়ি ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর পিছু হটে এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লেভি আদায় শুরু করা যায়নি। এই ধরনের অভিযোগ করায় ক্ষুদ্ধ হয়ে বারভিডা নেতৃবৃন্দ তার সদস্যপদ বাতিল করে দেয়।
অন্যদিকে বারভিডার ভাইস প্রেসিডেন্ট-১ এস এম আনোয়ার সাদাত জানান, করোনা পূর্ববর্তী পিকনিক, এজিএম এবং প্রধানমন্ত্রীর করোনা ত্রাণ তহবিলের জন্য সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছে বারভিডা। এই টাকা বারভিডার একাউন্টে জমা দেওয়া হয়নি। কমিটি এ সংক্রান্ত ১ কোটি ৮২ লাখ টাকার হিসাব দিচ্ছে না। আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিটিও (পরিচালক-বাণিজ্য সংগঠন) বরাবর আবেদন করেছিলাম বিষয়টি তদন্ত করতে। তারা অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে। বারভিডার বর্তমান কমিটি হাইকোর্টে মামলা করে এই তদন্ত স্থগিত করেছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ঘাপলা না থাকলে তদন্ত করতে সমস্যা কোথায়? এসব কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা আমাকে বহিষ্কার করেছে। আমি উচ্চ আদালতের কাছে সুবিচার পেয়েছি।
এদিকে বারভিডার ভাইস প্রেসিডেন্ট-১ এস এম আনোয়ার সাদাত গতকাল আপিল বিভাগের রায়ের পর পরই গাড়ি ব্যবসায়ী বারভিডা সদস্যদের প্রতি এক খোলা চিঠিতে তাঁর বিরুদ্ধে অন্যায় আচরণ এবং আদালতের আদেশ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। চিঠিতে তিনি বলেন, সম্মানিত বারভিডা সদস্যবৃন্দ, আসসালামু আলাইকুম, আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা অবশ্যই অবগত আছেন যে, আমি বারভিডার নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট-১ হওয়া সত্ত্বেও আমার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে বারভিডার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ কুচক্রী মহল আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূতভাবে আমাকে কথিত মতে বহিষ্কার করলে আমি তাদের সমস্ত অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করে ডিটিও মহোদয় বরাবর আইনের বিধান অনুযায়ী মামলা দায়ের করি।
পরবর্তীতে মহামান্য হাইকোর্ট হতে আমার বিরুদ্ধে আনীত কথিত বহিস্কারাদেশ স্থগিত করার পরেও বারভিডার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি জেনারেলের আজ্ঞাবহ ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন বোর্ড ও নির্বাচন আপীল বোর্ড আমাকে আসন্ন নির্বাচনে ভোটার না করায় এবং প্রার্থিতা না দেওয়ায় আমি আবার মহামান্য হাইকোর্ট এর দ্বারস্থ হই। মহামান্য হাইকোর্ট উভয় পক্ষের শুনানি অন্তে গত ২৫ নভেম্বর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আমাকে ভোটার করার, নমিনেশন ফরম দেওয়ার এবং ব্যালট নম্বর প্রদান করার জন্য রায় ও আদেশ প্রদান করেন। তদবিরুদ্ধে বারভিডার বর্তমান প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি জেনারেলে ও তাদের পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন আপীল বোর্ড একাকার হয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগে সিপি আপীল নম্বর ২৫৮৫/২১ ও সিএমপি আপীল নম্বর ৬৬২/২১ দায়ের করেন। অদ্য ৫ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ উক্ত আপীলদ্বয় নিষ্পত্তি করে আদেশ প্রদান করেন যে, যেহেতু রিট পিটিশনার এস. এম. আনোয়ার সাদাত এর বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ইত্যাদি সংক্রান্তে ডিটিও কার্যালয়ে দরখাস্ত বিচারাধীন ফলে এবং উক্ত দরখাস্ত নিষ্পত্তি ব্যতিরেকে যদি বারভিডা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে এস. এম. আনোয়ার সাদাত এর প্রতি অন্যায়/পক্ষপাতমূলক) আচরণ করা হবে এবং সে বিবেচনায় আসন্ন বারভিডা নির্বাচন স্থগিত করতে হবে ও পুনঃতফসিল করতে হবে এবং মহামান্য আদালতের উক্ত আদেশ হস্তগত হওয়ার পরবর্তী ২ সপ্তাহের মধ্যে ডিটিও’কে এস. এম. আনোয়ার সাদাত এর ৩০/০৯/২০২১ ইং তারিখের আবেদন নিষ্পত্তি করতে আদেশ প্রদান করেন।
ফলে বারভিডার বর্তমান প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি জেনারেলসহ কতিপয় দুষ্কৃতিকারী এবং বারভিডার পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন বোর্ড ও নির্বাচন আপীল বোর্ড এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের উত্তরোত্তর সফলতা আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম। ইনশাআল্লাহ আমি মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশের সই মুহুরী নকল প্রাপ্তির পর পুনঃ তফশিলতব্য বারভিডা নির্বাচনে প্রার্থিতা ও ব্যালট নম্বর নিয়ে আপনাদের কাছে হাজির হব। -আপনাদের দোয়া ও সমর্থন প্রত্যাশী, এস. এম. আনোয়ার সাদাত, ভাইস প্রেসিডেন্ট-১, বারভিডা।
Leave a Reply