দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রকৌশল সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। যার বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে রয়েছেন পেশাগত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশীদ খান। যিনি বর্তমান সরকারের ভিশন-২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্যে এলজিইডির মাধ্যমে আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে আধুনিক শহর ও গ্রাম উন্নয়নের মাধ্যমে নাগরিক সুবিধা প্রদানে সরকার ঘোষিত সকল কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
পাশাপাশি দারিদ্র্যবিমোচনের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেও এলজিইডির বিভিন্ন কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন তিনি। এরই মধ্যে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য বিগত তিন বছরে গ্রাম এলাকায় ১৬ হাজার ২০০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, ৩৫ হাজার ৯০০ কিলোমিটার সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ এবং এক লাখ ৮০০ মিটার ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ-পুনঃনির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করেছে এলজিইডি।
গ্রামীণ এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নের জন্যও ৫৫৫টি গ্রোথসেন্টার ও গ্রামীণ হাট-বাজার উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষাকল্পে ২৯৬টি ঘূর্ণিঝড় কিংবা বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রও নির্মাণ করেছে এলজিইডি।
যানবাহন ও পথচারী চলাচলের সুবিধার জন্য দুই হাজার ৫৪৮ কিলোমিটার রাস্তা ও ফুটপাত নির্মাণ-পুনঃনির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭৪০ কিলোমিটার ড্রেনও নির্মাণ করা হয়েছে।
২৯২টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, ১৭৯টি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ-সম্প্রসারণসহ অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যও বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ৭৭ হাজার ৩৪৮ জনকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে এলজিইডি।
অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন, ক্রমবর্ধিষ্ণু নগরে টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন, পূর্ত কাজের গুণগত মান উন্নয়ন, সকলপর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংহতকরণ চ্যালেঞ্জের বিপরীতেই প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশীদ খানের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় পল্লী ও শহর এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য টেকসই রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্ট, ড্রেন, ফুটপাত নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি নির্মাণের গুণগত মান উন্নয়নের কার্যক্রম চলমান প্রক্রিয়ারই অংশ এবং বিদ্যমান সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই উপযুক্ত ক্ষেত্রে বিসি সড়কের পরিবর্তে আরসিসি ও সিসি সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনাও বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে চলতি অর্থবছরে তিন হাজার ১০০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পাকাকরণ, আট হাজার কিলোমিটার পাকা সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, ১৮ হাজার মিটার ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, এক হাজার ৫০০ মিটার ব্রিজ-কালভার্ট রক্ষণাবেক্ষণ, ৪৫টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন ও ৪০টি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, ১২০টি হাট-বাজার-গ্রোথ সেন্টার উন্নয়ন ও ১১০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ-পুনর্বাসন প্রকল্পকেই সম্ভাব্য প্রধান অর্জন হিসেবে ধরে নিয়েই কাজ চলছে এলজিইডিতে।
উল্লেখ্য, ৬০-এর দশকে পল্লীপূর্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে কার্যক্রম শুরু করে সময়ের পরিক্রমায় বর্তমান এলজিইডির পরিধি বিস্তৃত হয়েছে ব্যাপকভাবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহরের সীমানায়ও চলমান রয়েছে এলজিইডির বিশাল কর্মযজ্ঞ।
পল্লী অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ এবং হাট-বাজার ও গ্রোথ সেন্টার উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে গতিশীল করতেও এলজিইডি যে অবদান রেখেছে তা আজ দৃশ্যমান। বর্তমানেও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পল্লী, নগর ও ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ অবকাঠামো উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশে কৃষি ও অকৃষি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্যবিমোচন একইসঙ্গে এলজিইডি স্থানীয় সরকারসমূহের পরিচালন ব্যবস্থার মান উন্নয়নের মাধ্যমে নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কারিগরি সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে। এসবের মধ্য দিয়েই উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশব্যাপী উন্নয়নের শক্ত ভিত নির্মাণ করেই চলেছে এলজিইডি।
এরই মধ্যে সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেরও সব সেক্টরে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে মহামারি করোনা ভাইরাস। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কমসূচিতে যে গতি আসে, মহামারি করোনার সেই বিরূপ প্রভাবের কারণে পরবর্তী চার মাসে সেই গতি কিছুটা মন্থর হয়ে পড়ে। তবুও করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রেখেছে এলজিইডি।
গত অর্থবছরে এলজিইডির অনুকূলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ছিলো ১৩ হাজার ২৭৮.৯৩ কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে সংশোধিত হয়ে বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৯৫৭.৫৫ কোটি টাকায়। বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসের অভিঘাত সত্ত্বেও এডিপি বাস্তবায়নে এলজিইডির অগ্রগতি অর্থ অবমুক্তির ভিত্তিতে ৯৪.১৪ শতাংশ, যা গড় জাতীয় অগ্রগতির চেয়ে বেশি।
২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন, সাত হাজার ৯৭৮.৩৮ মিটার সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ, ১২ হাজার ৫০১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের কক্ষ নির্মাণ, ১৪টি বিদ্যালয় কাম-ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, ৬৬০.৬৬ কিলোমিটার খাল খনন ও পুনর্খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এলজিইডির সার্বিক কার্যক্রম দারিদ্র্যবিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ দেশের আর্থ-সামাজিক অন্যান্য সূচকেও নতুনমাত্রা যুক্ত করছে। আর দারিদ্র্যবিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সড়ক, সেতু, কালভার্ট, বিদ্যালয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের মতো জনকল্যাণমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করেই বর্তমান এলজিইডি আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশীদ খানের দক্ষ ব্যবস্থাপনা এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Leave a Reply