ছয় মাসের জন্য রাতে বন্ধ হয়ে গেল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে। বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নতুন হাইস্পিড কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণকাজের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে রাতের ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে, যা প্রথম দফায় ১১ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় আবার ১১ মার্চ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ থাকবে। রাতের ফ্লাইটগুলোর বেশির ভাগই দিনে স্থানান্তর করায় স্থান স্বল্পতা ও লাগেজ হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষমতার ঘাটতিতে যাত্রীদের ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। যদিও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে।
বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, বন্ধের সময় বাংলাদেশে কোনো এয়ারলাইনসের জরুরি অবতরণের প্রয়োজন হলে তাকে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিদেশি এয়ারলাইনসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ক্ষমতা ও অন্যান্য সুবিধা বাড়াতে হবে। এই সুবিধা না বাড়ালে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে। এ ছাড়া ইমিগ্রেশন, স্বাস্থ্য ডেস্কে জনবল না বাড়ালে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান বলেন, ‘এখন দিনে ৭০টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ১০ হাজার যাত্রী শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে আসা-যাওয়া করছে। রাতের ফ্লাইটের বদলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো দিনে চালানো হবে। এতে যাত্রীর চাপ আরো বাড়বে। এই চাপ সামাল দিতে আমরা বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে বলেছি। আমাদের প্রস্তুতি আছে, সমস্যা হবে না আশা করি।’

শীতে অন্য বছর রাতে ঘন কুয়াশায় প্রায়ই রানওয়ের ‘ভিজিবিলিটি’ (দৃশ্যমানতা) ৫০ থেকে শূন্য মিটারে নেমে আসে। এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার কারণে কোনো ফ্লাইটকেই ওঠানামার অনুমতি দেওয়া হয় না। ফলে রাত ২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ফ্লাইট অপারেশন কার্যত বন্ধ থাকত। কিন্তু এবার রাতের ফ্লাইট পুরোপুরি বন্ধ থাকায় দিনে ফ্লাইটের চাপ বাড়বে। এতে বিদ্যমান অবকাঠামো দিয়ে বেশি ফ্লাইট পরিচালনায় ‘হিমশিম’ খেতে হবে। আর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষমতা না বাড়ালে যাত্রীদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হবে। কারণ এবার বন্ধ হচ্ছে রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত।
পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে কিছু কিছু এয়ারলাইনস তাদের নিয়মিত ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে। ঢাকায় সপ্তাহে ১২টি টার্কিশ এয়ারলাইনস আসা-যাওয়া করে। এই এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট ছিল ভোর ৬টায়। রাতের ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় ওই ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়ে এখন সপ্তাহে ১০টি ফ্লাইট চালাবে টার্কিশ এয়ারলাইনস।
টার্কিশ এয়ারলাইনস বাংলাদেশের সেলস অ্যান্ড ট্রাফিক অফিসার এজাজ কাদরি বলেন, ‘কিছু কানেক্টিং ফ্লাইটে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতে পারে। দিনে ফ্লাইট বেড়ে গেলে বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, অয়েল রিফুয়েলিং ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে হবে কি না, তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কা আছে। ডিসেম্বরে নতুন শিডিউলে ফ্লাইট শুরু হলে বোঝা যাবে।’
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম গতকাল বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে আট ঘণ্টা বিমানবন্দর বন্ধ থাকলে ওই সময়ের ফ্লাইটগুলো দিনে সমন্বয় করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হবে। এ জন্য বাড়তি চাপ নিতে আমাদের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’
শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বেশির ভাগ ফ্লাইট রাত ১টার মধ্যে ছেড়ে যায়। তাই রাত ১২টার পরিবর্তে রাত ১টা থেকে ফ্লাইট বন্ধ করলে যাত্রীদের ভোগান্তি কিছুটা কমবে। কারণ যাত্রীদের কানেক্টিং ফ্লাইট ধরতে হয়।
Leave a Reply