চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ইউরোপ রুটে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন করতে আরো তিনটি দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেশগুলো হচ্ছে, ইউরোপের দেশ পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া ও ডেনমার্ক। চট্টগ্রাম-ইতালি রুটে একটি কম্পানি সরাসরি কনটেইনার জাহাজ সার্ভিস চালুর পর এই তিনটি দেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম-ইউরোপ রুটে নিরবচ্ছিন্ন পণ্য পরিবহনের দুয়ার খুলছে। এত দিন চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপে পণ্য পরিবহন হতো ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হয়েই। এখন সরাসরি সার্ভিস চালু হওয়ায় সময় সাশ্রয়, অর্থ সাশ্রয় ও ভোগান্তি কমবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘এরই মধ্যে দুটি ইউরোপের দেশ পর্তুগাল ও স্লোভেনিয়া সরাসরি চট্টগ্রাম-ইউরোপ সার্ভিস চালুর আগ্রহ দেখিয়েছে। ডেনমার্ক রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে দেখা করে নতুন সার্ভিস চালুর আগ্রহের কথা বলবেন বলে জানিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ইউরোপ রুটে সরাসরি জাহাজ সার্ভিস চালুর মাধ্যমে রপ্তানি পণ্য ইউরোপে দ্রুত পরিবহনের নতুন একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সেটি বাস্তবায়ন করব। ইউরোপ রুটের যেকোনো জাহাজকে আমরা অগ্রাধিকার বার্থিং দিচ্ছি; একই সঙ্গে পছন্দসই জেটিতে বার্থিং দিতেও রাজি আছি।’
জানা গেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম-ইতালি রুটে ‘রিফ লাইন’ নামের একটি কম্পানি সরাসরি জাহাজ সার্ভিস চালু করে। দুটি জাহাজ দিয়ে তারা এই কনটেইনার সার্ভিস চালু করেছে। প্রথম জাহাজ ‘সুঙ্গা চিতা’ ৯৫০ একক রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। এর মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে প্রথম ইউরোপ সার্ভিস চালু হয়। রপ্তানিকারকরা ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছেন। এর মূল কারণ এই সার্ভিসে মাত্র ১৬ দিনে ইতালি পৌঁছানোর সুযোগ।
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ৫১ শতাংশই যায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। আর করোনা সময়কালে কনটেইনার সংকট এবং ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোতে যে জাহাজজট তৈরি হয়েছে তাতে পরিবহন ব্যয় বেড়েছে অনেক গুণ। সেই কঠিন পরিস্থিতিতে এই উদ্যোগে বিশাল বিপ্লব দেখছেন পোশাকশিল্প মালিকরা।
বিজিএম ইএর সাবেক প্রথম সহ সভাপতি এবং এশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলেন, ইউরোপের সরাসরি সার্ভিস অবশ্যই প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখবে। রিফ লাইন এমন একসময়ে সার্ভিসটি চালু করল যখন বিদেশি ক্রেতারা আমাদের পণ্যের দাম কম দিতে চাইছেন; কাঁচামালের দাম বেড়ে যাচ্ছে আবার কনটেইনার ভাড়া অনেক বেড়ে গেছে। এমন এক চ্যালেঞ্জিং সময়ে এই একাধিক সার্ভিস চালুর খবর আমাদের সত্যিই চোখ খুলে দিচ্ছে।
তিনি মনে করেন, ‘পর্তুগালে আমাদের খুব বেশি ক্রেতা নেই, কিন্তু পর্তুগালে পণ্য রাখার-উঠানামার খরচ অনেক কম। আর পর্তুগাল হয়ে ইউরোপের অনেক দেশে দ্রুত সড়কপথে পণ্য পরিবহনের সুযোগ মিলবে। আমরা চাই আরো অনেক শিপিং লাইন এগিয়ে আসুক। যাতে প্রতিযোগিতায় অন্য দেশের চেয়ে এগিয়ে যেতে পারি।’
এখন মাঝপথে কোনো বিরতি ছাড়াই অর্থাৎ ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে না থেমেই জাহাজটি ইতালি পৌঁছবে। ফলে পণ্য পরিবহন ভাড়া ৩৫ শতাংশ কমবে এবং সময় সাশ্রয় হবে কমপক্ষে ২৩ দিন।
Leave a Reply