বিশ্বের উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশের কক্সবাজারের সমুদ্র তলদেশে ফিশ অ্যাকোয়ারিয়াম গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেমন ফিশ অ্যাকোয়ারিয়াম আছে, আমাদেরও তেমন বানাতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সমুদ্রের তলদেশে গবেষণা বাড়াতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মোট ১২টি প্রকল্প অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের কাছে সভার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে ফিশ অ্যাকোয়ারিয়াম স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন। ৪৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণার জন্য একটি ইনস্টিটিউট নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, নদী খনন ও বাঁধ নির্মাণের মতো প্রকল্পে পানিসম্পদ বিভাগকে আরো দ্রুত কাজ করতে হবে। ধীরে কাজ করলে, চলমান কাজ শেষ করার আগেই পুরনো স্থাপনা নষ্ট হয়ে যায়।
১২ প্রকল্প অনুমোদন : কক্সবাজার এলাকার সমুদ্রের তলদেশে ফিশ অ্যাকোয়ারিয়ামসহ ১২ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ১৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে সাত হাজার ৯৯০ কোটি ১৪ লাখ টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে তিন হাজার ৪৩২ কোটি এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে ৫৯৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আরবান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সিটি গভর্ন্যান্স প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৩৯৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে এক হাজার ১৮২ কোটি ২৫ লাখ টাকা, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণ থেকে দুই হাজার ২১৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। চলতি বছর থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শিল্পকলা একাডেমি ও আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মিঠামইন, কিশোরগঞ্জ। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। সরকারি শিশু পরিবার এবং ছোটমনি নিবাস হোস্টেল নির্মাণ, পুনর্নিমাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ইরিগেশন ম্যানেজমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
তজুমদ্দিন ও লালমোহন উপজেলায় উপকূলীয় বাঁধ পুনর্বাসন, নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও তীর সংরক্ষণ প্রথম পর্যায় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। কিশোরগঞ্জ জেলার ১০টি উপজেলায় নদী তীর প্রতিরক্ষা কাজ, ওয়েভ প্রটেকশন এবং খাল পুনঃখনন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
ঝিনাইদহ জেলা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। বৃহত্তর পাবনা ও বগুড়া জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ঢাকার ডেসকো এলাকায় বৈদ্যুতিক অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ২৭২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এসেনশিয়াল ড্রাগস কম্পানি লিমিটেড ও মানিকগঞ্জ প্লান্ট স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯০৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের পাশাপাশি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমও সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
Leave a Reply