করোনা মহামারি শুরুর আগে বিভাগীয় নগরী রংপুর থেকে যাওয়া-আসা মিলিয়ে ১৮টি ট্রেন চলত। আর বর্তমান চলছে ১০টি। ফলে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় স্বল্প সংখ্যক যাত্রী ট্রেনে যাতায়াতের সুবিধা পাচ্ছেন। তাই স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ঈদ ঘিরে এবার বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। রংপুরবাসী দীর্ঘদিন ধরে রংপুরে দিবাকালীন ট্রেনের দাবি জানিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রংপুরের মানুষ।
রংপুর রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রংপুর রেলস্টেশন থেকে পূর্ণ যাত্রী নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রেল যায়। টিকিট পাওয়া নিয়ে প্রতিদিন যেন যুদ্ধ চলে রংপুরবাসীর। অনলাইন কিংবা স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে যেন নিমিষেই শেষ হয়ে যায় টিকিট। সেবা না বাড়লেও বেশ ভালো আয় হচ্ছে এ খাত থেকে। ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত গত ছয় মাসে রংপুর থেকে রেলে যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৬৬১ জন। এতে টিকিট বিক্রি বাবদ সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে তিন কোটি ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ৩৯১ টাকা।
আসন্ন ঈদে বাড়ি ও কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে ট্রেনযাত্রীদের বাড়তি চাপ পড়তে যাচ্ছে। এদিকে করোনা মহামারির শুরুতে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ বন্ধ হয়েছে সেভেন আপ ও এইট ডাউন, ডেমু আপ ও ডাউন এবং রমনা লোকাল আপ ও ডাউন। চলতি বছর ২ মার্চ বন্ধ হওয়া ট্রেন দুটি হচ্ছে কমিউটার ৬৩ ও কমিউটার ৬৪। অন্যদিকে ঢাকাগামী দুটি আন্তঃনগর ট্রেন কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ও রংপুর এক্সপ্রেসের টিকিট বরাদ্দ অল্প থাকায় রংপুরের যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। সেই সঙ্গে অনলাইনে টিকিট কাটা নিয়েও যাত্রীদের ভোগান্তি রয়েছে চরমে।
রংপুরের ট্রেন যাত্রী শরিফুল ইসলাম বলেন, রেল বিভাগের পক্ষ থেকে ট্রেনের শতকরা ৫০ ভাগ টিকিট অনলাইন ও শতকরা ৫০ ভাগ স্টেশনের কাউন্টারে বিক্রি করা হয়। স্বল্প পরিমাণ টিকিট থাকে বলে আমরা অনেক সময় টিকিট পাই না। অথচ রেলযাত্রার সুবিধা বেশি, বাসের তুলনায় ভাড়া কম। রেলের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হলে আমরা যাত্রীরা ঈদসহ অন্য সময় অনেক উপকৃত হবো।
ট্রেন যাত্রী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিভাগীয় নগরী হিসেবে রংপুরের জন্য রেল বিভাগ যে টিকিট বরাদ্দ রেখেছে তা দুঃখজনক। তিনি ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেনসহ বিদ্যমান ট্রেনের কোচ বাড়ানোর দাবি জানান।
মানবাধিকার সংগঠক অ্যাডভোকেট জোবাইদুল ইসলাম বলেন, ট্রেন যাত্রা নিরাপদ ও আরামদায়ক হওয়ায় মানুষ ট্রেনকেই ভ্রমণের জন্য প্রাধান্য দেন। রংপুরে যাত্রীদের সংখ্যা বাড়লেও কমেছে ট্রেনের সংখ্যা। কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে গণমানুষের পরিবহন খ্যাত রেলের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে। রেলে যাত্রা করলে মানুষের জানমালের ক্ষতি কম হয়। তাই নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে সরকারকে রেলের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। রংপুর বিভাগ, সিটি করপোরেশন হওয়ার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গমনেচ্ছুদের সংখ্যা বেড়েছে। এর পরিসংখ্যান তৈরি করে রংপুরে ট্রেন বরাদ্দ করতে হবে।
রংপুর রেলস্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী আশরাফুজ্জামান বলেন, ঢাকাগামী ট্রেনের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। অথচ রংপুর এক্সপ্রেসে আসন বরাদ্দ আছে ২২৯টি ও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে বরাদ্দ ১৫৪টি, যা যাত্রীদের তুলনায় নগণ্য।
রংপুর রেলের ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট শংকর গাঙ্গুলী বলেন, যাত্রীসেবা বাড়ানোর জন্য রংপুর রেলস্টেশনে বহুতল ভবন নির্মাণ, প্ল্যাটফর্ম বর্ধিতকরণ, অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধসহ নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে। করোনায় বন্ধ হওয়া ট্রেনগুলো ইঞ্জিন সংকট ও লোকমাস্টারের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ঈদ সামনে রেখে বিশাল যাত্রীর চাপ সামাল দিতে নতুন ট্রেন সংযোজন অথবা বিদ্যমান ট্রেনে কোচের সংখ্যা বাড়ানো জরুরি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর রংপুর রেলস্টেশনের উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, রংপুর রেলস্টেশনে ছয়তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ, প্ল্যাটফর্ম উন্নয়নসহ নানামুখী কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলে রেল যোগাযোগ সুবিধা বাড়াতে মিটার গেজের পাশাপাশি ব্রডগেজ লাইন নির্মাণ করে একসঙ্গে দুটি ট্রেনের চলাচল নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে নতুন রেলওয়ে সেতু নির্মাণ হলে উত্তরবঙ্গে রেল যোগাযোগ বাড়বে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী রেলের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হবে।
Leave a Reply